দেশের সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৯ লাখ ৯২ হাজার ১৫৮টি মোটরসাইকেল। এ দ্রুতযানটি কেনার পর কোনও ধরনের প্রক্রিয়া না থাকায় যে কেউ যেকোনও মুহূর্তে নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) করতে পারছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে অনেক অদক্ষ চালক,তাতে বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যাও; যা সড়ককে করে তুলছে আতঙ্কময়।
জানা গেছে -ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ৩৫৫টি করে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন দেয়া হচ্ছে। গত ৯ মাসে প্রতিষ্ঠানটি ৯৭ হাজার ১৪২টি মোটরসাইকেলের নিবন্ধন দিয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন (বিআরটিএ) কর্তৃপক্ষের চলতি বছরের ৯ মাসের পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, ২০২১ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৯৯ হাজার ৮১০টি মোটরসাইকেলের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসেই এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৭ হাজার ১৪২-তে। দু’ বছরের ব্যবধানে দেখা যায়, প্রতিনিয়তই বাড়ছে মোটরসাইকেলের চাহিদা।
যদিও চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে মোটরসাইকেল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে গ্রাহকের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছিল বিআরটিএ। তবে সেই সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাপে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে কর্তৃপক্ষ। এবার আবারও বেঁধে দেওয়া হয় নতুন সময়সীমা।
আগামি ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত যে কেউ শুধু লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে মোটরসাইকেল নিবন্ধন করতে পারবে। ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেলের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার কাজ করা সম্ভব হবে না। যদিও এ বিষয়টি নিয়ে নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা বিআরটিএ, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।
পরিসংখ্যানে আরও জানা যায়, শুধু মোটরসাইকেল নয়, ২০টি ক্রাইটেরিয়ায় বিআরটিএ যে ধরনের নিবন্ধন দিচ্ছে, সব ধরনের পরিবহনের গাড়ির সংখ্যা বেড়েই চলেছে রাজধানীতে। ২০২১ সালে প্রাইভেটকারের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল ১৪ হাজার ৩২১টি।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ হাজার ৯৮টি প্রাইভেট কারের নিবন্ধন দেয়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গত ৯ মাসে মাইক্রোবাসের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ২৫৮টি। গত বছর যেখানে দেওয়া হয়েছিল ৪ হাজার ৪৫৫টি। গত ছয় মাসে ৭ হাজার ৪১০টি জিপের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে, ২০২১ সালে যার সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৯২৭টি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে তারা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। গণপরিবহন সহজ, সাশ্রয়ী ও উন্নত করে, যানজট কমিয়ে মোটরসাইকেলে নিরুৎসাহিত করা অতিজরুরি হয়ে পড়েছে। অদক্ষ চালক, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার কারণে বেড়েই চলছে দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান।’
মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনের জন্য চালকের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক,এ বিষয়ের জন্য বিআরটিএর নির্দেশনা থাকার পরও নির্ধারিত সময়ে তারা কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এটি বিআরটিএ’র ব্যর্থতা।
এমনটা উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক ড.হাদিউজ্জামান বলেন,‘নতুন করে ১৫ ডিসেম্বর যে নির্ধারিত সময় দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নে কতটুকু সক্ষম হবে,তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।’ সময় বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিআরটিএ একটি চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক রোড অ্যান্ড সেফটি শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মোটরসাইকেলের নিবন্ধনের জন্য চালকের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করার জন্য ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
এরপর আর কোনও সময় বাড়ানো হবে না। এটি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ নতুন নির্ধারিত সময় থেকে এটি বাস্তবায়িত হবে বলে আসা করছেন তিনি।
২৮ অক্টোবর ২০২২
এজি