ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনাকে হৃদয়বিদারক ও বাজে রকমের দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে শুধু শিক্ষার্থী নয় শিক্ষকদেরও মানসিক কাউন্সেলিং দরকার বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ আদালতের নজরে আনলে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন।
আইনজীবী ব্যারিস্টার সাইয়েদুল হক সুমন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত অরিত্রী অধিকারীর (১৫) আত্মহত্যার প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে বলেন, “আমরা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা প্রার্থণা করছি।”
তখন আদালত বলেন, অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনা খুবই হৃদয়বিদারক।
এ সময় শিক্ষার্থীর সামনে মা-বাবাকে অপমানের ঘটনাকে বাজে রকমের দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেন আদালত। আদালত আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, “আপনি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট নিয়ে আসেন। আমরা এ বিষয়ে আগামীকাল (বুধবার) শুনানি করে বিষয়টি দেখব।”
এদিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বেইলি রোড শাখার ক্লাস ও পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (৫ ডিসেম্বর) ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক ও গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি মুশতারি সুলতানা এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিন সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ শুরু করে। সহপাঠীর আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে বেইলি রোড শাখার গেটের বাইরে বসে পড়ে তারা। এ সময় তাদের হাতে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড ছিল। আর মুখে ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ’ স্লোগান।
এদিকে ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর (১৫) আত্মহত্যার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্ত এবং তাদের এমপিও বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’র অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুধবার (৫ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।
অভিযুক্ত অপর দুই শিক্ষক হলেন, প্রভাতী শাখার প্রধান জিন্নাত আরা এবং শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনা।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ভিকারুননেসা স্কুলের দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটির সব ধরণের অনিয়ম উঠে আসছে। অভিভাবকরাও নানা অনিয়মের কথা বলেছেন। ঐ ঘটনার জন্য দায়ী ৩ জনের নাম এসেছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করেছে কমিটি। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে তাদের বরখাস্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, রোববার (২ ডিসেম্বর) পরীক্ষায় নকল করে ধরা পড়েন অরিত্রী অধিকারী নামে ভিকারুননিসার নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। সোমবার দুপুরে ঢাকার শান্তিনগরের বাসায় নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে সে।
স্বজনদের দাবি, ওই ঘটনার পর অরিত্রীর বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে ‘অপমান করেছিলেন’ অধ্যক্ষ। সেই কারণে ওই কিশোরী আত্মহত্যা করে।
বার্তা কক্ষ
৫ ডিসেম্বর, ২০১৮
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur