বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। জাতির পিতার নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের এই দিনে ১১ নভেম্বর যুব কনভেনশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সংগঠনটি।
চার যুগ ধরে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও হাজারও নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশের বৃহৎ যুব সংগঠনে পরিণত হয় যুবলীগ।
তবে গত কয়েক বছরে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি, চাঁদা, টেন্ডারবাজি, কমিটি বাণিজ্য ও অনুপ্রবেশসহ নানা অপকর্মে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছিল সংগঠনটি।
এ সহযোগী সংগঠনের নেতিবাচক কাজে বিব্রত হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। গত বছরই উদ্যোগ নেয়া হয় কলঙ্ক ঘুচিয়ে হারানো ঐতিহ্য ফেরানোর।
চালানো হয় শুদ্ধি অভিযান। কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের শীর্ষ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে সরিয়ে দেয়া হয়।
এর মধ্যে গত বছরের ২৩ নভেম্বর সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসে শেখ ফজলে শামস্ পরশ চেয়ারম্যান ও মাইনুল হোসেন খান নিখিল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
দায়িত্ব পাওয়ার পর তারা সংগঠনকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি করোনাভাইরাস ও বন্যাসহ বিভিন্ন মানবিক কাজে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
তবে এ সময়ে সাংগঠনিক কাজে ভাটা পড়ে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এখনও অগোছালো রয়েছে সংগঠনটি। আবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় তৃণমূল গোছানোর কাজও শুরু করতে পারছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
পাশাপাশি সংগঠনের পদপ্রত্যাশী নেতাদেরও অপেক্ষার শেষ হচ্ছে না। পদ-পদবি ও সাংগঠনিক কোনো কাজ না থাকলেও প্রতিদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তারা ভিড় করেন।
তাদের চাওয়া- দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে অতীতের কলঙ্ক মুছে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠনটিকে।
এদিকে ক্যাসিনোকাণ্ডের পর তোড়জোড় করে কাউন্সিলের মাধ্যমে চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হলেও প্রায় এক বছরেও যুবলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি।
করোনাভাইরাস চলে আসায় দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকে সংগঠন গোছানোর কাজ। এরপর আওয়ামী লীগ দল গোছানোর কাজ শুরু করলে সম্মেলন হওয়া সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুবলীগকে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তালিকা জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল।
কিন্তু অন্য সব সংগঠন জমা দিলেও যুবলীগ নির্ধারিত সময়ে জমা দিতে ব্যর্থ হয়। পরে অক্টোবরের ১৯ তারিখে যুবলীগকে বাদ রেখে বাকি সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
তবে যুবলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিতর্কিত কোনো নেতা যেন কোনোভাবেই যুবলীগে জায়গা না পায় সে বিষয়ে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক ছিলেন।
এজন্যই অধিক যাচাই-বাছাই করতে হয়েছে। এতে এখনও কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে শুধু কেন্দ্রীয় যুবলীগ নয়, সারা দেশের ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা ও ৮টি জেলার মর্যাদাসম্পন্ন বৈদেশিক শাখার প্রায় সবগুলোই মেয়াদোত্তীর্ণ।
একই অবস্থা উপজেলা এবং ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোর বেলাতেও। বেশিরভাগ চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে।
যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশ-বিদেশের প্রতিটি ইউনিটে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
এছাড়া সকাল ১০টায় ধানমণ্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ।
সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে বনানী কবরস্থানে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মনিসহ ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট নিহত সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠ এবং মোনাজাত করা হবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে যুবলীগের প্রতিটি ইউনিট বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করবে। এছাড়া দুস্থদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হবে।
৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে যুবলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল এক বিবৃতিতে দেশবাসীসহ যুব সমাজকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, করোনাভাইরাসের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা ত্রাণ, রান্না করা খাবার বিতরণসহ নানা মানবিক কর্মসূচি নিয়ে মানুষের পাশে ছিলাম।
রাজনীতি তো মানুষের জন্য। তাই সব সমালোচনা এড়িয়ে আমরা চাই যুবলীগকে মানবিক সংগঠন হিসেবে সামনে এগিয়ে নিতে।
কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও তৃণমূলে দল গোছানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তালিকা আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছি।
আশা করছি শিগগিরই কমিটি ঘোষণা করা হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটির পরই তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হবে।
ঢাকা ব্যুরো চীফ,১১ নভেম্বর ২০২০