নতুন করে নির্মাণাধীন ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দের মধ্যে চাঁদপুর মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর আলী আহম্মদ মিয়া বহুমূখী মহাবিদ্যারয় প্রাঙ্গণে উপকূলীয় ও ঘুর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় বহুমূখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হয়েছে।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) দুপরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এমপি এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এটি নির্মাণ করা হচ্ছে মোহনপুর আলী আহমদ মিয়া বহুমুখী মহাবিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে।
এসময় মন্ত্রী বলেন, দেশে প্রায় চার হাজার আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে যেখানে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, বন্যাসহ যে কোন দুর্যোগে মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। এর বাইরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী ও বেসরকারি অবকাঠামোতেও মানুষ দুর্যোগকালে আশ্রয়গ্রহণ করে থাকে। উপকূলীয় জলোচ্ছাসের জন্য এক সময় ১৩টি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হতো। এখন এর পরিধি ১৯টিতে দাঁড়িয়েছে।
মায়া চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ৩২টি জেলায় সংগঠিত বন্যায় উত্তরাঞ্চলে আশ্রয়কেন্দের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল মনে হলেও কেউই আশ্রয়হীনভাবে খোলা আকাশের নিচে ছিলনা।
তিনি বলেন সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃত্যুর হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। উত্তরাঞ্চল ও হাওর এলাকায় পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ নির্মাণ নির্মাণ করা হবে বলে মায়া চৌধুরী উল্লেখ করেন। নতুন আশ্রয়কেন্দ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি বেসরকারি অবকাঠামো মিলে নির্ধারিত সময়ে আশ্রয়কেন্দের লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বন্যাপ্রবণ জেলার সংখ্যাও ৩২টিতে উপনীত হয়েছে। এসব বিবেচনায় দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় আরও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কমপ্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম (সিডিএমপি) এর গবেষনায় টেকসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য সাড়ে ছয় হাজার আশ্রয়ন্দ্রের কথা বলা হয়েছে। এ গবেষণার আলোকে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পণায় সাড়ে ছয় হাজার আশ্রয়কেন্দ্রে উপনীত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২৫৫টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র করেছে। আরও চার শতাধিক আশ্রয়কেন্দ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ নির্মাণ করেছে ১০০টি। বর্তমানে আরও ২২০টি আশ্রয়কেন্দ নির্মাণ কাজ চলছে। মধ্যপ্রাচ্যের জনৈক ধনাঢ্য ব্যক্তির সহায়তায়ও উপকূলীয় এলাকায় দু’শ এর মত আশ্রয়কেন্দনির্মাণ করা হয়। মতলব উত্তর উপজেলায় ৬টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে উপকূল ও বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোতে মুজিব কিল্লা নির্মাণ করা হয়েছিল যেখানে মানুষ উপকূলীয় জলোচ্ছাস, সাইক্লোন বা বন্যার সময় গৃহপালিত পশুপাখিসহ আশ্রয় গ্রহণ করতো। কালের প্রবাহে এসব মুজিব কিল্লা হারিয়ে গেছে। যে প্রয়োজনীয়তা থেকে মুজিব কিল্লা নির্মাণ করা হয়েছিল সে একই প্রয়োজনীয়তা এখনও বিদ্যমান।
তাই টেকসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য পুরাতন ও নতুন মিলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় চার শতাধিক মুজিব কিল্লা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের সময় মেঘনা নদীর চর এলাকার মানুষদের আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ রিয়াজ আহমেদ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া এ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় আ’লীগ নেতা সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু,মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ, ইউএনও শারমিন আক্তার, ত্রাণমন্ত্রীর পিআরও মোঃ ওমর ফারুক, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম হাওলাদার, ছেংগারচর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব রফিকুল আলম জজ,বীর মুুিক্তযোদ্ধা মন্ত্রীর পিএস তমিজ উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব,জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ মিনহাজ উদ্দিন খান, উপজেলা পিআইও মোঃ বেলাল হোসেন মজুমদার, মোহনপুর আলী আহম্মদ মিয়া বহুমূখী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এটিএম ফেরদৌস আহম্মেদ,উপজেলা আ’লীগ নেতা মোঃ বোরহান উদ্দিন মিয়া, কাজী মিজানুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি দেওয়ান মোঃ জহির,সাধারণ সম্পাদক কাজী শরীফ হোসেন, উপজেলা কমিউিনিটি পুলিশিং কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক হাসান মোর্শেদ আহার চৌধুরী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম ডাবলু, সদস্য সচিব অ্যাড.আক্তারুজ্জামান। এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম এমপি বলেন এবছরের উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় মোরায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে হলেও সরকারের ব্যাপক পূর্বপ্রস্তুতির কারনে জানমালের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ লোককে একদিনের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ আনতে হয়েছিল।
প্রতিবেদক- খানা মোহাম্মদ কামাল
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১ : ৪৩ পিএম, ১০ নভেম্বর, ২০১৭ শুক্রবার
ডিএইচ