মনিরুজ্জামান পাটওয়ারী রহ. ছিলেন হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের মোতওয়াল্লী-সমাজহিতৈষী ব্যাক্তি

মনিরুজ্জামান পাটওয়ারী রহ. ছিলেন হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের মোতওয়াল্লী । পিতা- মরহুম আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) এবং মাতা মোসাম্মাৎ ফজিলতুন নেছা। তিনি ১৯২৫ সালে হাজীগঞ্জের মকিমাবাদ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলীম পবিরারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন দ্বীনি শিক্ষায় একজন আদর্শ ব্যাক্তি। তারঁ পিতার নাম মরহুম আহমাদ আলী পাটওয়ারী রহ.।

তৎকালীন সময়ে মনিরুজ্জামান পাটওয়ারী হাজীগঞ্জ বাজারের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি পিতার প্রতিষ্ঠিত হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্সের ১৯৬৪ সাাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ২য় মোতাওয়াল্লী হিসেবে সুদীর্ঘকাল দায়িত্ব পালন করেন।

নিজে মোতওয়াল্লী পদে থেকে তাঁর তৃতীয় পুত্র মো.মনিরুজ্জামান পাটওয়ারীকে মোতাওয়াল্লী পদে দায়িত্ব পালনের জন্য রেজিষ্টার্ড ‘নিয়োগ পত্র’ প্রদান করেন। ঐ নিয়োগ পত্রে ওয়াকীফ আহমাদ আলী পাটওয়ারী রহ. উল্লেখ করেন ” আমার পুত্র উক্ত মোতওয়াল্লী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান পাটওয়ারীর অভ্যন্তরে, তাহার পুত্রগণের মধ্যে, যিনি ধার্মিক জ্ঞানী বিদ্যান সৎভাবাপন্ন ন্যায় পরায়ণ হবেন, তিনিকে সে সময় মোতওয়াল্লী নিযুক্ত করিবে।”

অত্র এস্টেটের মোতওয়াল্লী নিয়োগের বিষয়ে যেন কোনো ধরনের জটিলতা সৃষ্টি না হয় এবং তাঁর কষ্টার্জিত ওয়াক্ফ্ফ এস্টেট আল্লাহর ঘর মসজিদের সুনাম সুখ্যাতি যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। সে লক্ষ্যে মোতওয়াল্লী নিয়োগের নীতি হিসাবে দালিলিক ভাবে তিনি ‘নজির’ প্রতিষ্ঠিত করে যান।

মনিরুজ্জামান পাটওয়ারী মোতাওয়াল্লী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর পিতার পরামর্শ মোতাবেক মসজিদের তৃতীয় অংশে দোতলা নির্মাণসহ গম্বুজের অসমাপ্ত অংশের কাজ চালিয়ে যান। তার দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় ৪ বছর পর ১৯৬৮ সালে আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) ইহলোক ত্যাগ করেন। তিনি শত বছরের ঊর্ধ্ব কাল আয়ু লাভ করেন।

মোতাওয়াল্লী মনিরুজ্জামান পাটওয়ারী (রহ.) গম্বুজ এবং মিনারার টপের উঁচু ফানুষের নক্সার কাজের পাশাপাশি ভাড়াঘরসমূহের উন্নয়নের কাজে মনোনিবেশ করেন। অজুর জন্য চাপ কলে পানি উঠানোর পাশাপাশি তিনি এস্টেটের আয় বৃদ্ধির জন্য মার্কেটের কাঁচাঘর সমূহের কিছু অংশের মধ্যে সাধ্যমত একতলা দালানে রূপান্তরিত করেন এবং এতে করে আরও নতুন ভাড়াটিয়া বসানো সম্ভব হয়।

মসজিদের হুজরা খানার পেছনে ইংরেজি ইউ আকারে একটি – মার্কেট তৈরি করে ভাড়াটিয়া বসান। তিনি অজুর জন্য চাপ কলে পা চেপে, চেপে পানি উঠানোর পাশাপাশি পাম্প মেশিনের সাহায্যে ট্যাংকিতে পানি জমা করে বিভিন্ন স্থানে অজুর পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। ইমাম সাহেবের বাসা ও হেফজখানা দোতলা করেন।

তিনি মহিলা জিয়ারতকারীগণের জন্য আলাদা নামাজের স্থানের ব্যবস্থা করেন। মসজিদের তৃতীয় অংশের দো’তলার ছাদ ব্যতীত অধিকাংশ কাজ শেষ করেন। তাছাড়া মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বে সিএন্ডবি রাস্থা সংলগ্ন অংশে মসজিদে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পথে শাহী গেট নির্মাণ করেন।

এছাড়া তিনি পিতা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সিনিয়র মাদ্রাসার স্থান সম্প্রসারণের লক্ষ্যে খালের পড়ে এস্টেট মালিকানাধীন নিজস্ব জমির উপর দেয়াল ও ভীম দিয়ে উত্তর দিকে মাদ্রাসা সম্প্রসারণ করেন। স্ত্রী, পুত্র, কন্যা এবং বহু গুণগ্রাহী রেখে মনিরুজ্জামান পাটওয়ারী ১৯ আগস্ট সোমবার ১৯৮৫ সালে রাত ১১ টার দিকে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্ন—রাজেউন)।

তিনি ষাট বছরের ঊর্ধ্বকাল যাবৎ আয়ু লাভ করেন। আল্লাহ তাঁকে ধর্মীয় এবং মানব কল্যাণ মূলক কার্যক্রম কবুল করে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুক্। —–আমিন।

তথ্যসূত্র : হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্সের স্মারকগ্রন্থ ।

সম্পাদনা – আবদুল গনি
৬ আগস্ট ২০২৫
এজি