যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের আমেজ এখনও শেষ হয়নি। বেশ কিছু রাজ্যের ভোট গণনা এখনও বাকি আছে। কী হতে যাচ্ছে বা কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট না নিয়ে জল্পনা-কল্পনা এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যেই দেশটিতে নতুন করে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে চলেছে।
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। যা আগের দিনের তুলনায় বেশি।
স্থানীয় সময় বুধবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৫ জন। এই সময়ের মধ্যে মারা গেছে ১ হাজার ২২৬ জন।
এর আগে স্থানীয় সময় বুধবার দেশটিতে নতুন করে ৯৯ হাজার ৬৬০ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার ২৩ হাজার ৪২৫টি বেশি কেসের কারণে সংকমণ লাফিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা তিনদিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে। গত কয়েকদিন ধরেই গড়ে মৃত্যু ছিল প্রায় হাজার। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৯৬ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে মারা গেছে ২ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকেই নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যেই দেশটিতে চলতি মাসের ৩ তারিখ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে লোকজনের ভিড় এড়াতে বেশিরভাগ মানুষই আগাম ভোট দিয়েছেন।
দেশটিতে ১০ কোটির বেশি মানুষ মেইলের মাধ্যমে বা নিজে উপস্থিত থেকে আগাম ভোট দিয়েছেন। নির্বাচনের ভোট গণনা এখনও শেষ হয়নি। সে কারণেই এখনই বলা যাচ্ছে না যে ফলাফল কোন দিকে যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘিরে সারাবিশ্বই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। এখন পর্যন্ত জো বাইডেনের দখলে রয়েছে ২৬৪টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। সেখানে ট্রাম্পের ঝুলিতে ২১৪টি। প্রেসিডেন্ট হতে দরকার ২৭০ ভোট। সেদিক বিবেচনায় ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেন অনেকটাই এগিয়ে গেছেন।
গণনার প্রথমদিকে বেশকিছু অঙ্গরাজ্যে এগিয়েছিলেন রিপাবলিকানরা। কিন্তু পোস্টাল ব্যালট গণনা শুরু হতেই ছবিটা একটু-একটু করে বদলাতে শুরু করে। এগিয়ে যান বাইডেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নেভাদা, অ্যারিজোনা, পেনসিলভেনিয়া ও জর্জিয়ায় পোস্টাল ব্যালট গণনা চলছে। গণনা শেষ না হলে চূড়ান্ত ফল মিলবে না। তবে লড়াইমঞ্চ এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেবেন না বলে ফের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প।
ভোট চুরির অভিযোগ এনে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলছেন, বড় বড় মিডিয়ার সমর্থন, বিশাল অর্থের লেনদেন এবং বড় বড় প্রযুক্তি জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট বানানো জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। ফলে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তার প্রতিপক্ষ কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচন চুরির চেষ্টা করছে। হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। যদিও এর পক্ষে তিনি কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। তিনি বলছেন, বিভিন্ন রাজ্যে তারা আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন দাখিল করেছেন।
তিনি বলেন ‘আইন-সম্মত’ উপায়ে ভোট গুনলে তিনি সহজেই বিজয়ী হতেন। তার ভাষায়, যদি ‘বেআইনি ভোট’ গোনা হয় তাহলে তাদের কাছ থেকে নির্বাচন চুরি করা হচ্ছে। ট্রাম্প বলছেন যে, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে তিনি অনেক ভোটে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু পরে ‘রহস্যজনক’ ভাবে অনেক নতুন ভোট গোনা শুরু হয়।
তিনি দাবি করেছেন, এখানে নির্বাচন শেষ হবার পর ভোট পাঠানো হয়েছে, বেআইনি ভোট গ্রহণ করা হয়েছে, গোপনে ভোট গোনা হয়েছে, ভোট গণনা কেন্দ্রে রিপাবলিকান দলের পর্যবেক্ষকদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। তবে তার এসব দাবীর পক্ষে তিনি কোন প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।
বার্তা কক্ষ,৬ নভেম্বর ২০২০