চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেসের অর্ধেকের বেশি টিকিট বিক্রি বাকি

চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনের আগামীকাল রোববারের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছিল ১ মার্চ। চার দিনে ট্রেনের অর্ধেকের বেশি টিকিট এখনো বিক্রি হয়নি।

মেঘনা এক্সপ্রেসে টিকিট রয়েছে ৯২৭টি। রোববারের যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছিল গত বুধবার। আজ বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৪১৭টি। অর্থাৎ বিক্রি হয়নি ৫১৪টি টিকিট।

এই ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর ছাড়াও বরিশাল ও ভোলার যাত্রী থাকেন। তাই সব সময় টিকিটের চাহিদা বেশি থাকে। তবে এবার পরিস্থিতি আলাদা।

৪ মার্চ শনিবার সকাল ৭টার দিকে চট্টগ্রাম স্টেশনে ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিট কিনতে এসেছিলেন মো. রঞ্জু নামের বয়স্ক ব্যক্তি। তিনি প্রথমে কাউন্টারের সামনে দাঁড়ান। সেখান থেকে জানানো হয়, নিবন্ধন ছাড়া টিকিট দেওয়া হবে না। এরপর যান হেল্প ডেস্কের লোকজনের কাছে। সেখানে নিবন্ধন করতে জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন বলে জানতে পারেন। কিন্তু ওই মুহূর্তে পরিচয়পত্র তাঁর কাছে ছিল না।

ক্ষোভ প্রকাশ করে মো. রঞ্জু বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে হয়রানির শেষ নেই। এখানে-ওখানে ছুটতে হচ্ছে।’

সিলেটগামী ট্রেনের টিকিটের জন্য এসেছিলেন মো. রাব্বী হোসেন ও তাঁর স্ত্রী তাহমিনা আক্তার। কিন্তু তাঁরা টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। রাব্বী হোসেন বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করার বিষয়টি জানতেন না। আগে কাউন্টারে এসে টিকিট নিতেন। না পেলে বাইরে থেকে (কালোবাজারি) নিতেন। কিন্তু এখন টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই স্ত্রীকে নিয়ে এখন তিনি বাসে করে যাবেন।

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাবেন নির্মাণশ্রমিক আমির হোসেন। টিকিটের জন্য সকাল সকাল আসেন স্টেশনের কাউন্টারে। কিন্তু নিবন্ধন করে টিকিট কেনার পদ্ধতি তাঁর জানা নেই। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে স্টেশন ছাড়লেন তিনি।

নিবন্ধন পদ্ধতিতে টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়া ভালো বলেছেন উম্মে কুলসুমা, বিজয় নাগ ও সিরাজউদ্দিন চৌধুরী। তাঁরা বলেন, শুরুতে এই পদ্ধতি একটু কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁদের ভালো মনে হচ্ছে। এর মাধ্যমে টিকিট নিয়ে কালোবাজারি করার সুযোগ কমে যাবে।

আক্কেল আলী নামের সিলেটগামী এক যাত্রী বলেন, আগে তো কাউন্টারে টিকিট পাওয়া মানে ছিল সোনার হরিণ পাওয়া। টিকিট বিক্রি শুরু হলেই তা একটি সিন্ডিকেট কবজা করে ফেলত। তাঁদের কাছ থেকে বাড়তি দামে টিকিট নিতে হতো। এখন সাধারণ মানুষ টিকিট পাচ্ছে।

এখনো কালোবাজারি বন্ধ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মিনা বেগম নামের এক যাত্রী। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ ও চাঁদপুরে প্রতিদিন ১০টি আন্তনগর ট্রেন ছেড়ে যায়। এসব ট্রেনে আসন রয়েছে প্রায় সাত হাজার। রোববারের ঢাকাগামী ট্রেনগুলোর টিকিট বিক্রি হয়ে গেলেও ময়মনসিংহ, সিলেট ও চাঁদপুরগামী ট্রেনের টিকিট অবিক্রীত রয়ে গেছে।

এ ছাড়া অন্য সময় অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর দিনই ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। এবার তা হয়নি। প্রথম দিন বিক্রি হয়েছিল ২০–২৫ শতাংশ টিকিট। বাকি টিকিট পর্যায়ক্রমে বিক্রি হয়। মূলত যাত্রার পাঁচ দিন আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়।

রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ যাচাইয়ের মাধ্যমে আন্তনগর ট্রেনের টিকিট কাটতে হবে। রেলের কর্মকর্তারা পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) মেশিনের মাধ্যমে টিকিট যাচাই করবেন। কেউ অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে টিকিট কেটে ভ্রমণ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ব্যবস্থাকে ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ বলছে রেলওয়ে। টিকিট কালোবাজারি বন্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সরকারি উদ্যোগের অংশ এটি। ১ মার্চ এই পদ্ধতিতে টিকিট বিক্রি শুরু হয়।

টাইমস ডেস্ক/ এএস/ ৪ মার্চ ২০২৩

Share