মৌসুমী একজন বাংলাদেশী জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। আরিফা পারভিন জামান মৌসুমী যিনি চলচ্চিত্র জগতে মৌসুমী নামেই পরিচিত। ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন মৌসুমী। প্রথম ছবি দিয়েই দর্শকের নজর কাড়েন তিনি।
পরিবার
মৌসুমী বিয়ে করেছেন চলচ্চিত্র অভিনেতা ওমর সানীকে। তাদের দুই সন্তান ছেলে ফারদিন, মেয়ে ফাইজা। মৌসুমীর বাবার নাম নাজমুজ্জামান মনি এবং মায়ের নাম শামীমা আখতার জামান।
ওমর সানি-মৌসুমীর সুখময় দাম্পত্য জীবনের দেড় যুগ পূর্ণ করলেন দেশীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় তারকা দম্পতি ওমর সানি ও মৌসুমী।
গতকাল তাদের বিবাহিত জীবনের ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৯৯৬ সালের এই দিনে ওমর সানি-মৌসুমী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৯৬ সালের ৩ আগষ্ট ওমর সানি-মৌসুমী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তৎকালীন হোটেল শেরাটনে (বর্তমান রূপসী বাংলা) অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে এই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘদিনের প্রেমের ফসল হিসেবে দু’টি মনের মিলনে চলচ্চিত্র শিল্পের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। দাম্পত্য জীবনের দেড় যুগ পূর্ণ করার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ওমর সানি-মৌসুমী দু’জনেই একই সুরে বলেন, মহান আল্লাহর অসীম রহমতে আমরা সুখী জীবনযাপন করছি। আমাদের দুটি সন্তান আছে। ফারদিন ও ফাইজাকে মানুষ করাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব। আল্লাহ যাতে আমাদের এই সুযোগটা দেন। ওমর সানি-মৌসুমী বলেন, আজ বেশি করে মনে পড়ছে আমাদের মা-বাবার কথা। মৌসুমী বলেন, আজ আমার বাবা নেই, শ্বশুর-শাশুড়ি নেই। আনন্দের এই দিনে ছেলেমেয়ের মাঝেই তাদের খুঁজছি। ওমর সানি বলেন, নির্মম এই বাস্তবতার অপূর্ণতা ছাড়া আমাদের আর কোন দুঃখবোধ নেই। আমরা সবার দোয়া, ভালবাসা, সহযোগিতা ও মহান আল্লাহর রহমত নিয়ে বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দিতে চাই। ওমর সানি-মৌসুমী প্রয়াত পরিচালক দিলীপ সোম পরিচালিত ‘দোলা’ ছবির মাধ্যমে জুটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তারপর তারা একসঙ্গে অসংখ্য ছবিতে কাজ করেন, যার বেশির ভাগই হিট সুপার হিট। এসব ছবির মধ্যে ‘শান্তি চাই’, ‘প্রথম প্রেম’, ‘গরিবের রানী’, ‘আত্মঅহংকার’, ‘তুমি সুন্দর’, ‘লাট সাহেবের মেয়ে’, ‘রূপসী রাজকন্যা’, ‘রঙিন রংবাজ’, ‘শয়তান মানুষ’, ‘মোনাফেক’, ‘গোলাগুলি’, ‘প্রিয় তুমি’, ‘মুক্তির সংগ্রাম’, ‘পাপের শাস্তি’, ‘সুখের স্বর্গ’, ‘ঘাত-প্রতিঘাত’, ‘মিথ্যার অহংকার’, ‘ক্ষুধা’, ‘হারানো প্রেম’, ‘লজ্জা’, ‘কথা দাও’, ‘কালনাগিনীর প্রেম’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
বর্তমানেও ওমর সানি ও মৌসুমী জুটি বেঁধে কাজ করছেন। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত নতুন ছবি ‘ভাল লাগার চেয়ে একটু বেশি’, নতুন পরিচালক দিলশাদুল হক শিমুলের ‘লিডার’সহ বেশ কিছু ছবিতে দেখা যাবে এই তারকা দম্পতিকে। মৌসুমী-ওমর সানি দু’জনেরই চলচ্চিত্রের বয়স
২০ বছর। দীর্ঘ জীবনে তারা দু’জনেই চলচ্চিত্র শিল্পকে সেবা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, যতদিন বাঁচবেন, ততদিন শিল্পের সেবা করে যাবেন।
চলচ্চিত্র জগত
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত বেশিরভাগ ছবিই ব্যবসাসফল হয়। ২০০৩ সালে ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ এবং ২০০৬ সালে মেহের নিগার চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন মৌসুমী। এছাড়াও মৌসুমী একজন ফ্যাশান ডিজাইনার। বসুন্ধরা সিটিতে লিভাইস নামে তার একটি পোশাকের দোকান আছে। তিনি একটি অডিও এ্যালবামও প্রকাশ করেন। তিনি কপোতাক্ষ চলচ্চিত্র নামে একটি প্রোডাকশন হাউস পরিচালনা করছেন।
চলচ্চিত্রের তালিকা
বছর চলচ্চিত্র পরিচালক সহ-শিল্পী
১৯৯৩ কেয়ামত থেকে কেয়ামত সোহানুর রহমান সোহান সালমান শাহ
২০০৯ সাহেব নামের গোলাম রাজু চৌধুরী শাকিব খান
২০১১ কুসুম কুসুম প্রেম মুশফিকুর রহমান গুলজার রিয়াজ, ফেরদৌস
২০১১ দেবদাস চাষী নজরুল ইসলাম শাকিব খান
এছাড়াও তার অভিনীত আরও কিছু চলচ্চিত্র হল
মৌসুমী (১৯৯৩), দোলা (১৯৯৪), আত্মঅহংকার (১৯৯৪), স্নেহ (১৯৯৪), প্রথম প্রেম (১৯৯৪), দেন মহর (১৯৯৪), অন্তরে অন্তরে (১৯৯৪)
বিদ্রোহী বধু (১৯৯৫), মুক্তির সংগ্রাম (১৯৯৫), হারান প্রেম (১৯৯৫), ভাংচুর (১৯৯৫), সাজন (১৯৯৫), শেষ খেলা (১৯৯৫), আত্মত্যাগ (১৯৯৫)
বিশ্ব প্রেমিক (১৯৯৫), গরিবের রানী (১৯৯৬), প্রিয় তুমি (১৯৯৬), রাক্ষস (১৯৯৬), সুখের স্বর্গ (১৯৯৬), আদরের সন্তান (১৯৯৬), সুখের ঘরে দুখের আগুন ( ১৯৯৬), লুট তরাজ (১৯৯৬), আম্মাজান (১৯৯৬), শান্তি চাই (১৯৯৭), অন্ধ ভালবাসা (১৯৯৭), মিথ্যা অহংকার (১৯৯৭), ঘাত প্রতিঘাত (১৯৯৭), সংসারের সুখ দুঃখ (১৯৯৭), প্রিয় শত্রু (১৯৯৭), লাট সাহেবের মেয়ে (১৯৯৭), লজ্জা (১৯৯৭), তুমি সুন্দর (১৯৯৭)
বাঘের বাচ্চা (১৯৯৭), রূপসী রাজকন্যা (১৯৯৮), কথা দাও (১৯৯৮), ভণ্ড বাবা (১৯৯৮), বিপদজনক (২০০১), কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি (২০০৩)
মোল্লা বাড়ির বউ (২০০৫), গোলাপী এখন বিলাতে (২০০৬), একজন সঙ্গে ছিল (২০০৭), তুই যদি আমার হইতি রে (২০০৮),
সম্মাননা
বাংলাদেশের শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনমত ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৌসুমী ও বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ জাদুকর জুয়েল আইচ ইউনিসেফ অ্যাডভোকেটের দায়িত্ব পান। মৌসুমী জাতিও চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন মেখলা আকাশ (২০০২) চলচ্চিত্রের জন্য।
সন্তান যখন ডিরেকশন দেন-
সন্তান যখন এগিয়ে যায় তখন সবথেকে খুশি বাবা-মাই হন। আর যদি ছেলের পরিচালনায় বাবার অভিনয় করার প্রসঙ্গ আসে তখন তো কথাই নেই। হ্যাঁ, বাংলা চলচ্চিত্র অঙ্গনের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা ওমর সানি এবার ছেলের পরিচালনায় টেলিছবি ‘ডেসটিনেশন’এ অভিনয় করছেন।
অবাক হবার কিছু নেই ফারদিনের আগ্রহ নির্মাণে। এর আগে মা মৌসুমীর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। নির্মাণ করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও। এবার তিনি পেশাদার পরিচালক। টেলিছবি ‘ডেসটিনেশন’ নিয়ে মাঠে নেমেছেন। ২ ডিসেম্বর ছিলো দৃশ্যধারণের প্রথম দিন। ওমরসানি ছাড়াও অভিনয় করছেন শহিদুজ্জামান সেলিম, সুজানা জাফর ।
মোশারফ করিম ও রেজা জুঁইয়ের দাম্পত্য কেমন কাটাচ্ছে? পড়তে ক্লিক করুন