খেলাধুলা

ঐতিহাসিক ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ

শততম টেস্টে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ ।

কলম্বোয় সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে সফরকারী বাংলাদেশের বিপক্ষে ধুঁকছে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। নিজেদের শততম টেস্টে দুর্দান্ত পারফর্ম করছে টাইগাররা। ঐতিহাসিক এই ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ আর কোটি কোটি টাইগারপ্রেমী। অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ম্যাচের শেষ দিন পর্যন্ত।

চতুর্থ দিন শেষে ১০০ ওভার ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৬৮ রান তুলেছে শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের লিড ১৩৯ রান। ব্যাটিংয়ে অপরাজিত আছেন দিলরুয়ান পেরেরা (২৬) ও লাকমল (১৬)। দিলরুয়ান পেরেরা ১২৬ বলে ২৬ রান নিয়ে খেলছেন। শেষ দিন দ্রুতই লঙ্কানদের গুটিয়ে দিয়ে ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।

টাইগারদের হয়ে সাকিব ও মোস্তাফিজ তিনটি করে উইকেট তুলে নেন। একটি করে উইকেট দখল করেছেন মিরাজ ও তাইজুল।

চতুর্থ দিনের শুরুটা দারুণ করে বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম বলেই ওপেনার উপল থারাঙ্গাকে বোল্ড করে প্যাভিলিওনে ফেরান মেহেদি হাসান মিরাজ। ২৬ রান করেন থারাঙ্গা। দিনের প্রথম সেশন শেষে ৪৩ ওভার ব্যাট করে ১ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রান তুলে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় শ্রীলঙ্কা। শুরুর হোঁচট কাটিয়ে লড়তে থাকা লঙ্কানদের বুকে কাঁপন ধরান কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। প্রথম সেশনে বিবর্ণ বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেশনে ঘুরে দাঁড়ায়। মিরাজ থারাঙ্গাকে ফেরানোর পর প্রথম সেশনে আর উইকেট হারায়নি শ্রীলঙ্কা।

দ্বিতীয় সেশনেই চিত্র পুরোপুরি বদলে যায়। মোস্তাফিজ ও সাকিবের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ধুঁকতে থাকে লঙ্কানরা। বিরতির পর ফিরে মোস্তাফিজের শিকারে সাজঘরে ফেরেন মেন্ডিস। ব্যক্তিগত ৩৬ রানের মাথায় কাটার মাস্টারের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন মেন্ডিস। ৯১ বলে মেন্ডিসের সাজানো ইনিংসের শেষ হয় দলীয় ১৪৩ রানের মাথায়। মেন্ডিস-করুনারত্নে জুটিতে আরও ৮৬ রান যোগ করে লঙ্কানরা। এর পর লঙ্কান শিবিরে আবারো আঘাত হানেন মোস্তাফিজ। মুশফিকের হাতে জমা পড়ে চান্দিমালের উইকেট। ফেরার আগে চান্দিমাল করেন মাত্র ৫ রান। দলীয় ১৬৫ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারায় লঙ্কানরা।

দলীয় ১৭৬ রানের মাথায় উইকেট শিকারে যোগ দেন সাকিব। ফিরিয়ে দেন গুনারত্নেকে। মাত্র ৭ রান করে এলবির ফাঁদে পড়েন তিনি। চতুর্থ উইকেট হারায় লঙ্কানরা। এরপর আবারো আক্রমণে এসে নিজের তৃতীয় ও দলের হয়ে পঞ্চম উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজ। মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করে ফিরিয়ে দেন ডি সিলভাকে (০)। দলীয় ১৭৭ রানের মাথায় টপঅর্ডারের পাঁচ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।

এরপর সাকিব আবারো লঙ্কা শিবিরে আঘাত হানেন। ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটিয়ে সাকিব ফেরান নিরোশান দিকওয়েলাকে। মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফেরার আগে তিনি করেন ৫ রান। দলীয় ১৯০ রানের মাথায় ছয় ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরেন। চা বিরতির আগে (দ্বিতীয় সেশন) ৬৯ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯৯ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। শেষ সেশনে সাকিব ফেরান গলার কাঁটা হয়ে থাকা দিমুথ করুনারত্নেকে (১২৬)। সৌম্যর হাতে ধরা পড়ার আগে করুনারত্নে ২৪৪ বলে ১০টি চার আর একটি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান। সাকিব তাকে ফিরিয়ে তৃতীয় উইকেট দখল করেন। দলীয় ২১৭ রানের মাথায় লঙ্কানরা সপ্তম উইকেট হারায়।

পরে জুটি গড়েন পেরেরা ও রঙ্গনা হেরাথ। ২১ রানের জুটি গড়েন তারা। তাইজুলের প্রথম শিকারে বিদায় নেন হেরাথ। আগের ছয় ওভারের স্পেলে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তাইজুল। দীর্ঘ বিরতির পর নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নিয়ে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন। ব্যক্তিগত ৯ রানে তাইজুলের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন হেরাথ।

এর আগে তৃতীয় দিন শেষে লঙ্কানরা নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩ ওভার ব্যাটিং করে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৪ রান করেছিল। সমান ২৫ রানে অপরাজিত ছিলেন দুই ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে ও উপল থারাঙ্গা। তবে ৭৫ রানে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ।

রঙ্গনা হেরাথরা নিজেদের প্রথম ইনিংসে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৩৩৮ রান করেছিল। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৩৮ করেন দিনেশ চান্দিমাল। তবে অন্য কোনো ব্যাটসম্যানই হাফসেঞ্চুরির দেখা পাননি। মেহেদি হাসান মিরাজ নেন তিনটি উইকেট। এছাড়া দুটি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান, শুভাষিশ রায় ও সাকিব আল হাসান।

শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসের জবাবে সফরকারী বাংলাদেশ সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরিতে (১১৬) ৪৬৭ রানের বিশাল স্কোর গড়ে। যেখানে ১২৯ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসের পর এই প্রথম এক ইনিংসে বাংলাদেশের সাত ব্যাটসম্যান ৩০ রানের বেশি করেন। হাফসেঞ্চুরির দেখা পান সৌম্য সরকার, মুশফিক ও মোসাদ্দেক হোসেন।

লঙ্কান বোলারদের মধ্যে চার উইকেট করে দখল করেন হেরাথ ও লাকসান সানদাকান। আর বাকি দুটি উইকেট যায় সুরাঙ্গা লাকমালের শিকারে।

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময়০৮:১০ এ.এম, ১৯ মার্চ ২০১৭,রবিবার
ইব্রাহীম জুয়েল

Share