মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম সদস্য জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূল হোতা। আসামি জসিম উদ্দিন ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে।
ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র দিয়েছে আসামি জসিমের নেতৃত্বে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্র।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতকে এক প্রতিবেদন দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় জসিম উদ্দিন ভূঁইয়াকে দুদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম আদালত সোমবার এই আদেশ দেন।
এর আগে মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় গত ১৯ জুলাই জসিম উদ্দিনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন জসিম উদ্দিনসহ তিনজনকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন ঢাকার সিএমএম আদালত। আসামি জসিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ২ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক এবং পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করেছে সিআইডি । ফাঁস করা প্রশ্নপত্র বিক্রি করে তাঁরা এই টাকা অর্জন করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় নাফিউল তাহসিন নামের একজন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ সিকিউরিটি অফিসার এস এম কামরুল আহসান বাদী হয়ে নাফিউল তাহসিনের বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা করেন।
মামলায় বলা হয়, ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজের নিচতলায় পরীক্ষা দেওয়ার সময় নাফিউল ইসলাম গ্রেপ্তার হন। তাঁর কাছ থেকে স্যামসাং মোবাইল জব্দ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসকক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নাফিউল জানান, চার লাখ টাকার বিনিময়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের প্রশ্নের উত্তরপত্র সংগ্রহ করেন।
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে আদালতের অনুমতি নিয়ে আসামি নাফিউল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি। তখন সিআইডির কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো.শাহিনুল ইসলাম আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, মামলার তদন্তকালে প্রকাশ পায়, টাকার বিনিময়ে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রশ্নফাঁস চক্রটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ষড়যন্ত্র করে। চক্রের সদস্যরা মোবাইল ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস বিষয়ে যোগাযোগ করে।
সিআইডির সাইবার অপরাধ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস বলেন, ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে তদন্ত করে সিআইডি । ওই মামলায় ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার ৪৭ জনের মধ্যে ৪৬ জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁদের কয়েকজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি প্রশ্নপত্র ফাঁস করার চক্রটির সন্ধান পায় সিআইডি। ১৯ জুলাই চক্রের সদস্য এস এম সানোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
বার্তা কক্ষ,১৮ আগস্ট ২০২০