চাঁদপুরে এ বছর ইলিশের আমদানি তেমন না থাকায় ইলিশ মৌসুমে ইলিশের আকাল দেখা দিয়েছে। এতে করে অর্ধশত ইলিশের আড়ত ও শত শত ইলিশ ব্যবসায়ীরা হতাশ।
তাঁরা এখন দেশিয় প্রজাতির মাছ বিক্রি করে তাদের এ মৌসুমের কিছুটা হলেও খরচ পোষানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে অধিকাংশ ব্যবসায়ী জানান।
এ বছর সরকার জাটকা সংরক্ষণের জন্য মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ১শ’ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ইলিশসহ সকল ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ছিলো। ১ মে থেকে ওই নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও এখনও ইলিশের বাড়ি নামে সরকারিভাবে স্বীকৃত চাঁদপুরের মৎস্য আড়তে (মাছঘাটে) রূপালি ইলিশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আসছে না।
আর যে পরিমাণ ইলিশ আসছে তা সাইজে ছোট এবং মূল্য অনেক বেশি। এখন ক্রেতাদের ইলিশের চাহিদা মেটাতে দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো আড়ত দখল করে আছে।
মতলব উত্তর উপজেলা অংশে মেঘনা নদীতে ইলিশ শিকারের ওপর থাকা দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে আরও তিন সপ্তাহ আগে। এর মধ্যে নদীতে জাল, নৌকা, ট্রলার ও মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে নেমে পড়েছেন প্রায় ৮ হাজার জেলে।
মেঘনা নদীর এপার-ওপার দিন-রাত চষে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। এত কষ্টের পরও দেখা মিলছে না কাঙ্খিত পরিমাণ রূপালি ইলিশের। তাই হতাশ হয়ে পড়েছেন প্রায় ৮ হাজার জেলে। দীর্ঘ দুই মাস বেকার থাকার পর কাঙ্খিত মাছ না পেয়ে মহাজন, আড়তদারের মোটা অঙ্কের দাদনের টাকা, ধার-দেনা এবং এনজিওর ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। সঙ্গে পরিবারের খাবারের চিন্তায় চরম হতাশার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন মতলবের জেলেরা।
সরেজমিনে মতলব উত্তরের আমিরাবাদ, এখলাছপুর ও ষাটনল আড়তে গিয়ে দেখা যায়, নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ না ধরা পড়ায় মৎস্যজীবীদের মধ্যে চলছে হাহাকার। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগম নেই। জমে উঠছে না মৎস্যঘাট। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসলেও ইলিশ না ধরা পড়ায় খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে তাদের।
বেড়ির মাথার কয়েকজন জেলে জানান, পহেলা এপ্রিল থেকে নদীতে মাছ ধরছি। প্রতিদিনই সাড়ে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু সারাদিন-রাত জাল বেয়ে মাত্র তিন থেকে ২ হাজার টাকার ইলিশ মাছ পাই।
এমনিতেই দেনায় জর্জরিত তার ওপর আবার নতুন করে দেনায় পড়েছি।
ষাটনল আড়তের সভাপতি বদরউদ্দিন মিয়াজী বলেন, জেলেরা প্রতিদিন নদীতে গিয়ে পর্যাপ্ত মাছ না পাওয়ায় অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে। মাছ না পাওয়ায় ঘাটে পাইকার আসে না। দু-একজন আসলে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। ঘাটও এখনো জমে উঠেনি। তাই এখন নদীতে মাছ না পাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য।
চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ষাটনল মালোপাড়ার মেসার্স খাজা মৎস্য আড়তের প্রোঃ মোঃ বদর উদ্দিন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও রূপালি ইলিশের আমদানি হচ্ছে না। তবে চলতি মাসের শেষের দিকে ইলিশ আমদানি বাড়বে, কারণ ততদিন পর্যন্ত নদীতে পানি বাড়বে। তিনি আরো জানান, রূপালি ইলিশের আমদানি খুবই কম। ৩শ’ গ্রাম ওজনের রূপালি ইলিশের কেজি ৩শ’ টাকা, ৫শ’ গ্রামের ইলিশের মূল্য ৬শ’ টাকা, ৭শ’ ৯শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশের মূল্য ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকা এবং ১ কেজি ওজনের ইলিশের মূল্য ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা।
একই আড়তের আরেক ব্যবসায়ী মোঃ সালাম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, জাটকা রক্ষা কর্মসূচি শেষ হওয়ার পরে মূলত দেশীয় প্রজাতির মাছই আড়ত দখল করে আছে। দেশীয় প্রজাতির মধ্যে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২শ’ টাকা, পোয়া ও তাপসী ৩শ’ থেকে ৩৫০ টাকা, পাঙ্গাস ২শ’ থেকে ৪শ’ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৬শ’ থেকে ৯শ’ টাকা, গলদা চিংড়ি ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা, আইড় মাছ প্রতি মণ ২৭ থেকে ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব মাছই শহর ও গ্রামাঞ্চলের খুচরা মৎস্য ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে নিচ্ছেন তাদের স্ব স্ব এলাকায় বিক্রির জন্যে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, জাটকা নিধন হলেও জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি এ বছর ভালভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। এখনো রূপালি ইলিশের কাক্সিক্ষত দেখা পাচ্ছে না জেলেরা। তবে বর্ষা মৌসুমেই ইলিশের আমদানি বাড়বে। ইলিশ গভীর পানির মাছ, পানি বাড়লে আমদানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিবেদক- খান মোহাম্মদ কামাল