মস্তিষ্ক আমাদের দেহের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। মস্তিষ্কে রাখা থাকে আমাদের সমস্ত স্মৃতি। এই মস্তিষ্কই হচ্ছে আমাদের মন আর পরিচয়ের ধারক। মস্তিষ্ক আমাদের বুদ্ধিমত্তার উৎস।
মস্তিকের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন রকম চেষ্টা করেন। মায়েরা তাদের সন্তানদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য শিশুর খাদ্য তালিকায় রাখেন নানা খাবার। তবে শুধু খাবারই নয়, অন্য উপায়েও আপনি বাড়াতে পারেন মস্তিষ্কের ক্ষমতা। আসুন জেনে নেয়া যাক, কীভাবে সহজেই বাড়ানো যায় মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা-
১. মস্তিষ্কের ব্যায়াম- মস্তিষ্ককে যত বেশি কাজে লাগাবেন, মস্তিষ্ক তত বেশি কাজ করবে। মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা অসাধারণ। যত বেশি ব্যবহার করবেন, ততই এই ক্ষমতা বাড়তে থাকবে। প্রতিনিয়ত নতুন জিনিস নিয়ে ভাবতে থাকুন, পুরাতন স্মৃতি রোমন্থন করার চেষ্টা করুন। এতে আপনার মস্তিষ্ক বেশ সক্রিয় থাকবে।
২. পাজল বা ওয়ার্ড গেম- গবেষণায় দেখা যায় যাদের নিয়মিত শব্দজট, পাজল সমাধান, স্ক্রাবল বা সুডোকো মেলানোর অভ্যাস রয়েছে তাদের মস্তিষ্ক অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি কর্মক্ষম। যখন খেলা হয় তখন মস্তিস্কের সমস্ত স্নায়ুগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা কিনা স্মৃতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও তাদের স্মৃতিশক্তির দুর্বলতাজনিত সমস্যাও হয় না।
৩. বই পড়া- প্রায় সকল বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী থেকে জানা যায় যে তাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটি বিষয় কমন ছিল, তা হলো তারা সবাই প্রচুর বই পড়তেন। বই পড়া হচ্ছে মস্তিষ্কের সবচাইতে ভালো ব্যায়াম। বই পড়া মস্তিষ্কের স্নায়ু সচল রাখতে সহায়তা করে। এমনকি খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন যাই হোক না কেন, অবসর সময়ে তা পড়ে নিলে মস্তিষ্কের বেশ ভালো ব্যায়াম হয়। এতে করে স্মৃতিশক্তিও উন্নত হয়।
৪. নতুন ভাষা শেখা ও লেখা- নতুন একটি ভাষা শেখা এবং লেখার মাধ্যমে নিজের আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়ে তেমনই কমে যায় স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা। নতুন একটি ভাষা শেখা, বোঝা এবং প্রয়োগ করার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়ে যা স্মৃতিশক্তিকে দুর্বল হতে বাধা দেয়।
৫. নতুন কিছু করুন- একটি কাজের মধ্যে নিজেকে বেঁধে ফেলবেন না। প্রতিদিনকার কাজের পরিধি থেকে বের হয়ে নতুন কিছু করুন। নতুন কাজ মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করবে। এটি বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধির সাথে সাথে মস্তিষ্ককে আরো কর্মক্ষম করে তোলে। যেমন, আপনি হয়তো প্রতিদিন সকালে উঠে ডানহাত দিশে ব্রাশ করেন, ডানহাত দিয়ে বেশি মোবাইল ব্যবহার করেন। কাল থেকে তা না করে আপনি বামহাত ব্যবহার করতে পারেন, এটাও নতুন বা ভিন্ন কাজের অন্তর্ভুক্ত।
৬. নিয়মিত ব্যায়াম করুন- বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে ব্যায়াম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। আপনি যতক্ষণ ব্যায়াম করবেন, ততক্ষণ আপনার মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বেড়ে যায়, যা ব্রেনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৭. স্বাস্থ্যকর খাবার- আমাদের শরীরের যেমন জ্বালানির প্রয়োজন, তেমনি ব্রেনেরও জ্বালানির প্রয়োজন পড়ে। আমরা সবাই জানি ফল, শাকসবজি, মাছ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ফল, শাকসবজির সাথে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার, বাদাম, বিনস, পালং শাক, মিষ্টি কুমড়ার বীচি, সামুদ্রিক মাছ, রঙিন ফল, গ্রিন টি ইত্যাদি খাবার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৮. ক্যালকুলেটর ব্যবহার বন্ধ করুন- ছোটখাটো হিসাব করার জন্য ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা বন্ধ করুন। ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস বা ক্যালকুলেটরের উপর নির্ভরতা আমাদের মস্তিষ্ককে অলস করে দিচ্ছে। এটা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট করার জন্য দায়ী।
৯. পরিমিত ঘুম- প্রতিদিন পরিমিত ঘুম মস্তিষ্ক সক্ষম রাখার জন্য খুবই কার্যকরী। ঘুমের মধ্যে মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায়। আর আমরা সারাদিন যে সকল কাজ করি, পড়াশুনা করি বা যা কিছুই করি না কেন, যখন আমরা ঘুমাই তখন ওই তথ্যগুলো আমাদের মস্তিষ্কে স্থায়ীভাবে কনভার্ট হয়। পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ঘুমকে বলা হয় মেমোরি চার্জার। ঘুমের সময় আপনার মস্তিষ্ক পরবর্তী স্মৃতি ধরার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে।