জ্বালানি তেল বিক্রির জন্য কমপক্ষে পাকা মেঝেসহ আধাপাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক সক্ষমতা-সংক্রান্ত লাইসেন্সসহ অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার এবং মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সে নির্দেশনা উপেক্ষা করে চাঁদপুর জেলায় যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেল। যার ফলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস এবং বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ সরকারী বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেল।
গত কয়েক বছর ধরে দেখা গেছে চাঁদপুর জেলা শহরের ওয়্যারলেস রেলগেইট, পুরান বাজার, গাছ তলা, বাগাদী চৌরাস্তা, বাগড়া বাজার, বহরিয়া, লক্ষ্মীপুর, বালিয়া, ফরাক্কাবাদ, রঘুনাথপুর, ঢালীরঘাট, সফরমালী, কল্যান্দী সহ বিভিন্ন উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজার ও রাস্তার দু-পাশে গড়ে উঠেছে শত শত জ্বালানী তৈল পেট্রোল ও অকটেনের দোকান। শহর এবং শহরের বাহিরের এসবস্থান গুলোতে প্রতিনিয়তই জনবসতি এলাকায় খোলা বাজারে এসব জ্বালানী তেল বিক্রি করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা।
বিশেষ করে কাপড়, চা, মুদি, রড, সিমেন্টের দোকান, বিপজ্জনক ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসব প্রতিষ্ঠান খুলে ড্রামে করে তৈল এনে বিক্রি করছেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। এতে করে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। খোলা বাজারে এমন জ্বালানী তেল বিক্রিতে ২০১৬ সালে সেপ্টেম্বর মাসে চাঁদপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে তেলবাহী লরি ও তেলের গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এতে আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০ জন। এর মধ্যে মারাত্মক দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জ্বালানী তেল ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান (৫০), বাদশা (৪৫), মাসুদ (২৮), রায়হান (২৩), নুর মোহাম্মদ (২১), ফায়ার সার্ভিস কর্মী মজুমদার খোকন (৪০) সহ এই পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। চাঁদপুরে এমন স্মরনীয় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও বন্ধ হয়নি খোলা বাজারে যত্রতত্র জ্বালানী তেল বিক্রি।
জনবসতি কিংবা যেখানে বসতি বাড়ি ঘর রয়েছে সেখানে এসব জ্বালানী তেল বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলেও বিক্রেতারা তা মানছে না। তারা দুর্ঘটনা এবং প্রশাসনকে উপেক্ষা করেই মহাসড়ক, বাইপাশ সড়ক ও বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কের পাশে পেট্রোল,ডিজেল ও অকটেনসহ বিভিন্ন জ্বালানী তেল বিক্রি করার কারনে একদিকে যেমন যেকোন সময় অনাকাঙ্খিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে, অন্যদিকে বখাটে, দুর্বৃত্তরাও সহজে হাতের নাগালে তেল পেয়ে তা দিয়ে কোন না কোন নাশকতার ঘটনাও ঘটাতে পারে। এসব তেল দাহ্য পদার্থ। তাই এটা নিয়ে যেকোন সময় দুর্বৃত্তরা নাশকতার সৃষ্টি করতে পারে।
গত কয়েক বছর গুলোতে দেখা গেছে বিভিন্ন মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের পাশে ব্যাপকভাবে খুচরা পেট্রােল ও অকটেন বিক্রি করছে বিক্রেতারা। এভাবে পেট্রোল বিক্রি করায় সন্ত্রাসীরা নাশকতার সুযোগ পায় বলেও অভিযোগ সচেতন মহলের। চাঁদপুরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা গেছে পেট্রোল বিক্রেতারা মহাসড়ক এবং আঞ্চিলক সড়কের পাশে টেবিলের ওপর রাখা বোতল ও কনটেইনারে ভরে পেট্রাল বিক্রি করছেন।
জ্বালানী তেলের ব্যবসা করতে জেলা প্রশাসক ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ সরকারী নানা সংস্থার অনুমোদন বাধ্যতামূলক থাকলেও এসব ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেরই নেই কোন অনুমোদন। এসব অবৈধ ব্যবসায় বন্ধে প্রশাসন এবং নিদিষ্ট কর্তৃপক্ষের ও নেই কোন উদ্যোগ। তাই বছরের পর বছর চাঁদপুরের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ভাবে জ্বালানি তেলের ব্যবসা করে চলেছেন ব্যবসায়ীরা।
আর জনবসতি এবং বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় এমন জ্বালানী তেল বিক্রির কারনে যে কোন সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করেছেন সচেতন মহল। দুর্ঘটনা ও নাশকতা এড়াতে চাঁদপুরের বিভিন্নস্থানে এসব জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ করতে জরুরী ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এ বিষয়ে চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মোঃ ফরিদ আহমেদ জানান, যারা খোলা বাজারে এসব জ্বালানি তেল বিক্রি করছে, আমরাও তাদের বিপক্ষে। যারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তেল বিক্রি করছেন, তারা আগে জেলা প্রশাসন থেকে অনুমোদন নিয়ে এলে তারপর আমরা তাদের লাইসেন্স দেই। এছাড়া যারাই তেল বিক্রির লাইসেন্স নেন, তারা যেনো অনাবাসিক এলাকা, অগ্নি নির্বাপন ও নিরপত্তা ব্যবস্থা এবং যেখানে কোন বাড়ি ঘর, দোকান পাট ও জনবসতি নেই সেখানে তেল বিক্রির সে শর্ত অনুযায়ী তাদেরকে লাইসেন্স দেওয়া হয়।
প্রতিবেদক:কবির হোসেন মিজি,২৩ সেপেটম্বর ২০২০