চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে পিকনিকে এসে সনিআখড়া এলাকার নাভারন স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী টুটুল হোসেন নয়ন ( (১৬) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থীর মর্মন্তিক মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) বিকেল ৩টার সময় মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রের মেঘনা নদীতে এ দূর্ঘটনা ঘটে। জানাযায়, সে তিন সহপাঠিদের সাথে নদীতে গোসল করতে নামলে অন্য দুই সহপাঠি নদীতে ডুব দিয়ে উঠতে পারলেও টুটুল হোসেন নয়ন আর তীরে উঠতে পারেনি। সে পারিনতে ডুবে মারার যায়।
নবারুন স্কুল এন্ড কলেজের স্কুলের সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার ময়না জানান, বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) দুপুরের দিকে তারা তাদের স্কুলের মোট ১৪০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে তিশা বাস যোগে মতলবের মতলব উত্তরের মোহনপুরের পর্যটন কেন্দ্রে পিকনিকে আসেন। বিকেল ৩ টার সময় নিহত টুটুল হোসেন নয়ন (১৬) সহ আরো দুজন শিক্ষার্থী পর্যটনের মেঘনা নদীতে গোসল করতে নামেন। সাথের দুজন উঠতে পারলেও টুটুল আর ফিরে আসেনি। পরে প্রায় তিন ঘন্টা যাবত খুঁজে না পেয়ে নদীতে অনেক খোঁজাখুজি করে না পেয়ে মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি ও চাঁদপুর ডুবরিকে খবর দেন। পরে সন্ধ্যার সময় ডুবরি দল মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রের মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করে রাত ৭টার সময় মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা.মোহাম্মদ হাসিবুল ইসলাম তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানাযায়,নবারুন স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী টুটুল হোসেন নয়ন ঢাকা কদমতলী মদিনাবাগ এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে। জানা গেছে তার জন্মস্থান গুলপুর,মেঘনা, কুমিল্লা জেলায়। বর্তমানে সে কদমতলী থানার মদিনাবাগ এলাকার আঃ হালিম মজুমদারের বাসায় ভাড়া থাকেন। তার পিতা আব্দুল মান্নান তেজগাঁও থানায় কনস্টেবল পদে চাকরি করেন। ছেলেটির বাবা একজন পুলিশ কর্মকর্তা । মাতা রিনা বেগম, সে বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে । তারা শিক্ষাসফরে এসেছিলো।
সহপাঠি শাহরিয়ার নাজিম মুন্না বলেন, সে আমার প্রিয় বন্ধু ছিল। তার এভাবে মৃত্যু হবে তা মানতে বড় কষ্ট হচ্ছে। পানিতে ডুবে নিহত টুটুল হোসেনের নয়নের বাবা আনোয়ার হোসেন জানান তাকে ছোট্র শিশু অবস্থায় তার মাকে আমি বিয়ে করি। তারপর থেকে আমি তাকে অনেক আদর করে লালন পালন করি। আমার বাসারায়েরবাগ কদমতলি মদিনাবাগ এলাকায় তার বাসা।সে নভারুন স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র। গতকাল বৃহস্পতিবার সে তার স্কুলের সাথে মতলবের মোহনপুর পর্যটনে পিকনিকে যায়। সে সাঁতার জানতো না। শুনেছি তিন বন্ধুর সাথে নদীতে গোসল করতে নামে। এরপর সে উঠতে পারেনি। মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আমাকে তার মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছে। রাত ২ টার সময় মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি থেকে আমি লাষ গ্রহন করি। এখন তাকে তার মায়ের বাপের বাড়ি অর্থার তার নানার বাড়ি মেঘনা থানাধীন গোবিন্দপুর কবরস্থানে। এব্যাপারে মতলবের মোহনপুর নৌ-পলিশ ফাঁড়ি থানায় একটি অপমৃত্যু সংক্রান্ত ডায়েরী করা হয়েছে ।
নাভারন স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মোঃ আজিজুল হক আসলে আমরা এসেছিলাম আনন্দ করার জন্য, কিন্তু এই ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত।লাশ বুঝে নেওয়ার জনয় তার অভিভাবকদের জানানো হয়েছে।
এদিকে শনির আখড়া নবারুণ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে শিক্ষা সফরে আসা এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে নয়ন নামে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীর পানিতে ডুবে মৃত্যুতে স্কুলের শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও পরিবারে বইছে শোকের ছায়া।
মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর নৌ-পলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ একেএম কাউছার বলেন, মোহনপুরের পর্যটনে পিকনিকে এসে সহপাঠি তিন বন্ধুদের সাথে বিকেল ৩ টার সময় নদীতে গোসল করতে নেমে তার খোঁজ পাচ্ছিলনা। সে সাঁতার জানতো না। বিসয়টি আমাদেরকে জানালে আমরা নৌ-পুলিশ ও চাঁদপুর ডুবরি দল উদ্ধার অভিযান চালিয়ে সন্ধ্যার সময় তাকে উদ্ধার করি। রাত প্রায় ২টার সময় তার বাবা-মা আসলে তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করি। এ বিষয়ে নিহত নয়নের বাবা আনোয়ার নৌ-পুলিশ ফাঁড়িতে পানিতে ডুবে মারা গেছে এ সংক্রান্ত একটি অপমৃত্যু সংক্রান্ত জিডি করেছেন।
নিজের ফেইসবুক আইডতে মোহনপুর পর্যটনে পিকনিকে আসা তার সহপাঠি মোঃ আনিসুর রহমান খান এক আবেকঘন স্ট্যাডাজ দেন। যা তুলে ধরা হলো- বেশকিছু দিন পর আজ পরিবারকে নিয়ে একটু বিনোদনের জন্য মোহনপুর পর্যটন কেদ্রে, মতলব উত্তর, চাঁদপুর এ গিয়েছিলাম। অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি তুলছিলাম খুব আনন্দ করছিলাম। আর ভাবছিলাম অনেক দিন ধরে ফেসবুকে কোন ছবি পোস্ট দেইনা কখন ছবিগুলো পোস্ট দিব। কিন্তু ছবিগুলো আর ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হলো না তার পরিবর্তে পোস্ট দেওয়া হলো একটি হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ছবি। শনির আখড়া নবারুণ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে শিক্ষা সফরে আসা এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে নয়ন নামে একজন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নদীতে গোসল করতে নেমে পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় তিন ঘন্টা যাবত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নৌ পুলিশ, লোকাল পুলিশের উপস্থিতিতে ডুবুরিরা খুজতে ছিল। অধীর আগ্রহে আমরা সহ শত শত লোক ঘটনার দিকে তাকিয়ে ছিল। ডুবুরিরা ছেলেটির মৃত্যু দেহ যখন পেয়ে উপরে তুলে নিয়ে আসছিল মুহুর্তের মধ্যে গোটা পর্যটনকেন্দ্রে শোকের ছায়া নেমে আসে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে প্রায় প্রতিটি মানুষ। নিজের চোখের পানি ধরে রাখা ও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থল থেকে জানা গেছে ছেলেটির বাবা একজন পুলিশ কর্মকর্তা । বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে সে।
স্টাফ করেসপন্ডেট, ১৮ মার্চ ২০২২