জাতীয়তাবাদী যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপিতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনের কমিটি হচ্ছে, হবে করে ইতোমধ্যে পেড়িয়ে গেছে দেড় বছর। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এখন আর সময় নিতে চায় না হাইকমান্ড। দু’টি দলেরই কমিটি প্রস্তুত। অপেক্ষা কেবল ঘোষণার।
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হজে যাওয়ার আগেই যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণা করার কথা থাকলেও তা হয়নি। জানা গেছে, সৌদিতে অবস্থানকালীন বড় ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে পরমর্শ করে এ দু’টি অঙ্গসংগঠনের নতুন কমিটির একটি খসড়া প্রস্তুত করেছেন বিএনপি প্রধান। দেশে ফিরে সিনিয়র নেতাদের সাথেও এ নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। দু-একটা পদের ব্যাপারে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে কিছুটা মতানৈক্য থাকায় একটু সময় লাগছে। তবে তা ঠিক করে শিগগিরই কমিটি ঘোষণা করা হবে।
জানা গেছে, যুবদল ও স্বেচ্ছাসবকদলের ‘সুপার ফাইভ’ (শীর্ষ পাঁচ পদ) ঘোষণা করা হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য এই আংশিক কমিটিকে একটি সময় বেঁধে দেয়া হবে। যুবদলের শীর্ষ পাঁচ পদের মধ্যে সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন সাইফুল আলম নীরব। নীরব বর্তমানে যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। দলের সব সূত্রই নীরবের সভাপতি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যদিও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে কেউ কেউ তার ‘ব্যর্থ’তার কথা উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে বাদ সেধেছেন। সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু আলোচনায় আছেন। তবে বর্তমান নেতৃত্ব থেকেই সাধারণ সম্পাদক করার দাবি উঠেছে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান কমিটির প্রথম যুগ্ম সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ অনেকের পছন্দের প্রার্থী। তৃণমূল যুবদলের ব্যানারে নেতাকর্মীরা নেওয়াজকে সাধারণ সম্পাদক করতে বেশ কিছু দিন ধরেই মাঠে শোডাউন করে আসছেন। তারা বলছেন, মীর নেওয়াজই এ পদের জন্য যোগ্য। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেলেও নেওয়াজ যুবদলেই থাকতে চান। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রফিকুল ইসলাম মজনু, সিনিয়র সহসভাপতি পদে মোরতাজুল করীম বাদরু অথবা মাহবুবুল হাসান পিংকু এবং প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে এস এম জাহাঙ্গীরের নাম প্রায় চূড়ান্ত। তবে শেষ বেলায় কমিটি নিয়ে ঘষামাজা চলছে। দু-একটা পদে পরিবর্তনও আসতে পারে।
২০১০ সালের মার্চে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে সভাপতি এবং সাইফুল আলম নীরবকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর পর সম্মেলনের মাধ্যমে যুবদলের নতুন কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও তা হয়নি।
যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব এ বিষয়ে বলেন, বিএনপি প্রধান যদি উপযুক্ত মনে করে আবার দায়িত্ব দেন, তাহলে তিনি কাজ করে যেতে চান।
শীর্ষ পদগুলোতে আসার আলোচনায় থাকা নেতাদের মধ্যে মাহবুবুল হাসান পিংকু বলেন, কর্মদক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা যেসব নেতার আছে তাদেরই শীর্ষ পদগুলোতে আনা উচিত। বিগত সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন সুযোগ্যদের পদ দিয়েছেন। এবারও তিনি সুযোগ্যদের পদ দেবেন এটাই সবার আশা।
বিএনপির সূত্র মতে, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিও চূড়ান্ত হয়ে আছে। শীর্ষ পাঁচ পদের মধ্যে সভাপতি পদে প্রায় নিশ্চিত বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু। তবে সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সফুও চাচ্ছেন সভাপতি হতে। সাধারণ সম্পাদক পদে আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, সিনিয়র সহসভাপতি পদে মোস্তাফিজুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ইয়াসিন আলী, প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, গোলাম সারোয়ার, আনু মো: শামীমের নাম শোনা যাচ্ছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, যুবদল কিংবা স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটিতে বর্তমান কমিটির ‘সক্রিয়’ নেতাদের কেউ বাদ পড়লে, তাদেরকে উপকমিটিতে অথবা মহানগর বিএনপিতে যোগ্যতা অনুযায়ী পদ দেয়া হবে।
কমিটি গঠন প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি অঙ্গসংগঠন মেয়াদোত্তীর্ণ। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এ নিয়ে কাজ করছেন। শিগগিরই এসব কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৬:৫০ পি,এম ০৭ অক্টোবর ২০১৬,শুক্রবার
ইব্রাহীম জুয়েল