কচুয়া

মেশিনের যুগে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ‘হাতে ভাজা মুড়ি’

মুড়ি ভাজার কারখানা কচুয়া উপজেলার কাদলা গ্রাম। মুড়ি ভাজার কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন ওই গ্রামের পালবাড়ির বাসিন্দারা। এ যেন কারিগরদের ধম নেয়ারও সময় নেই।

১৭ এপ্রিল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে কাদলা গ্রামের পাল বাড়িতে গিয়ে কয়েকজন মুড়ি ভাজার কারিগরদের সাথে কথা হয়। ওই গ্রামের বিমল পাল,শ্যামল পাল, যুবরাজ,অমর পাল ও অজয় পাল জানান,মুড়ি ভাজা আমাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্যগত পেশা হিসেবে মুড়ি ভাজার কাজে আছি। সংসারের হাল ধরার একমাত্র উপার্জনক্ষন ব্যক্তি হিসেবে তারা বংশগত এ পেশার উপরেই নির্ভরশীল রয়েছেন বলেও তারা জানান।

তারা আরো জানান, মুড়ি ভাজতে অনেক পরিশ্রম হয়। বর্তমান যুগে মুড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় তাদের এখানে আগের মতো এখন আর কেউ মুড়ি ভাজতে আসে না। প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ কেজি মুড়ি ২০ টাকা প্রতি কেজি ধরে ভাজা হয় প্রতিটি পরিবারে। প্রতি কেজি মুড়ি তারা ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি করেন। এক সময় এ গ্রামে ২৫টি পরিবার মুড়ি ভাজার কাজে থাকলেও বর্তমানে ৩/৪টি পরিবার মুড়ি ভাজার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ধানের দাম বেশি হওয়ায় এবং আধুনিক মেশিনে মুড়ি ভাজায় হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে।

তবে রমজান আসলে একটু চাহিদা থাকলেও বছরের অন্যান্য সময় অনেকটা অলস সময় কাটাতে হয় তাদের। মুড়ি ভাজতে লবন, বালু লাগলেও এতে সহায়ক হিসেবে মাটির চুলা, লাকরি ও মাটির কড়াইয়ে মুড়ি ভাজা হয়। এতে এক একটি পরিবারের ৪ থেকে ৫ জন সদস্য সার্বক্ষনিক মুড়ি ভাজার কাজে সহায়তা করে থাকেন।

এমনি ভাবে কাদলা পাল বাড়ির অজয় পাল, যুবরাজ পাল, বিমল পাল, দিলিপ পাল, বিষ্ণু পদ পাল, বিমল পালের পরিবারও এ মুড়ি ভাজার কাজ করে তাদের সংসার চালিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

তবে তারা জানান, এ পেশায় আগের মতো চাহিদা না থাকায় এবং লোকজন আগের মতো মুড়ি না ভাজায় বাধ্য হয়ে বংশগত পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে অনেকে।

তাদের দাবি বাপ-দাদার ঐতিহ্যগত এ পেশা বদল করতে চাইলে ও পারছে না এবং কাছা-কাছি এলাকায় বৃহৎ বাজার না থাকায় ইচ্ছা করলেও ব্যবসা করতে পারছে না তারা। বিমল পাল,শ্যামল পাল ও অমর পাল চাঁদপুর টাইমসকে জানান, চলতি বছর এক মন ধান ১৭০০ টাকায় ক্রয় করতে হয়। মুড়ির দাম কম হওয়ায় এবং আগের মতো মানুষের হাতে ভাজা মুড়ি ক্রয়ে আগ্রহ না থাকায় এ পেশায় আমাদের এখন আর পোষে না। আমরা বাপ দাদার ঐতিহ্য পেশায় ধরে রাখলে ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের ছেলেরা এ পেশায় থাকবে না। তারা আরো জানান, ইচ্ছা করলেই এ পেশা বদল করা যায় না।

তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা এনজিও সংস্থার ঋণ সহায়তা নিয়ে এ পেশাকে এগিয়ে নিতে চান কাদলা গ্রামের মুড়ি ভাজার কারিগড়রা ।

প্রতিবেদক:জিসান আহমেদ নান্নু,১৭ এপ্রিল ২০২১

Share