যুবদল স্বেচ্ছাসেবক ও মহিলা দলের কমিটি চূড়ান্ত কেন্দ্রীয় কমিটির পর এবার অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠনের দিকে নজর বিএনপির হাইকমান্ডের। দলটির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দলের নতুন কমিটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। আগামী ঈদুল আজহার আগেই এ তিনটি অঙ্গসংগঠনের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। এরপর
পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোরও কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবদলের নতুন সভাপতি হিসেবে সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব আর সাধারণ সম্পাদক পদে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রায় চূড়ান্ত। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হিসেবে সংগঠনের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু আর সাধারণ সম্পাদক পদে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। মহিলা দলের সভাপতি পদে সংগঠনটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা জোরালো প্রার্থী। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কেউ কেউ সভাপতি হিসেবে শিরিনের পরিবর্তে মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে পছন্দ করছেন। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সুলতানা আহমেদ মোটামুটি চূড়ান্ত।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এ মুহূর্তে দল পুনর্গঠনে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দলের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেছেন চেয়ারপারসন। এরপর অঙ্গসংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, দলে কার কী অবদান তা চেয়ারপারসন ভালোই জানেন। তাই যারা যোগ্য ও বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন তাদের সমন্বয়েই তিনি নতুন কমিটি করবেন।
যুবদল : ২০১৩ সালে যুবদলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও কমিটি পুনর্গঠন করা হয়নি। নির্বাহী কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব হওয়ার পর সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুবদলের সভাপতির দায়িত্ব ছেড়ে দেন। নির্বাহী কমিটির আগে সভাপতি হিসেবে আলোচনায় ছিলেন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাইফুল আলম নীরব, কামরুজ্জামান রতনসহ কয়েকজন। নির্বাহী কমিটিতে এ্যানীকে প্রচার সম্পাদক ও রতনকে সমাজকল্যাণ সম্পাদক করা হয়। নীরবকে নির্বাহী কমিটিতে কোনো পদ দেয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, শতাধিক মামলায় আত্মগোপনে থাকা নীরবকে যুবদলের সভাপতি করা হবে এমনটা ধরে নিয়েই হাইকমান্ড নির্বাহী কমিটিতে তাকে কোনো পদ দেয়নি। তবে দলের একটি অংশ এর বিপক্ষে। তাদের যুক্তি- আত্মগোপনে থাকা কোনো নেতাকে শীর্ষ পদ দেয়া হলে সংগঠনে গতি আসবে না।
যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় ছিলেন মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ কয়েকজন। নেওয়াজকে নির্বাহী কমিটির সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। টুকু গত নির্বাহী কমিটির সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক থাকলেও এবারের কমিটিতে কোনো পদ দেয়া হয়নি। যুবদলের সাধারণ সম্পাদক করা হচ্ছে এমনটা ভেবেই তাকে পদ দেয়া হয়নি বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
সূত্র জানায়, এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি মামুন হাসান এগিয়ে রয়েছেন। সুপার ফাইভে মাহবুবুল হাসান পিংকু, এসএম জাহাঙ্গীর, আবদুল মোনায়েম মুন্না, মোরতাজুল করিম বাদরুর নাম আলোচনায় রয়েছে। জানতে চাইলে যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল হাসান পিংকু জানান, নির্বাহী কমিটির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলেও এক নেতার এক পদের জন্য তিনি যুবদলেই থাকতে চান। তিনি বলেন, ‘গত উপজেলা নির্বাচনে ফরিদপুর সদর থেকে প্রায় এক লাখ ভোট পেয়েছি। বিষয়টি চেয়ারপারসনও জানেন।’ যুবদলের সুপার ফাইভে জায়গা দিয়ে চেয়ারপারসন দলের পক্ষে কাজ করার সুযোগ দেবেন বলে আশা করেন পিংকু।
স্বেচ্ছাসেবক দল : হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সভাপতি ও মীর সরাফত আলী সফুকে সাধারণ সম্পাদক এবং শফিউল বারী বাবুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২০০৯ সালের অক্টোবরে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ থাকায় সংগঠনের কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। সোহেল নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হওয়ায় তিনি আর সভাপতি হচ্ছেন না এটা নিশ্চিত। মীর সরাফত আলী সপুকে নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। তাই বাবুকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি করা হচ্ছে এটা নিশ্চিত। এ জন্য তাকে নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ না দিয়ে শুধু সদস্য করা হয়েছে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও হাবিবুর রশিদ হাবিব। আলীমকে নির্বাহী কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর বিএনপি দুই ভাগ করা হলে হাবিবকে দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।
সব মিলিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল এটা প্রায় নিশ্চিত। আর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় আছেন ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ইয়াছিন আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ঢাকা দক্ষিণের আহ্বায়ক রিপন। এর মধ্যে এগিয়ে আছেন ইয়াছিন আলী। তাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হলে বাকিদের সুপার ফাইভে রাখা হবে।
মহিলা দল : ২০১০ সালের মার্চে নূরে আরা সাফাকে সভাপতি ও শিরিন সুলতানাকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত মহিলা দলের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। নির্বাহী কমিটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক করায় নূরে আরা সাফা মহিলা দলে থাকছেন না এটা নিশ্চিত। সম্প্রতি দলের হাইকমান্ড মহিলা দল নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। শিরিনকে বাদ দিয়ে মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে সভাপতি করতে মরিয়া দলের একটি অংশ। তারা আফরোজাকে সভাপতি ও সুলতানা আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করার পক্ষে। তবে শিরিন সুলতানাও সভাপতি হওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ছাত্রদলের সাবেক নেত্রীদের মধ্যে একজনকে মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জানতে চাইলে শিরিন সুলতানা বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও মহিলা দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি। কাকে দায়িত্ব দিলে সংগঠনে গতি আসবে তা হাইকমান্ড গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে আশা করি।’
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১২:১৮ পি,এম ১৮ আগস্ট ২০১৬,বৃহস্পতিবার
ইব্রাহীম জুয়েল