‘মেস ভাড়া দিতে পুলিশের অনুমতি লাগবে’

এখন থেকে মেস ভাড়া দিতে হলে পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কারা মেসে থাকবে তাও ঠিক করে দেবে পুলিশ। এমন তথ্য জানিয়েছেন ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলতাফ হোসেন।

পুলিশ সুপার আলতাফ দাবি করেন, তাঁর জেলায় জঙ্গিদের কোনো আস্তানা নেই। এমনকি জেলা শহরের সোনালীপাড়ার (খোন্দকার পাড়া) অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট কাওছার আলীর বাড়িতে নিহত জঙ্গি নিবরাস ইসলাম ও তার কথিত খালাতো ভাই আবির রহমান ছিল এমন কোনো তথ্যও নেই তাঁদের কাছে। বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে এই কথা জানান এসপি আলতাফ হোসেন।

সাক্ষাৎকারে এসপি ঝিনাইদহের কাওছার আলীর মেস থেকে ঢাকার গুলশানে হামলা চালানোর বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, যেদিন ঢাকায় হামলার ঘটনা ঘটেছে সে দিনই ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালীচরনপুর ইউনিয়নের মধুপুর-কাষ্টসাগরা গ্রামের রাধা-মদন-গোপাল মঠের সেবায়েত শ্যামল নন্দ দাস খুন হন। একই দিনে নিবরাস ইসলাম দুই ঘটনায় অংশ নিয়েছে এমন খবর বিভ্রান্তিকর।

পুলিশের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, গুলশান হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিরা এখানে অবস্থান করেছে এমন কোনো তথ্য প্রমাণ আজো আমরা পায়নি। তবে বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

গণমাধ্যমে প্রচার করা খবরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার জন্য প্রমাণহীন তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে।’

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলায় নিহত জঙ্গি আবির রহমান ঝিনাইদহে ছিল না এমন দাবি করে পুলিশ সুপার বলেন, ‘বিষয়টি সাজানো।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, ‘পাশেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়-যে কারণে ছাত্রশিবিরের আধিপত্য এখানে বেশি। বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে ডাটাব্যাজ তৈরি করা হচ্ছে।

এখন থেকে মেস ভাড়া দিতে হলে পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কারা মেসে থাকবে তাও ঠিক করে দেবে পুলিশ।’

জেলা শহরের আলোচিত সোনালীপাড়ায় (খোন্দকারপাড়া) অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট কাওছার আলীসহ পাঁচজন এখন কোথায় আছেন এমন প্রশ্ন করা হলে আলতাফ হোসেন বলেন, বিষয়টি জানা নেই তাঁর। বাড়িটিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের খবরও জানেন না বলেও দাবি করেন ঝিনাইদহ পুলিশের সর্বোচ্চ এই কর্মকর্তা।

এসপি আলতাফ হোসেন বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এ জেলায় এক সময় চরমপন্থীদের অভয়ারণ্য ছিল। এখন নেই। ২০১৩-১৪ সালে জামায়াত-শিবির মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।

এখন পরিবেশ ভালো দাবি করে এসপি বলেন, চলতি বছরের এ পর্যন্ত জেলায় চারটি আলোচিত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সব ঘটনা আন্তরিকতার সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।

এদিকে পুলিশ সুপার ঝিনাইদহে দু’জন জঙ্গী থাকার খবর অস্বীকার করলেও যে বাড়িতে নিবরাস ও আবির রহমান ছদ্ম নামে ছিলেন তারা ছবি দেখে নিশ্চিত হয়ে সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন।

এ ছাড়া সোনালীপাড়ার যুবক সমাজ যারা নিবরাস ইসলামের সাথে ফুটবল খেলেছেন তারও বিষয়টি স্বীকার করেন। তারা নিবরাসকে সাঈদ ও আবিরকে শাওন বলে জানতেন। মুলত তাদের বরাত দিয়ে মিডিয়ায় এ খবর প্রচারিত হয়।

তাছাড়া সোনালীপাড়ার ভাড়া বাসার মালিকের স্ত্রী বিলকিস নাহার এ ঘটনার পর তার স্বামী ও দুই সন্তানসহ ৫ জনতে তুলে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে যওয়ার কথাও গনমাধ্যমকে জানান। আর গন মাধ্যমে ছাত্রাবাসে জঙ্গী থাকার খবর প্রকাশিত হওয়ায় ঝিনাইদহের প্রায় ২০০ ছাত্রবাসে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে।

হয়রানীর ভয়ে অনেক ছাত্র মেস ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বলেও জানা গেছে। বাড়ির কাছ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও ঝিনাইদহ শহরে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হওয়ায় শহরের ছাত্রাবাসে থেকে কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী পড়ালেখা করছেন। এখন এ সব ছাত্রাবাসে নিয়মিত পুলিশ নজরদারী করছে।

রাতে ঝিনাইদহ শহরে ব্যাপক হারে পুলিশ টহল দিচ্ছে।

চাঁদপুর টাইমস ঝিনাইদহ করেসপন্ডেন্ট : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৬:০০ এএম, ১৮ জুলাই ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ

Share