এয়ার অ্যারাবিয়ার উড়োজাহাজটি যখন দোমোদেদোভো বিমানবন্দরে অবতরণ করছিল মস্কোর ঘড়িতে তখন দুপুর ১ টা। আকাশে চকচকে রোদ, উড়োজাহাজটি নিচে নামছিল শুভ্র মেঘ কেটে। দিনের আলোয় বিশ্বকাপের প্রধান শহরে, আকাশ থেকে কত সুন্দরই না লাগবে। দালানে দালানে বিভিন্ন দেশের পতাকা, থাকবে গাছের ডালেও। যেমনটি দেখে এসেছি ঢাকাতে। কিন্তু উড়োজাহাজ যত নিচে নামছিল, হতোই হতাশ হতে হয়েছে। কোনো পতাকাতো চোখে পড়ছে না!
মস্কো সেন্টার থেকে বিমান বন্দর এক ঘন্টার অধিক পথ। মনে হয়েছিল মূল শহরে গেলে চোখে পড়বে মেসি-নেইমারদের দেশের পতাকা। তাদের জার্সি গায়ে মানুষের মিছিলও চোখে পড়বে। কিন্তু ভুল ভাঙ্গলো বসতিপূর্ণ এলাকায় ঢুকে। একটি পতাকাও উড়তে দেখা গেলো না কোথাও।
মিডিয়া অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড গলায় ঝুলানো দেখে অনেকে তাকান। কারো কারো কৌতুহল দৃষ্টি। কেউ কেউ আবার ওয়েলকামও জানান। তবে বিশ্বকাপ নিয়ে আলোচনায় জমাতে চাইলে বেশি আগান না। অথচ ঢাকা থেকে রাশিয়া রওয়ানা হওয়ার শুরুটাই ছিল একজন উবারচালকের বিশ্বকাপ নিয়ে আগ্রহের কথা শুনতে শুনতে।
গাড়ীতে বসে বিভিন্ন জনের সঙ্গে ফোনালাপে সাদ্দাম নামের ২৪ বছরের যুবক বুঝে গিয়েছিলেন আমি রাশিয়া যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর নিজ থেকেই উবার চালকের প্রশ্ন ‘স্যার কী বিশ্বকাপ দেখতে যাচ্ছেন?’ হ্যা বলতেই তার আগ্রহ বেড়ে গেলো। নিজের থেকেই বললো সে আর্জেন্টিনার সমর্থক। মেসিদের কোনো খেলা আগের বিশ্বকাপে মিস করেনি, বললো এবারও করবে না।
তবে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে তার ভালোবাসা থাকলেও প্রত্যাশাটা কমই মনে হলো। কেন? ‘স্যার মেসি এক আর কতো খেলবে। দেখলেন না কত বিশ্বকাপের ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েও পারলো না। এবার কোন পর্যন্ত যাবে কে জানে?’-জবার সাদ্দামের। তারপরই জানতে চাইলেন-আমি মেসিদের কোনো খেলা দেখবো কীনা। হ্যা বলতেই ‘তাহলেতো দারুণ।’
৭ বছর আগে মেসিরা ঢাকায় খেলে গেছেন। সাদ্দামের অনেক ইচ্ছে ছিল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালানিতে বসে মেসির খেলা দেখবেন। পারেননি। ‘স্যার, টিকিটের এত দাম ছিল যে, ইচ্ছে থাকলেও কিনতে পারিনি। টিভিতে দেখেছি। তবে আবার যদি কোনো দিন আসেন মেসি, টিকিট কিনবোই’-বলছিল উবারচালক।
ভীনদেশের পতাকা নাও উড়াতে পারেন রাশিয়ানরা। তাদের দেশে বিশ্বকাপ। নিজেদের দেশও খেলছে। কিন্তু কোথাও রাশিয়ান কোনো পতাকাও নেই। এমন কী রাশিয়ার রাশিয়ার জার্সি পড়া মানুষও রাস্তাঘাটে হাতেগোনা। তাহলে কী বিশ্বকাপ নিয়ে রাশিয়ানদের আগ্রহ নেই? তা আছে। স্থানীয় কাউকে বিশ্বকাপ নিয়ে জানতে চাইলে অনেক তথ্যই পাওয়া যায়। কিন্তু বাড়তি উচ্ছ্বাসটা কেনো নেই? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়াতো পরে, আগে তো প্রশ্নটা কাউকে বোঝাতে হবে। সেটাও কঠিন এক কাজ, অন্য ভাষার মানুষের জন্য।
অথচ ঢাকায় কতই না আগ্রহ বিশ্বকাপ নিয়ে। খেলা মাঠে গড়ানোর মাস দেড়েক আগে থেকেই বিশ্বকাপ দেখার ও প্রিয় দলকে সমর্থন দেয়ার প্রস্তুতি বাংলাদেশের মানুষের। নিজেদের দেশ খেলে না, অথচ বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের উম্মাদনা নজিরবিহীন। সেখানে বিশ্বকাপে অংশ নেয়া এবং আয়োজন করা দেশটির রাজধানী শহরের চিত্রটা আলাদা।
ফুটবলে রাশিয়ার সমমানে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য অলীক কল্পনা। কিন্তু ফুটবলকে ভালোবাসায় নিশ্চয়ই বিশ্বের বৃহৎ দেশটির মানুষদের চ্যালেঞ্জ দিতেই পারে বাংলাদেশিরা। আগে পড়ে যাই হোক, বিশ্বকাপ নিয়ে উম্মাদনায় অনেক ফুটবল সমৃদ্ধ জাতিকেও হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। এই বিশ্বকাপের আয়োজক রাশিয়ার অন্য শহরগুলোর এখন কী অবস্থা সেটা দেখা হয়নি। তবে মস্কোর চেয়ে বিশ্বকাপ উম্মাদনায় ঢাকা যে অনেক এগিয়ে সেটা তো চোখেই দেখা।