ঢাকাসহ সারাদেশে বাড়ির মালিকরা ছাত্রাবাসগুলো খালি করতে ব্যাচেলরদের নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের নির্দেশনা পেয়েই বাড়ির মালিকরা এমন নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ ব্যাচেলরদের।
তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা বিষয়টির সত্যতা অস্বীকার করেছেন। যদিও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও থানার ইনচার্জ এ নির্দেশনার কথা স্বীকার করেছেন।
ব্যাচেলররা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবনতির আশঙ্কায় আজ (বৃহস্পতিবার) রাতের মধ্যেই মেস ও ছাত্রাবাস খালি করতে হবে মর্মে নোটিশ দেয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় গতকালই এ নির্দেশনা পালন করা হয়েছে। কোথাও কোথাও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ছাত্রাবাস ফাঁকা করতে বলা হয়েছে।
বাড়িওয়ালাদের নোটিশে আজ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেস খালির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসা যাবে না ব্যাচেলর বা মেস বাসায়।
নির্দেশনার সত্যতা নিশ্চিত হতে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতর ও ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (মিডিয়া) এস এম রুহুল আমিন বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তার অজুহাতে পুলিশ সদর দফতর এমন নির্দেশনা দেয়নি। তবে প্রয়োজনবোধ করলে সংশ্লিষ্ট ইউনিট ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষ এমন নির্দেশনা দিতেই পারে।’
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, নির্বাচনকালে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক কিছুই করা হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত রাজধানীর ব্যাচেলর বাসা-মেসসহ নন-ভোটার বা ভাসমান বাসিন্দাদের সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ মেস অর্গানাইজেশনের (বিএমও) মহাসচিব আয়াতুল্লাহ আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সেন্ট্রালি কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। পুলিশও আমাদের বলেনি। তবে আমাদের কাছে খবর আছে, অনেক মেস ও ছাত্রাবাস মালিককে এমন নির্দেশনা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাড্ডা, খিলক্ষেত, নিকুঞ্জ, মণিপুরিপাড়া, পান্থপাথ, আগারগাঁও ও মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ব্যাচেলর মেস ও ছাত্রাবাসে পুলিশের বরাতে বাড়িওয়ালা এমন নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ এসেছে।
এরপর এসব এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িওয়ালাদের নির্দেশ পাওয়ার পর অনেকেই বাসা ছাড়ছেন। এতে হয়রানি ও ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যাচেলররা। এত অল্প সময়ে ছাত্রাবাস ছেড়ে কোথাও যাওয়ার জায়গাও পাচ্ছেন না। তাই ভীড় জমেছে বাস টার্মিনাল ও রেল স্টেশনগুলোতে।
রাজধানীর মণিপুরিপাড়ার ছাত্রাবাস থেকে বের হওয়া বেসরকারি কলেজ শিক্ষার্থী নাফিস শাহরিয়ারের সঙ্গে কথা হয় কল্যাণপুরে। তিনি বলেন, আচমকা নির্দেশনা দেখলাম। বাড়ির মালিক বললেন, ‘বাবা কিছু করার নেই। বুঝতেই তো পারছো, দেশের কী অবস্থা। ভোটের পরে চলে এসো।’
খিলক্ষেত এলাকার ব্যাচেলর শফিউর রহমান বলেন, ‘সকালে দারোয়ান বলেছে, আজ সন্ধ্যার মধ্যে চলে যেতে। পুলিশ নাকি মালিককে নির্দেশ দিছে। বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে চলেও গেছে। আমি বলেছি, আজ অফিস শেষ করে রাত ৯টার পর ভৈরবে নিজ বাসায় চলে যাব।’
পুলিশের এমন নির্দেশনার সত্যতা পাওয়া যায় রাজধানীর বেশ কয়েক থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির বলেন, ‘নির্বাচন ঘিরে যাতে কোনো ধরনের নাশকতা না হয়, দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা যেন না হয়, সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সন্দেহজনক এলাকাগুলোর ব্যাচেলর বাসা ও মেসের বাসিন্দা এবং ভাসমান লোক, যারা এই এলাকার ভোটার নন তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।’
খিলক্ষেত এলাকায় ব্যাচেলর ও হোস্টেল খালি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আজকের মধ্যে মেস বা ছাত্রাবাস খালি করতে বলেছি। ভোটের পর চলে আসতে পারবেন সবাই। নিরাপত্তাজনিত কারণে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে গুলশান বিভাগ পুলিশ থেকে।
ঢাকার বাইরেও একই নির্দেশনা
রাজধানীর পাশাপাশি রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহীতেও একই নির্দেশনা দেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
রংপুর কারমাইকেল কলেজের ইসলামের ইতিহাসের ছাত্র মামুন জানান, আমরা আরও দুদিন আগেই বাড়িতে চলে এসেছি। মেসে সকাল-বিকেল পুলিশ আসে। মালিকও বিরক্ত, বিরক্ত আমরাও। এরই মধ্যে মেস খালির নির্দেশ। তাই গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায় চলে এসেছি।
জান্নাতুল স্মৃতি নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘কুষ্টিয়ায় নির্বাচনে নিরাপত্তার স্বার্থে শিক্ষার্থীদের মেস ছাড়ার নির্দেশ! নির্বাচনের মাত্র ছয়দিন বাকি থাকতেই অর্থাৎ গত ২৪ তারিখ থেকে কুষ্টিয়ার সব মেস-ছাত্রাবাস ফাঁকা করার নির্দেশনা দেয়া হয় গত ২০ ডিসেম্বরে।’
একইভাবে সোহেল নামে এক শিক্ষার্থী জানান, ঢাকায় ঝামেলার আশঙ্কায় দিনাজপুরে এসে বন্ধুর মেসে উঠেছি। কিন্তু গত ১৮ তারিখ (ডিসেম্বর) থেকে কড়াকড়ি। গেস্ট রাখা যাবে না। ২২ তারিখ থেকে টোটালি মেসই বন্ধের নোটিশ জারি করেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলার অতিরিক্ত এসপি (ক্রাইম) মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা সরাসরি মেস বা ছাত্রাবাস খালির নির্দেশনা দেইনি। তবে মেসে এ সময়টাতে বহিরাগত, গেস্ট বা অপরিচিতদের আনাগোনা বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা জেনেছি, অনেকেই মেস ও ছাত্রাবাস বন্ধ রেখেছেন।’
গাইবান্ধা জেলার একজন অতিরিক্ত এসপি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, এটা রুটিন ওয়ার্কের অংশ যে, মেস ও ছাত্রাবাসে স্পেশাল নজরদারি থাকে। তবে নির্বাচনকালে এটা আরও বাড়ানো হয়। এবারও তাই করা হচ্ছে। (জাগো নিউজ)
বার্তা কক্ষ
২৭ ডিসেম্বর,২০১৮