চাঁদপুর মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ১৫০টি পুকুরের ৯৪ মেট্রিক টন মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। মেঘনা ও ধনাগোদার পানি বেড়ে যাওয়ায় দুই সপ্তাহ আগে উপজেলার একটি পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নে বন্যা দেখা দেয়। পানিতে তলিয়ে যায় অনেক বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, প্রতিষ্ঠান ও পুকুর।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৩ হাজার ৬৭৮টি চাষযোগ্য পুকুর রয়েছে। এসব পুকুরে রুই, কাতল, মৃগেল, তেলাপিয়াসহ আরও বিভিন্ন জাতের মাছের চাষ করা হয়। গত বছর ও এ বছরের শুরুতে এগুলোয় মাছের পোনা ছাড়া হয়। সাম্প্রতিক বন্যায় ১৫০টি পুকুর পানিতে তলিয়ে যায়। ভেসে যায় এসব পুকুরের ৯৪ মেট্রিক টন মাছ। এ ছাড়া আরও সাত লাখ পোনা ভেসে গেছে পানিতে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৯৫ কৃষক। ভেসে যাওয়া মাছ ও পোনার বর্তমান বাজারমূল্য এক কোটি টাকা।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় আরও জানায়, মাছ ভেসে যাওয়া ছাড়াও বন্যায় ওই ১৫০ পুকুরের অবকাঠামোগত ক্ষতিও হয়েছে। এসব পুকুরের আইল, পাড়সহ অন্যান্য অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৫ লাখ টাকা।
সম্প্রতি ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার মতলব পৌরসভার কাজীরবাজার, বরদিয়া, নলুয়া, শীলমন্দি, শোভনকর্দী ও উদ্দমদী; খাদেরগাঁও ইউনিয়নের লামচরী, বালুচর, মাছুয়াখাল ও খাসচর; নায়েরগাঁও উত্তর ইউনিয়নের নায়েরগাঁও ও মেহেরন এবং নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাড়িগাঁও ও মিরামা গ্রামের বেশ কিছু চাষ করা পুকুর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। মাছচাষিরা এসব পুকুরের পাড়ে মশারি জালের বেড়া দিয়ে মাছ রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
কথা হয় উপজেলার মেহেরন গ্রামের মাছচাষি পল্টু দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমার আটটা পুকুরে রুই, কাতল, মৃগেল, পাঙাশ, তেলাপিয়াসহ আরও কয়েক জাতের পোনা ছাড়ছিলাম। এসব পোনা বড় অইয়া ২০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের মাছ হইছে। মাছ বেচনের চিন্তা করতেছিলাম। কিছু টের পাওনের আগেই গেল সপ্তায় বন্যার পানিতে আমার সব পুকুরই তলাইয়া গেছে। ভাইসা গেছে সাত-আট লাখ টাকার মাছ। ধারকর্জ কইরা মাছের চাষ করছিলাম। হেই মাছ ধরনের আগেই বন্যায় ভাসাইয়া নিল। আমি এহন সর্বস্বান্ত। ধারকর্জের টেয়া শোধ দিতে পারুম না। সংসারের খরচও চলব না। এহন আমার মরণদশা। খুবই হতাশায় আছি।’
লামচরী গ্রামের মাছচাষি বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, ‘ঋণ কইরা তিনডা পুকুরে মাছের চাষ করছিলাম। মাছ বড়ও অইছিল। হঠাৎ বন্যার পানিতে আমার পুকুর তিনডা তলাইয়া গেল। এক-দেড় লাখ টাকার মাছও ভাইসা গেল। মাছের লগে আমার কপালও পুড়ল। আশা ছিল, মাছ বিক্রি কইরা ঋণের টেয়া শোধ দিমু, পরিবারের খরচ চালামু। বন্যার পানিতে ভাইসা গেল হেই আশা। এই ক্ষতি ক্যামনে পোষামু, জানি না। সরকার যদি সাহায্য করত, তাইলে বাঁইচা যাইতাম।’
জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আকতার বলেন, বন্যায় যেসব পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এবং যেসব মাছচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সে–সংক্রান্ত তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে পাঠানো হয়েছে। সরকারি অনুদান পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষিদের সহায়তা দেওয়া হবে।
করেসপন্ডেট,১৮ আগস্ট ২০২০