ফাঁস করা প্রশ্নপত্রে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হওয়া ৭৮ জন শিক্ষার্থীর নামের তালিকা সিআইডিকে দিয়েছেন রিমান্ডে থাকা তিন আসামি। ওই সব শিক্ষার্থী প্রশ্নফাঁস চক্রের প্রধান ব্যক্তি জসিমউদ্দিন ও চক্রের অপর দুই সদস্যকে সাড়ে চার কোটি টাকা দিয়েছিলেন।
রিমান্ডে থাকা প্রশ্নপত্র জালিয়াতি চক্রের জসিম, চক্রের সদস্য পারভেজ খান ও জাকির হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মামলার তদন্ত করছেন এমন একটি সূত্র জানিয়েছেন এই চক্রটির ফাঁস করা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অন্তত চার হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হয়েছেন।
পাবলিক পরীক্ষা আইনে করা মামলায় এই তিন আসামি এখন সাত দিনের রিমান্ডে আছেন। আজ শুক্রবার তাদের রিমান্ডের প্রথম দিন ছিল।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির সাইবার পুলিশের অতিরিক্ত বিশেষ সুপার কামরুল আহসান শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়া ৭৮ শিক্ষার্থীর নামের তালিকা পেয়েছে সিআইডি। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এমবিবিএস কোর্সে এই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিডিএস কোর্সে ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হয়েছেন।
রিমান্ডের প্রথম দিনে চক্রের হোতা জসিমউদ্দিন ও তার দুই সহযোগী জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ৭৮ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা এখন শেষ পর্যায়ে। তারা প্রশ্নপত্রের জন্য প্রতিজনের কাছ থেকে পাঁচ থেকে সাত লাখ করে নিয়েছেন। ফাঁস করা প্রশ্নপত্রে আরও অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন বলে জানান। তবে এখন পর্যন্ত তাদের নাম আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
সিআইডির ওই কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস করতেন মেশিনম্যান আবদুস সালাম। তার খালাতো ভাই জসিমউদ্দিন তা সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। সালাম ও জসিম জসিম সারা দেশে একটি বিশাল চক্র গড়েছিলেন। সালাম পলাতক। সালামসহ চক্রের পলাতক অর্ধশত সদস্যদের খোঁজ পেয়েছেন তারা। রিমান্ডে থাকা তিন আসামির কাছ থেকে ৭৮ শিক্ষার্থীদের দেওয়া চেক জব্দ করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রিমান্ডে থাকা তিন আসামিকে সঙ্গে নিয়ে নিয়ে ঢাকার ডেন্টাল ও কয়েকটি মেডিকেলে কলেজের হোস্টেলে ওই সব শিক্ষার্থীদের ধরতে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু করোনার পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সবাই গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন বলে জানা যায়।
প্রশ্নফাঁস চক্রের কয়েকজন সদস্যকে ধরতেও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। বৃহস্পতিবার রাতভর এসব অভিযান চালিয়ে কাউকেই পাওয়া যায়নি। এখন জালিয়াতির করে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের গ্রামের বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে সেখানে অভিযান চালানো হবে।
মামলার তদন্ত সম্পৃক্ত সূত্র জানায়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পলাতক সালাম চক্রের সদস্যদের যোগসাজশে ফাঁস করা প্রশ্নপত্র নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অন্তত চার হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। চক্রের হোতা জসিমের ২৭ টি ব্যাংক হিসাব, পারভেজ ও জাকিরের ১০-১১ টি করে ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে। সেখানে কত টাকা আছে সে বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছে সিআইডি। তাদের নামে আরও কোনো ব্যাংক হিসেব কিংবা সম্পদ আছে কী না তা জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে তথ্য পেলে ও তাদের অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে।
২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে তদন্ত করে সিআইডি। ওই মামলায় ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার ৪৭ জনের মধ্যে ৪৬ জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের কয়েকজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি প্রশ্নপত্র ফাঁস করা চক্রটির সন্ধান পায় সিআইডি। ওই তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৯ জুলাই চক্রের সদস্য এসএম সানোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২০ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে জসিম উদ্দিন ওরফে মন্নু, পারভেজ খান, জাকির হোসেন মোহাইমিনুলকে গ্রেপ্তার করে। ওই দিনই ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে মিরপুর থানায় পাবলিক পরীক্ষা আইনে মামলা করে সিআইডি।
মামলায় ১৫০ থেকে ২০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে সানোয়ার ও মোহাইমিনুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা এখন কারাগারে।(প্রথম আলো)
বার্তা কক্ষ,২৪ জুলাই ২০২০