চিকেনস নেকে ভারী যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করল ভারত

বাংলাদেশ ও চীনকে আলাদা করেছে ভারতের বহুল আলোচিত করিডোর ‘চিকেনস নেক’। করিডোরের এক পাশে ভারতের অধিকাংশ রাজ্য থাকলেও অন্য পাশে রয়েছে এমন ৭টি রাজ্য যেখানে কোনো সমুদ্রবেষ্টিত অঞ্চল নেই। ফলে এই রাজ্যগুলোর বাণিজ্য সক্ষমতা যেমন কম তেমনি এর অধিকাংশ এলাকা বাংলাদেশ ও চীনের বর্ডারে হওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে বেশ উদ্বেগে থাকে দেশটি।

তবে সম্প্রতি ২৮ মার্চ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস তার প্রথম চীন সফরের সময় ‘সেভেন সিস্টার্স’ নিয়ে মন্তব্যের জেরে ভারতের এ উদ্বেগ বহুগুণে বেড়ে যায়। এরই প্রেক্ষিতে ‘চিকেনস নেক’ করিডোর অঞ্চলে নিরাপত্তা বাড়াতে ভারী যুদ্ধাস্ত্র ও সেনা মোতায়েন করেছে দেশটি।

বৃহস্পতিবার ৩ এপ্রিল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।

ড.ইউনূস তার বক্তব্যে অঞ্চলটির সম্ভাব্য বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তবে এটিকে ভারত ভালোভাবে নেয়নি। ফলে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে দেশটিতে।

প্রতিবেদন বলছে, পশ্চিমবঙ্গের এ সরু প্রসারিত করিডোর উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোকে ভারতের বাকি অংশের সাথে সংযুক্ত করেছে। এটি নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান এবং চীনের সীমান্তে অবস্থিত। সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে এ গুরুত্বপূর্ণ করিডোরটিকে রক্ষার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই দেশটি।

ভারতীয় সেনাবাহিনী শিলিগুড়ি করিডোরকে তার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা লাইন হিসেবে বর্ণনা করেছে। উন্নত সামরিক প্রস্তুতির মাধ্যমে যেকোনো সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলা করা হবে বলে জানিয়েছে তারা। করিডোরের কাছে সুকনায় সদর দপ্তর অবস্থিত ত্রিশক্তি কর্পস এই অঞ্চলটিকে সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কর্পস রাফায়েল যুদ্ধবিমান, ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র এবং উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক বিবৃতি করিডোরের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের অবস্থানকে আরও জোরদার করেছে। তিনি জোর দিয়েছিলেন যে দুর্বলতার পরিবর্তে, চিকেনস নেক হলো ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক অঞ্চল।

চিকেনস নেকে বহু-স্তরযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা : প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এই অঞ্চলে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—

উন্নত সামরিক সম্পদ স্থাপন:ভারতীয় বিমান বাহিনী মিগ যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি হাশিমারা এয়ারবেসে রাফায়েল যুদ্ধবিমানের একটি স্কোয়াড্রন স্থাপন করেছে। ব্রহ্মোস মিসাইল রেজিমেন্ট: ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইলের একটি রেজিমেন্ট সম্ভাব্য হুমকি রোধ করতে করিডোরে মোতায়েন করা হয়েছে। সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা: ভারত এ অঞ্চলে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা স্থাপন করেছে যাতে আকাশ পথে যে কোনো অনুপ্রবেশ রোধ করা যায়। এমআরএসএএম এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম: এগুলো নিরাপত্তার একটি অতিরিক্ত স্তর। কোনো ধরনের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে আকাশসীমা সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এই সিস্টেম মোতায়েন রয়েছে অঞ্চলটিতে।

নিয়মিত সামরিক মহড়া: ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম বলছে,টি-৯০ ট্যাঙ্কের সাথে লাইভ-ফায়ার ড্রিলসহ অপারেশনাল প্রস্তুতি বাড়ানোর জন্য প্রায়শই যুদ্ধ অনুশীলন পরিচালনা করে থাকে সামরিক বাহিনী।

কৌশলগত সতর্কতা : ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক হুমকির বিরুদ্ধে ভারত সজাগ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিসহ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে নিবিড়ভাবে মূল্যায়ন করছে ভারত।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার ক্রমবর্ধমান আলোচনা ভারতের জন্য কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তার বিষয় দেশটির মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।

এর জবাবে মূলত: এ অঞ্চলে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করেছে ভারত। দেশটির চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান অপারেশনাল প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি ভারতের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেন।

Share