ঢাকা থেকে চাঁদপুরগামী ‘এমভি সোনার তরী-৫’ নামের একটি যাত্রীবাহি লঞ্চ রাতের অন্ধকারে মেঘনার মাঝনদীতে হঠাৎ জেনারেটর বন্ধ হয়ে বিদ্যুতহীন হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায়ই লঞ্চে থাকা দুই শতাধিক যাত্রীকে নিয়ে লঞ্চটি চাঁদপুরে আসতে আসতে দুবার দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অল্পের জন্যে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়।
যাত্রীদের মাধ্যমে এ খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো.মাজেদুর রহমান খান অতিরিক্ত ম্যাজিট্রেট ও নৌ পুলিশের একটি দল নিয়ে আতঙ্কিত যাত্রীদের মাঝ নদী থেকে রক্ষা করে এবং লঞ্চের মাস্টারকে আটক করে। পরে পুলিশ ও ম্যাজিট্রেটের সহযোগিতায় লঞ্চটি চাঁদপুর ঘাটে ভিড়িয়ে আতঙ্কিত যাত্রীদের নামিয়ে আনেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনেক পুরোনো মানের তৃতল যাত্রীবাহি লঞ্চ এমভি সোনার তরী -৫ লঞ্চটি দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টায় চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
লঞ্চটি রাত পৌনে ১০টায় মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল এলাকা অতিক্রমকালে হঠাৎ লঞ্চে একটি জেনারেটর নষ্ট হয়ে যায়। এতে লঞ্চটি ভুতের বাড়িতে পরিণত হয়। অনেক্ষণ অন্ধকার থাকায় ২০ থেকে ২৫মিনিট পর লঞ্চের যাত্রীরা চিৎকার চেচামেচি শুরু করলে লঞ্চের নিচতলায় থাকা টিকেট কাউন্টারের লোকজন কর্মচারীরা পালিয়ে যায়।
অন্ধকারের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাত সাড়ে ১০টায় লঞ্চটি মতলব উত্তরের এখলাসপুরের কাছে পৌছালে বালু বহনকারী একটি বাল্কহেডের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধতে নিলে লঞ্চ চালক লঞ্চটি সরিয়ে আনলেও ডুবন্ত বালু চরের সাথে লঞ্চটি ধাক্কা লেগে অনেকটা কাত হয়ে যায়। এতে করে অনেক যাত্রী ছিটকে পড়ে আহত হয়।
এ অবস্থায় পুনরায় লঞ্চটি এই অন্ধকারেই চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর এলাকায় রাত পৌনে ১১টায় আরেকটি ডুবন্ত বালু চরে ধাক্কায় লাগে। এতেও বেশ কিছু যাত্রী লঞ্চে ছিটকে পড়ে আহত হয়। আহতরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেন।
ওই লঞ্চের যাত্রী প্রথম আলোর সাংবাদিক আলম পলাশ বলেন, রাত পৌনে ১০টায় লঞ্চটির যখন জেনারেটর নষ্ট হয়ে যায় তখন থেকেই যাত্রীদের মধ্যে আতংক শুরু হয়। এই অবস্থায় অনেক যাত্রী তাদের মোবাইলের আলো লঞ্চটি চলতে সহায়তা করলেও দুবার ডুবন্ত বালু চরে ধাক্কা লাগে। এতে লঞ্চের যাত্রীরা আরও আতঙ্কিত হয়ে লঞ্চে থাকা নিরপত্তা ভায়া পড়ে নেন।
পরে লঞ্চটি চাঁদপুরে ভিড়ানোর পর জেলা প্রশাসকের কাছে লঞ্চ চালক ও কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
লঞ্চের মাস্টার মো.দাউদ হোসেন জানান, হঠাৎ করে লঞ্চের ‘জেনারেটর’ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। আমি লঞ্চটি আস্তে আস্তে চালিয়ে চাঁদপুর নিয়ে আসি।
চাঁদপুর অগ্রণী ব্যাংক নতুন বাজার শাখার ম্যানেজার এমকে মজিবুর রহমান বলেন,লঞ্চটি যাত্রীদের দীর্ঘ প্রায় দুইঘন্টা অন্ধকারে রেখে এলোপাতারি চালিয়ে আমাদেরকে নিয়ে আসছে এতে লঞ্চটি ডুবে গেলে কোনো যাত্রী প্রাণে বাঁচতো না। আল্লাহ নিজের হাতে আমাদের বাচিয়ে চাঁদপুরে ফিরিয়ে এনেছে। শহরের ব্যবসায়ী জাবেদ আহমেদ বলেন,আমরা লঞ্চটির রুট পারমিট বাতিলসহ দোষিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি ও এই ঘটনায় প্রশাসনের সুষ্টু তদন্তসহ কামনা করছি।
এদিকে মাঝ নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চের জেনারেটর নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, মাঝনদীতে জেনারেটর নষ্ট হয়ে যাওয়ায় লঞ্চে থাকা যাত্রীরা অত্যন্ত ঝুঁকিতে ছিলেন। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই এবং লঞ্চের কাগজপত্র জব্দ ও চালককে আটক করা হয়।
পরে ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিট্ট্রট আয়েশা আক্তার এ ব্যাপারে চাঁদপুর বিআইডাবিøউটিএর পরিদর্শক কে বাদী হয়ে আজ বুধবার লঞ্চ মাস্টার মো.দাউদ হোসেন ও লঞ্চ চালক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মেরিন আদালতে একটি মামলা করার নির্দেশ দেন।
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট