চাঁদপুরে মা ইলিশ রক্ষায় ৬৪ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ৪৪৫ অভিযান ও ৭৭ মামলায় ১১৯ জনকে জেল
আবদুল গনি, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
সারাদেশব্যাপি নদ-নদীতে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে মা ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর নৌ-সীমানার এলাকায় নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ২২ দিনের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গত ৪ অক্টোবর হতে ২৪ অক্টোবর ৫টা পর্যন্ত দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদপুর নৌ-সীমানায় টাক্সফোর্স কর্তৃক অভিযান ৪৪৫, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ৬৪ ও ৭৭ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় অভিযানের তথ্য প্রতিবেদন আকারে জেলা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। আগামিকাল ২৫ অক্টোবর এ অভিযান শেষ হচ্ছে । এ ছাড়াও ৩২৩ টি মাছ ঘাট, ১২৯২ বার মাছের আড়ৎ , ২১ টি অবতরণ কেন্দ্র ও ৬৩৮ বার স্থানীয় বাজার জেলা টাস্কপোর্স কর্তৃক পরিদর্শন করা হয়েছে। ১.০৯৫ মে.টন ইলিশ জব্দ করা হয়েছে । এ ছাড়াও ৫ লাখ ৭১ হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত জালের মূল্য ১ কোটি ৩৭ লাখ এবং আজ পর্যন্ত ১১৯ জন জেলেকে নদীতে মাছ ধরার অপরাধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেল-হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে প্রেরিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে ।
জেলা মৎস্য অফিস কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে-৪ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত চাঁদপুরের মেঘনা উপকূলীয় সদর, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ ও হাইমচর উপজেলায় টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করে এবং এ অভিযান চলমান থাকবে বলে চাঁদপুর জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে।
৩ অক্টোবর চাঁদপুর মতলব উত্তরে ষাটনল ইউনিয়নের বাবুর বাজারের গণসচেতনাবৃদ্ধির লক্ষ্যে এ সভায় জেলেদের উদ্দেশ্যে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘‘ ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বাহিনী ২৪ ঘণ্টাই নদীতে টহলে থাকবে। আইন ভঙ্গকারীদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। মা ইলিশ রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ কঠোরতা অবলম্বন করবো। সকল বাহিনী প্রস্তÍুুত রয়েছে, এবং নিরবচ্ছিন্ন অভিযান চলবে।
আইন অমান্য করলে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ধরা হলে ভবিষ্যতে মাছের উৎপাদন মারাত্মক ভাবে ক্ষতি হয়। মা ইলিশ রক্ষায় সরকার ২২ দিন ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুদ বেচাকেনা ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আজ যদি আমরা মা ইলিশ রক্ষা করি, আগামিতে নদীতে আরো বেশি মাছ পাওয়া যাবে এবং আপনারাই উপকৃত হবেন। সরকার ও প্রশাসন এ সময়ে আপনাদের পাশে থাকবে। আমরা সকলে প্রতিজ্ঞা করি, নিষেধাজ্ঞার সময় যেন মা ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকি।’’
চাঁদপুরে ৪৫ হাজার জেলেকে খাদ্য সহায়তা প্রদান
মা ইলিশ সংরক্ষণে বিরত থাকা জেলেদের সহায়তায় চাঁদপুর জেলায় ৪৫ হাজার ৬শ ১৫ জন নিবন্ধিত জেলেকে মানবিক খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়েছে। ৮ অক্টোবর জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে দ্রুত সময়ে এ খাদ্য সহায়তা বিতরণ সম্পন্ন করা হয়েছে।
জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়- এ বছর ৪৩টি পৌরসভা ও ইউনিয়নের ৪৫ হাজার ৬ শ ১৫ জন জেলের জন্য ১ হাজার ১৪০ মে. টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব চাল ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত পৌঁছাতে পরিবহন খরচ বাবদ বরাদ্দ করা হয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার ।
প্রসঙ্গত, মেঘনা নদীতে এ সময়ের নিষেধাজ্ঞার সময়কালে মাছ ধরা, পরিবহন, সংরক্ষণ ও বিক্রি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। অভিযানের সময় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা, কারাদন্ড ও জাল-পোড়ানোর মতো ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রসঙ্গত-জেলার ৪৫ হাজার ৬শ ১৫ নিবন্ধিত জেলে পদ্মা-মেঘনা নদীর প্রায় ৭০ কি.মি.এলাকা জুড়ে জেলে রয়েছে। ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকা জেলেদের ২৫ কেজি করে চাল দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে।
২৪ অক্টোবর ২০২৫
এজি