ইলিশের মৌসুম না হওয়া সত্ত্বেও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে মেঘনায় প্রচুর ইলিশের দেখা মিলছে। সপ্তাহের ব্যবধানে মণ প্রতি ইলিশের দামও কমেছে ৭ হাজার টাকা।
এবার মেঘনার পাশাপাশি স্থানীয় নদীগুলোতেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মাঘ মাস পর্যন্ত ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন মৎস্যজীবীরা।
বরিশাল নগরের পোর্ট রোড বাজারের আড়ৎদার জয়ন্ত কুমার দাস জানান, এখন ইলিশের মৌসুম নয়। তারপরও মেঘনা নদীতে বেশ ইলিশ ধরা পড়ছে। বরিশাল অঞ্চলের দৌলত খাঁ, হিজলা এলাকা সংলগ্ন মেঘনা নদীর মাছ জেলেরা এখানে নিয়ে আসছে।
এদিকে গত ৪ দিন সরবরাহ বাড়ায় বাজারে ইলিশের দাম মণ প্রতি ৭ হাজার টাকা কমেছে বলেও জানান তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বরিশালের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ৩শ’ থেকে ৬শ’ গ্রাম ওজনের মাছ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। ৫শ’ থেকে ৬শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণপ্রতি ১৬ হাজার টাকা এবং ৩শ’ থেকে ৪শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণপ্রতি ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫০০-৯০০ গ্রাম ইলিশ মণপ্রতি ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
জয়ন্ত দাস আরও বলেন, ‘ইজারাদারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বরিশালের পাইকারি বাজারে বৃহস্পতিবার দিন ৫০৪ মণ মাছ এসেছিল। শুক্রবার এই সংখ্যার সাথে দেড় থেকে দু’শ মণ মাছ যোগ হবে। এই মাছ স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি রাজধানী, যশোর, কুষ্টিয়াসহ উত্তরাঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে।’
হিজলা থেকে মাছ নিয়ে আসা জেলে আফসার উদ্দিন বলেন, ‘২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ রক্ষায় নদীতে জাল পাতায় নিষেধাজ্ঞা ছিলো। এরপর পহেলা নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত চলমান জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা অভিযান। ৯ অক্টোবরের পর ইলিশ ধরার জন্য হাতে থাকা ৩ সপ্তাহে জালে ইলিশ মেলেনি তেমন। দাদনের টাকা শোধ নিয়ে চিন্তায় আছি। তবে হঠাৎ করে ইলিশের দেখা পাওয়ায় পরিবার নিয়ে কয়েকটা দিন হলেও ভালো থাকতে পারবো।’
এবারে যখন অসময়ে ইলিশের দেখা মিলেছে তাতে করে মাঘ মাসের শেষ অবধি মাছ পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে জেলা মৎস্য আড়ৎদার এসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত কান্তি দাস বলেন, ‘সাগরে ডাকাতের উপদ্রবের কারণে জেলেরা মাছ ধরতে যেতে পারছেন না। মা ইলিশ রক্ষার অভিযান শেষে একবার সাগরে বোট যেতে পেরেছিল। এরপর ডাকাতের উপদ্রব শুরু হওয়া, জেলেদের জিম্মি ও হত্যা করায় এখন জেলেরা সাগরে যেতে চাচ্ছে না। সাগরের ফিসিং বোট যেতে পারলে ইলিশের আমদানি আরও বাড়ত।’
সাগর মোহনায় নদীতে চড় পড়ায় হঠাৎ করে বরিশাল অঞ্চলের মেঘনায় ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে বলে জানান মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক ড. একেএম আমিনুল হক।
তিনি আরও বলেন, ‘ইলিশ ডিম ছাড়ার পর অক্টোবরে বেশ ইলিশ পড়ার কথা ছিল কিন্তু এবারে তা হয়নি। অপরদিকে নদীর মোহনায় বিশেষ করে কলাপাড়া, বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর মোহনায় চর জাগায় যেসব ইলিশ সাগর থেকে উঠে এসেছিল তা সাগরে ফিরে যেতে পারেনি। এখন ঠান্ডা আবহাওয়াতে ওই ইলিশ ধরা পড়ছে।’
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৮:৩৩ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫, শুক্রবার
এমআরআর