চাঁদপুর

পদ্মা মেঘনার ভাঙ্গন : রাজরাজেশ্বরে দেড় শ’ পরিবার গৃহহীন

দুই দিকে দু’টি বৃহৎ নদী পদ্মা ও মেঘনা। মাঝে প্রায় ৩৬ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট চর এলাকাটিই চাঁদপুর সদর উপজেলার ১৪নং রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন।

আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত প্রায় ১৪ হাজার মানুষের বসবাসকৃত এ ইউনিয়নটির চার পাশ থেকেই ঘিরে রেখেছে বর্ষায় ভয়াল রূপ ধারণকারী পদ্মা ও মেঘনা।

প্রায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ওই ইউনিয়নের কোনো না কোনো গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদী দু’টির ভাঙা-গড়া খেলায় সাথে নিজেদের অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছে ইউনিয়নের হতদরিদ্র মানুষগুলো।

কিন্তু এ মানিয়ে নেয়ার মাঝেই গত দু’সপ্তাহ ধরে উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি আর পদ্ম-মেঘনার প্রবল স্রোতে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় শ’ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

বরাবরের মতো নদীভাঙনের কাছে পরাজয় বরণ করে নেয়া ওইসব পরিবারের মানুষগুলো তাদের বসতঘরগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেছে।

বর্তমানে আরো প্রায় ৫০টির মতো পরিবার নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে দিন-রাত পার করছে।

রোববার (৩১ জুলাই) চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উদয়ন দেওয়ান দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লগগীমারাচরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার গৃহহীন মানুষদের সাথে সাক্ষাৎ করেন।

এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন থেকে নদী ভাঙ্গনের বিষয়ে বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই প্রস্তুতি নিতে হবে। যাতে করে চর এলাকায় বসবাসকারীদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদেরকে দুর্যোগের হাত থেকে আগে থেকেই রক্ষা করা হয়। লগ্নীমারা চরের যেসব মানুষের ঘর-বাড়ি নদীর ¯্রােতে বিলীন হয়ে গেছে ও জীবন রক্ষার্থে যারা অন্যত্র উঁচু স্থানের সন্ধানে গিয়েছে তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘর নির্মাণের জন্যে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে আলোচনা করে ত্রাণের টিন দেয়ার ব্যবস্থা কররা হবে।’

‘এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্যে ৫ লাখ টাকা ইউনিয়ন পরিষদকে দেয়ার চেষ্টা করা হবে। শুধু তাই নয়, অবহেলিত রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নবাসীকে প্রবল স্রোতের হাত থেকে রক্ষা করতে মাটির কেল্লা তৈরি করে সেখানে তাদেরকে বসবাস করার পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হবে।’

এ সময় উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রায় অর্ধ শতাধিক গৃহহীন পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করেন।

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী হযরত আলী চাঁদপুর টাইমসকে বেপারী জানান, ‘গত এক সপ্তাহে লগগীমারা, বলিয়ার চর, মুগাদি, বাঁশগারি, গোয়াল নগর, চোকদারকান্দি, দেওয়ানকান্দি, মান্দেরবাজার এসব এলাকার প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার স্রোতের তোড়ে তাদের ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে শরীয়তপুর জেলার পদ্মা নদীর চরে জেগে উঠা রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বাঁশগারির চরে আশ্রয় নিয়েছে।’

এছাড়াও অনেকে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন স্থানের উঁচু জায়গাতে এসে ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে স্তূপ করে রেখেছে। এদেরকে ইউনিয়নের বিভিন্ন উঁচু স্থানে থাকার জন্যে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে।’

‘লগগীমারা চরে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার তাদের সন্তানাদি নিয়ে বসবাস করছে দীর্ঘদিন ধরে। পদ্মা-মেঘনার ভাঙ্গনের সাথে যুদ্ধ করে তারা এখানে বসবাস করলেও চলতি বর্ষার মৌসুমে পদ্মা-মেঘনার ভাঙ্গন দেখা না দিলেও প্রচণ্ড স্রোতের তোড়ে বসতঘরগুলো ভেঙ্গে নদীতে ভেসে যাচ্ছে।’

ইউনিয়নের একাধিক গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, পুরো ইউনিয়নটি মেঘনার উত্তাল ঝুঁকির মাঝে রয়েছে। এর পূর্বে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড গোয়াল নগরের চোকদারকান্দি, ৭নং ওয়ার্ড দেওয়ানকান্দির বলিয়ার চর, দেওয়ান বাড়ির শতাধিক পরিবারকে একইভাবে মেঘনার স্রোতে ঘর ভেঙ্গে যাওয়ায় শরীয়তপুর জেলার পাশাপাশি পদ্মা নদীতে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের একটি চরে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।’

ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সূত্রে জানা যায়, যে হারে পদ্মা-মেঘনার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে করে গোয়াল নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বলিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ দুটি বিদ্যালয় নদীগর্ভে যে কোনো মুহূর্তে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ সংক্রান্ত আগের প্রতিবেদন- শিরোণামে ক্লিক/টাচ্ করে পড়ুন..
মেঘনায় ভাঙনের কবলে রাজরাজেশ্বর : অর্ধশত পরিবারের আর্তনাদ

আশিক বিন রহিম : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৬:৩০ এএম, ২ আগস্ট ২০১৬, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Share