বিএম ইসমাইল, হাইমচর (চাঁদপুর):
চাঁদপুর জেলার হাইমচরের মেঘনায় বর্ষার ভরা মৌসুমে ইলিশের আকাল। জেলেরা জাল ছেড়ে দিয়ে পরিবার নিয়ে অনাহারে জীবন কাটাচ্ছে।
প্রতি বছরের এ সময় হাইমচরের জেলেপাড়া রূপালী ইলিশের উৎসব হতো, কিন্তু সেখানে এখন হাহাকার।
হাইমচরের অধিকাংশ জেলেরা নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় বাজারের চায়ের দোকানে, নদীর পাড়ে, কিংবা জুয়ার আসরে আড্ডা দিতে দেখা যায়। এ সময় সাধারণত ইলিশের ভরা মৌসুম হিসেবে জেলেরা মাছধরা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো, সেখানে জেলেরা অনাহারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। স্বাদে, গন্ধে মেঘনার ইলিশ যেভাবে বিদেশিদের মন কেড়ে নিয়েছিল সেভাবে আর হয়তো নিবে না।
স্থানীয়দের দাবি, এই সময়ে হাইমচরের মেঘনা নদীর তীর দিয়ে হাটলে তাজা ইলিশের গন্ধ নাকে এসে লাগতো।
গত ১ মার্চ থেকে ৩০শে এপ্রিল ইলিশ রক্ষার্থে মেঘনায় অভয়াশ্রম ঘোষণা করে সরকার, যাতে করে ভরা মৌসুমেও ইলিশের অভাব না হয়। কিন্তু সরকারের পরিকল্পনা যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে ভরা মৌসুমে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
বর্তমানে জেলেদের কেউ কেউ জাল নিয়ে নদীতে গেলেও ৩ থেকে ৪ বার জাল ফেলে ৪-৫টি টেম্পো (ছোট সাইজের ইলিশ) জালে আটকাতে পারে। যা দিয়ে তাদের ট্রলারের জ্বালানী খরচও হয় না বলে জানিয়েছেন জেলেরা।
অপর দিকে জেলেরা কেউ নদীতে জাল নিয়ে গেলে কোস্টগার্ড হাতে জাল দিয়ে দেওয়ার ভয়ে নদীতে যেতো না।
মেঘনায় ভরা মৌসুমে ইলিশ না থাকার কারণ সর্ম্পকে জেলেদের একজন হোসেন গাজী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, নদীতে এমনিতেই মাছ নাই তবুও জাল নিয়ে নামলে অভিযানের লোকজন জাল নিয়ে যায়, তাই কেউ না খেয়েও থাকলেও নদীতে হাজার হাজার টাকা জাল নিয়ে মাছ ধরতে যায় না।’
আবুল হোসেন ছৈয়াল চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, এবারে অভিযান সঠিকভাবে করা হয়নি। জেলেদেরকে সঠিক সময় জেলে কার্ডে ও চাল বিতরণ করা হয়নি, ফলে অধিকাংশ জেলেরা পেটের দায়ে ঝাটকা ইলিশ শিকারে যান।’
জেলে আবুল মিয়া চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, এলাকার জেলেরা এবার নদীতে কম গিয়েছে কিন্তু বাইরে থেকে আসা (মুন্সিগঞ্জ, শরিয়তপুর, কালিরচর) জেলেরা আসায় মেঘনায় ভরা মৌসুমে ইলিশ নাই বললেই চলে।’
হাইমচরের জেলে পাড়ার আড়তগুলোতে ঘুরে কোথায়ও ইলিশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এই নিয়ে হাইমচরে জেলেদের ও আড়ৎদারদের মাঝে প্রায় সময় দাদনের টাকা নিয়ে বাগবিতণ্ডা বেঁধে যায়।
এ বিষয়ে আড়ৎদার লিটন পাইক চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, মেঘনায় অন্যান্য বছরের এ সময়ে ইলিশের ভরপুর ছিল আমরা প্রচুর ইলিশ জেলার বাইরে নিয়ে বিক্রয় করতে পেরেছি। আজ ৫০০ গ্রাম ইলিশের নেই তবুও ১ হাজার টাকা থেকে ১২শ’ টাকা তাও পাওয়া যাচ্ছে না।
চাঁদপুর জেলা মৎস্যজীবী প্রতিনিধি মোঃ মানিক দেওয়ান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, হাইমচরে ইলিশ শূন্য হওয়ার একমাত্র কারণ হলো জাটকা ও মা ইলিশ অভিযানের সময় সঠিকভাবে অভিযান পরিচালনা না করা। ভবিষ্যতে মা ইলিশ রক্ষার অভিযান কঠোরভাবে পরিচালনা করা না হলে আগামীতে ইলিশের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না।’
আপডেট: ১২:৫৬ অপরাহ্ণ, ১৬ জুন ২০১৫, মঙ্গলবার
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম-এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur