মতলবে পোল্ট্রি খামার থেকে মেছো বাঘ উদ্ধার

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর পরিচালিত ব্রাদারস পোল্ট্রি খামার থেকে একটি মেছো বাঘ উদ্ধার করেছে খামারিরা।

গত বুধবার রাতে উপজেলার কালিপুর চৌধুরী বাড়ির নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর জামালপুর গ্রামের তার পোল্ট্রিফার্ম থেকে ফাঁদ পেতে এই মেছো বাঘটিকে উদ্ধার করা হয়। সম্ভবত মেছো বাঘটি পোল্ট্র্রি খামারে মোরগ খেতে এসেছিল বাঘটি।

এরপর থেকেই কালিপুর চৌধুরী বাড়িতে এই মেছো বাঘটি দেখতে প্রতিদিন শিশু থেকে শুরু করে শত শত উৎসুক জনতার উপছে ভীর লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কালিপুর চৌধুরী বাড়ির নাজিম উদ্দিন চৌধুরী জামালপুর গ্রামে তার একটি পোলট্রি ফার্ম রয়েছে। এই পোল্ট্রি ফার্মে প্রায়ই সময়ে দেখা যায় পোল্ট্রি ফার্মের পর্দাগুলো ছেড়া এবং অনেক মুরগী থাকে না। এই কারণ উদঘাটন করতে আমরা ফাঁদ পাতার ব্যবস্থা করে। এরই পরিপেক্ষিতে ফাঁদে পড়ে এই বাঘটি ফাঁদে আটকা পড়ে।

তারপর এটি উদ্ধার করে ষাটনল ইউনিয়নের কালিপুর চৌধুরী বাড়ির নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে খাঁচায় রাখা হয়েছে। বর্তমানে উদ্ধার হওয়া বাঘটি সম্পুর্ন সুস্থ্য রয়েছে। জানাযায়, নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর এই পোল্ট্রি ফার্ম থেকে গত ৮ মাস আগেও আরো একটি বাঘ উদ্ধার করা হয়। এভাবে ফাঁদ পেতে ধরা হয় সেটি। পরে বনবিভাগ ওই বাঘটি নিয়ে যায় ।

এ নিয়ে এ ফার্ম থেকে দুটি’ মেছো বাঘ উদ্ধার করা হলো। এখানে আরো বড় আকারের বাঘ দেখেছেন বলেন জানান খামারিরা। আশপাশের লোকজন এখন বাঘ আতঙ্কে রয়েছে।

ফাঁদ পাতার পরিকল্পনাকারী ব্রাদারস লেয়ার পোল্ট্রি খামেরর পরিচালক নাজিম উদ্দিন চৌধুরী চাঁদপিুর টাইমসকে জানান, আমাদের পোল্ট্রিফার্মে দেখা যেত প্রায়ই মুরীগী দিন দিন কমে যাচ্ছে। বুঝতে পারলাম এখানে শিয়াল, বনবিড়াল বা মেছো বাঘ রয়েছে। আবার আমরা মেছো বাঘও দেখতে পেয়েছিলাম কয়েকবার। এমনিতেই আমাদের পোল্ট্রি শিল্প ধবংসের মুখে। আমাদের দিন দিন প্রচুর লোকশানের মুখে পড়তে হচ্ছে। মুরগীর খাদ্য আর শ্রমিকদের বেতন দিতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। আমরা বাজারে এ ফার্ম থেকে ডিম উৎপাদন দিয়ে আমিষের চাহিদা পুরন করে আসছি। বাজারের যে ডিম বিক্রি করি তা থেকে লোকশানের মুখেই রয়েছি। তারপর আবার ফার্মের মুরগী কমে যাচ্ছে। প্রতিদিনই ডিম দেওয়ার লেয়ার মুরগী কমে যাচ্ছে। তাই ফাঁদ পাতার পরিকল্পনা করি।

আর এই ফাঁদ পাতার পরই প্রথমে গত ৮ মাস আগে একটি বাঘ, আর গত ১১ জানুয়ারি রাতে দ্বিতীয় বারের মতো আরো একটি বাঘ ধরতে সক্ষম হই। আমরা বাঘটিকে সংরক্ষরণ করার ব্যাপারে সিদ্বান্ত গ্রহণ করি। সাথে সাথে কাঁচা বানিয়ে বাঘটিকে খাঁচায় রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করি। নিয়মিতভাবে বাঘের প্রিয় খাদ্য মাংস দেওয়া হচ্ছে। বাঘটি বর্তমানে সম্পন্ন সুস্থ্য রয়েছে। এটিকে সংরক্ষণ করাও আমাদের দায়িত্ব। বাঘটিকে ভালোভাবে চলাফেরার করার জন্য ইতিমধ্যে একটি লোহার বাউন্ডারি দিয়ে একটি নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান,গত ৮ মাস আগেও একইভাবে আরো বাঘ ধরতে সক্ষম হয়েছিলাম। সেটি বনবিভাগ এসে নিয়ে গেছে। আর সেটি বাঘ বলে জানিয়েছিলো তারা। তা থেকেই আমরা অনুমান করে নিয়েছিলাম যে আমাদের এখানে ও আশে পাশে আরো মেছো বাঘ রয়েছে। তিনি বাঘটি শুন্দরভাবে সংরক্ষণের সকল ব্যবস্থা ইতিমধ্যে তিনি করে ফেলেছেন। বাঘটি তিনি চিড়িয়াখানার মতো এখানে রাখার ব্যবস্থা করছেন বলেও জানান তিনি। তবে এখনও ঘটনাস্থল কিংবা বাঘটি দেখতে আসেননি উপজেলা বন কর্মকর্তারা।

ফাঁদ পাতার পরিকল্পনাকারী খামারের ম্যানেজার মোঃ ফারুক চৌধুরী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘লেয়ার পোল্ট্রি ফার্মে প্রায় ১২ হাজার মুরগী রয়েছে। এগুলো থেকে প্রতিদিন বাজারে ডিম ডেলিভারি দেওয়া হয়। প্রতিদিন রাতে প্রায়ই বাঘের গর্জনের শব্দ শুনতে পেতাম। তার সাথে আবার আমাদের ফার্ম থেকে মুরগী কমে যেত। ধারণা করলাম যে শিয়াল বা মেছো বাঘ হয়তো এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাই এই ছোট্র লোহার খাঁচা তৈরি করে খাঁচয় মুরগী দিয়ে ফাঁদ পেতে রেখে দেই। আর এই ফাঁদে আটকা পড়ে এই বাঘটি।’

নাজিম চৌধুরী পোল্ট্রি খামারে কাজ করা শ্রমিক নয়ন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘আমি গত ৮ মাস যাবত এই খামাওে কাজ করি। আমি আসার পর কয়েকবার এই জায়গায় বাঘ দেখতে পেয়েছি। আমরা এখানে আতঙ্কে থাকি কখন জানি বাঘের কবলে পড়ি। এখানে অভিযান চালালে আরো বড় বড় বাঘ উদ্ধার করা সম্ভব।’

কয়েকজন স্থানীয় বনজীবি ও পরিবেশবিদবলেন,সুন্দরবনে এখন আর বাঘের বসবাসের অনুকূল পরিবেশ নেই। বাঘ খাদ্যের অভাবে এভাবে লোকালয়ে চলে আসা। সুন্দরবন বাঁচলে বাঘ বাঁচবে। বাঘ আমাদের সাহস, শক্তি ও সংস্কৃতির পরিচয়। এটিকে সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব।

বাঘ দেখতে আসা ক্ষুদে দু’জন শিশু জানান, আজ সকালে বাঘ দেখতে এসছি। চিড়িয়াখানায় যেতে পারিনি। আমগো এনে বাঘ ধরেছে তাই বন্ধুদের সাথে বাঘ দেখতে আসা। খুবই আনন্ত পেলাম।

এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা উপজেলা বন কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমান ফরাজী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, খবর পেয়ে লোক পাঠানো হয়েছে। আমরা আগামী রোববার বাঘটি দেখতে যাবো। মেছো বাঘটিকে অবমুক্ত করা হবে। নতুবা এই মেছো বাঘটির যদি বাচ্চা থাকে তাহলে তারা মারা যাবে।

নিজস্ব প্রতিবেদক

Share