স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :
ফলে রাসায়নিক ব্যবহারকারী ৭৮ প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করেছে সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে সংস্থাটি।
মৌসুমি ফলে রাসায়নিক ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতেও ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ২৯ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রতি বছর ওই প্রতিষ্ঠানগুলো আম, কাঁঠাল, লিচুসহ মৌসুমি ফল ফরমালিন, বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে আসছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নওগাঁ জেলার ২৩টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে। এ ছাড়া রাজশাহীতে ১৪, বগুড়ায় ১১, সিরাজগঞ্জে ৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮, সাতক্ষীরায় ৮ এবং পাবনায় ৮ প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে।
প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতিবেদনে উল্লিখিত বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এবং গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে পুনরায় অবহিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতর, স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও বিভাগীয় কমিশনারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুলিপি পাঠানোও হয়েছে।
রাজশাহী : গোয়েন্দা তালিকায় রাজশাহী জেলার ১৪ ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে। তারা হলেন— সদরের সাহেববাজার এলাকার বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আয়নাল হক, আলীমুদ্দিন ফল ভাণ্ডারের মালিক মো. আইনুল, সাহেববাজার কলাপট্টির অমর কলা ভাণ্ডারের মালিক গোপাল চন্দ্র ঘোষ, সাহেববাজার গুড়পট্টি এলাকার মেসার্স জসি এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুল ওয়াদুদ (মিন্টু), বাঘা উপজেলার মণিগ্রাম বাজারের মানিক চান্দের আমের আড়তের মালিক আশরাফুল ইসলাম। পুঠিয়ার চারঘাট রোডের বানেশ্বর বাজারের বিসমিল্লাহ ফল ভাণ্ডারের মালিক ইসমাইল হোসেন, বাবর আলী ফল ভাণ্ডারের মালিক বাবর আলী, মা ফল ভাণ্ডারের মালিক মোসলেম উদ্দিন, ফল ব্যবসায়ী শাহ মোহাম্মদ, মেসার্স বিসমিল্লাহ ফল ভাণ্ডারের মালিক মো. তুষার, বিসমিল্লাহ ফল ভাণ্ডারের মালিক মো. ইসমাইল, ভোলা ফল ভাণ্ডারের মালিক মো. ভোলা, বানেশ্বর বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি আজিজুল বারি মুক্তা ও রাজপাড়া থানার কাঁঠালবাড়ীয়া গোবিন্দপুরের ফল ব্যবসায়ী ওয়াজী হাজী।
নওগাঁ : জেলার ২৩টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীর নাম এসেছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। এরা হলেন— জেলার পোরশা উপজেলার বিষ্ণপুরের আড়তদার মো. আব্দুস সামাদ, ঋষিপাড়া নিত্যপুর এলাকার আম ব্যবসায়ী নিপাই ঋষি, বিষ্ণপুর এলাকার আড়তদার আব্দুল মতিন, কালাইবাড়ী এলাকার আম আড়তদার মো. আরিফ, নিত্যপুরের আম ব্যবসায়ী পোলান ঋষি, নিত্যপুর ঋষিপাড়ার আম ব্যবসায়ী বাবুল ঋষি, কালাইবাড়ী চক বিষ্ণপুরের আড়তদার ওমর আলী, পোরশা হাটখোলার আড়তদার আব্দুস সামাদ, পোরশা সদর থানা এলাকার আড়তদার সিদ্দিক শাহ, সরাইগাছি বাজারের আড়তদার আব্দুল কাদের, সরাইগাছির আম ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী, সরাইগাছি বাজারের কলিমনগরের আড়তদার মো. জাহাঙ্গীর, সরাইগাছি বাজারের আড়তদার সোমনগরের ফরিদ শাহ, সরাইগাছি বাজারের আড়তদার দয়াহারের মো. আনিছ, সাপাহার উপজেলার সাপাহার বাজারের আড়তদার কার্তিক সাহা, সাপাহার বাজারের আড়তদার বিপুল সাহা, সাপাজার পুরাতন কাঁচাবাজারের আড়তদার জাহাঙ্গীর আলম, সাপাহার বাজারের চৌধুরীপাড়ার আড়তদার এমদাদুল হক বাবু চৌধুরী, ইসলামপুরের জুয়েল রানা, শ্যামল সাহা, সাপাহার বাজারের আড়তদার সাহাপাড়া এলাকার দীপক সাহা, ফলপট্টি কাঁচাবাজারের মো. শফিকুল ও বদলগাছি থানা এলাকার ফলের আড়তদার পারসোমবাড়ীর মো. হাসেম।
বগুড়া : ফলে রাসায়নিক মিশ্রণকারী ব্যবসায়ীরা হলেন— জেলার সদর থানার স্টেশন রোডের মেরাজ এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুল হান্নান, স্টেশন রোডের বিসমিল্লাহ ফল ভাণ্ডারের মালিক মতিয়ার রহমান, স্টেশন রোডের মুন এন্টারপ্রাইজের মালিক মনসুর আলম, স্টেশন রোডের তৌফিক ফল ভাণ্ডারের মালিক নাহিদ হাসান শাহিন, স্টেশন রোডের জ্যোতি ফল ভাণ্ডারের মালিক মিজানুর রহমান, স্টেশন রোডের আশামনি ফল ভাণ্ডারের মালিক আফতাব হোসেন, স্টেশন রোডের মৌ ট্রেডার্সের মালিক আব্দুল হান্নান, সদর থানার চেলোপাড়ার বেলাল, মো. হান্নান, চেলোপাড়ার ফল ব্যবসায়ী বাবলু ও শিবগঞ্জ থানার মোকামতলার আব্দুস সালাম।
পাবনা : জেলায় পাবনা শহরের বড় বাজার এলাকার আইনুল মার্কেটের মো. আব্দুল গফুর, বড়বাজার কলাপট্টির মো. মোতালেব, গোপাল চন্দ্র, মো. আব্দুল হান্নান, পাবনা শহরের আব্দুল হামিদ রোডের রমজান ফল ভাণ্ডারের মালিক রমজান আলী, মতিন ভাণ্ডারের মালিক মো. আ. মতিন, ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের পাশেরটেবুনিয়া বাজারের মো. ফল ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন ও মো. ইসলাম।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ সদরের এস এস রোডের মো. জামাল হোসেন, মো. মজিবর শেখ, সদর থানার মিরপুরের মো. শহিদুল ইসলাম, সদর থানার বহিরগোলা এলাকার মো. সোহবার শেখ, ভাঙ্গাবাড়ী এলাকার হেলাল শেখ ও সদর থানার সিরাজী সড়কের সাহেব আলী।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের কানসার্ট বাজারের মেসার্স সাথী ফল ভাণ্ডারের মালিক মো. কামাল, মেসার্স ইমরান ট্রেডার্সের মালিক মো. ইমরান, মেসার্স লিপি এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সজিব ফল ভাণ্ডার, ধাইনগরের নাককাটিতলার মতিন ফলের আড়তের মালিক মো. আব্দুল মতিন, জেলা শহরের রেল স্টেশনের পাশের বাজারের মো. কাজেম আলী, মো. রফিক ও কলার আড়তদার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ফলে রাসায়নিক ব্যবহার করছেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
সাতক্ষীরা : জেলার সুলতানপুর বড় বাজারের মেসার্স নাজিম ফল ভাণ্ডারের মালিক নাজিমউদ্দিন, মল্লিক ভাণ্ডারের মো. রহিম বাবু, মোড়ল ভাণ্ডারের মো. রফিকুল ইসলাম, জয়েন্ট ফল ভাণ্ডারের রুহুল কুদ্দুস, মেসার্স আশা ভাণ্ডারের কবিরুল ইসলাম, রওশন আলী ফল ভাণ্ডারের নূর আলী ময়না, মেসার্স শারমিন ট্রেডার্সের শেখ ইয়াসিন আলী ও মানিক ফল ভাণ্ডারের মালিক মতিয়ার রহমান।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, এ সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা অপরিপক্ক ফল পাকানোর জন্য রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে। গাছে থাকা অবস্থায় আমের ছত্রাক, আমের পচন রোধ ও দীর্ঘদিন গাছে আম ধরে রাখার জন্যও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে। এ ছাড়া অনেক সময় ফরমালিন ব্যবহার করে। এগুলো সবই মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ফলমূল, শাক-সবজি, মাছ, দুধ ইত্যাদি খাবারে বিভিন্ন রাসায়নিক মিশ্রণের ফলে দিন দিন স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। প্রতিবেদনে যারা এ কুকর্মে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদন শেষে বেশ কয়েকটি সুপারিশও উত্থাপন করা হয়। সেগুলো হল— ভ্রাম্যমাণ আদালত ও বিএসটিআইয়ের মাধ্যমে বাগান ও আড়ত তদারকি করা এবং অভিযান চালানো। খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিক, কার্বাইড ও অন্যান্য ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগের ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও মিডিয়ায় বড় পরিসরে প্রচারণা চালানো। লাইসেন্সবিহীন কোনো ব্যক্তি যেন ফরমালিক বিক্রি করতে না পারে এই বিষয়টি নিশ্চিত করা। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মনিটরিং ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক ড. মো. আমিনুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে অনেকদূর এগিয়েছি।’
রাজশাহী জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘ইতোমধ্যে ৩৬টি সচেনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রম চালানো হয়েছে। যারা ফলে রাসায়নিক ব্যবহার করছে তাদের কাছ থেকে ফল না কিনতে জনসাধারণকে সতর্ক করা হয়েছে, এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ বিষয়ে বলেন, ‘ফলে রাসায়নিক ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ফরমালিনসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের বিষয়েও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
আপডেট : বাংলাদেশ সময় : ০৬:৩০ অপরাহ্ন, ২৫ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার ১০ জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম–এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur