যেভাবে লেখা হলো ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’

১৯৪১ সালের ৯ মার্চ পাবনা জেলার বেড়া থানার বনগ্রামে জন্ম নেন এ শিল্পী। লেখালেখি শুরু করেন ছড়াকার হিসেবে। পরবর্তীতে দেশাত্মবোধক,আধুনিক,লোক সংগীত এবং ইসলামিক গান লিখে প্রশংসা কুড়িয়েছেন কোটি মানুষের।

ঢাকা বেতারের সাবেক এই আঞ্চলিক পরিচালক শিশু কিশোরদের সংগঠন শাপলা শালুকের আসরের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। ১৯৬৩ সালে তিনি তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন এবং ১৯৬৪ সালে তালিকাভুক্ত হন পাকিস্তান টেলিভিশনের। সিনেমার জন্য গানও লিখেছিলেন তিনি।

তার লেখা সব গানকে ছাপিয়ে গেছে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি। এর আবেদন একেবারেই আলাদা। বিবিসির শ্রোতা জরিপে সর্বকালের সেরা ২০ বাংলা গানের তালিকায় ১২তম হয় এ গানটি।

কবির স্মৃতিকথা ও তার ছেলে ওয়াসিফে-এ-খোদার কাছ থেকে জানা যায়,গণঅভ্যুত্থানের বছর শিল্পী বশীর আহমদের সঙ্গে শহীদদের স্মরণে একটি গান রচনার বিষয়ে কথা হয় তার। যে গানে শুধু ভাষা শহীদদেরই নয়,বাংলার স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের কথাও থাকবে।

এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করেই তার মনে আসে কয়েকটি লাইন আর এক বসাতেই লিখে ফেলেন এ গানটি।

ফজল-এ-খোদা গানটি লিখেছিলেন ১৯৬৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। গানটি বশীর আহমদ লিখে নেন তার খাতায়। গানটি তিনি লিখে নিয়েছিলেন উর্দুতে। সুরও করেন,কিন্তু রেকর্ড করেননি।

১৯৭১ সালের ১১ মার্চ মোহাম্মদ আবদুল জব্বার রেডিওতে এসে ফজল-এ-খোদাকে বলেন,‘ বঙ্গবন্ধু বলেছেন শহীদদের স্মরণে গান করতে আর গানটা যেন তিনি লিখেন। আবদুল জব্বারের কথা শুনে ‘সালাম সালাম’ গানের কথা মনে পড়ে তার। গানটি খুঁজে আবদুল জব্বারের কাছে দিয়ে এলে সে দিনই তিনি গানটির সুর করতে বসেন। গানটি ১৪ মার্চ ধীর আলী মিয়ার সংগীতায়োজনে রেকর্ড হয় এবং শিল্পী মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের কণ্ঠে ছড়িয়ে যায় বাঙালির কণ্ঠে কণ্ঠে ’

গানটির রেকর্ড হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। হিন্দুস্থান রেকর্ড থেকে বের হওয়া রেকর্ডে আরও দুটি গানের সঙ্গে ছিল এটি। এক পীঠে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ ও ‘সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা’গান দুটি। অপর পীঠে ছিল‘সালাম সালাম হাজার সালাম।’

তবে গানটি সবার কাছে পৌঁছে যায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত প্রচার হওয়া গানটি সে সময়ের সাধারণ মানুষের অনুভূতিতে ঢেউ তোলে।

তিক্ত হলেও সত্য,এতো জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ গানের গীতিকার কোনো স্বীকৃতি পাননি। গানটির শিল্পী এর জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেও গীতিকারের ভাগ্যে ৫০ বছরেও জোটেনি স্বীকৃতি।

তার ছেলে কবি ওয়াসিফ-এ-খোদা সম্প্রতি এক টেলিভিশনে বলেন,‘বাবা নিজে কখনো চাইতেন না স্বীকৃতি। আপন মনে কাজ করে গেছেন সারা জীবন। কিন্তু ছেলে হিসেবে, একজন শিল্পী সুহৃদ হিসেবেও স্বীকৃতি চেয়েছিলাম। কেন মেলেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বোধগম্য হয় না।’

লেখক : ইমরান মাহফুজ, ৪ জুলাই ২০২১

Share