নিউজ ডেস্ক চাঁদপুর টাইমস ডটকম
দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গপথ, তাতে সিঁড়ি, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা- জেল পালানোর কাজটা আরামে সারতে ভালোই আয়োজন করেছিলেন মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক চোরাকারবারী হোয়াকিন গুজমান।
মেক্সিকো সিটির কাছে সুরক্ষিত আল্টিপ্লানো কারগার থেকে শনিবার রাতে চম্পট দেন ‘এল’ চ্যাপো বা ‘পিচ্চি’ নামে পরিচিত এই ‘মাদক সম্রাট’, যা মেক্সিকো সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়।
গুজমানকে ধরতে ইতোমধ্যে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। কারাগারের কাছে তুলোকা বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
কারা কর্মকর্তারা গুজমানকে পালাতে সহায়তা করেছেন কিনা- সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নিয়েতো।
১৯৯৩ সালে গুয়াতেমালায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০ বছরের কারাদণ্ড হয় কোটিপতি গুজমানের। কিন্তু এরপর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জেল পালালেন কুখ্যাত এই চোরাকারবারি।
২০০১ সালে প্রথম দফায় জেল পালানোর সময় কাপড়ের ঝুড়িতে লুকিয়ে কারাগার থেকে উধাও হয়েছিলেন তিনি। কারা কর্মকর্তারা সে সময় ঘুষ পেয়ে চোখ বন্ধ রেখেছিলেন।
এরপর গতবছর আবার গ্রেপ্তার হলে গুজমানকে রাখা হয় আল্টিপ্লানো কারগারে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শনিবার সর্বশেষ তাকে ওই কারাগারের স্নানাগারে দেখা যায়। কিন্তু রাতে তার সেলের মেঝেতে ৩২ ফুট গভীর এক গর্ত আর মই আবিষ্কারের পর গুজমানের পালানোর বিষয়টি বুঝতে পারেন কারা কর্মকর্তারা।
২০১৪ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক চোরাকারবারী হোয়াকিন গুজমান। ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক চোরাকারবারী হোয়াকিন গুজমান। দেড় কিলোমিটার সুড়ঙ্গের বের হওয়ার মুখ; অন্যমাথা পৌঁছেছে গুজমানের সেলে। দেড় কিলোমিটার সুড়ঙ্গের বের হওয়ার মুখ; অন্যমাথা পৌঁছেছে গুজমানের সেলে।
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে মেক্সিকোর জাতীয় নিরাপত্তা কমিশনার মন্তে আলেহান্দ্রো রুবিদো জানান, কারাগারের সেলের নিচ থেকে ওই গর্ত পৌঁছেছে দেড় কিলোমটিার দীর্ঘ এক সুড়ঙ্গে। সেখানে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, এমনকি সিঁড়িও আছে।
কারাগারের সীমানার বাইরে নির্মাণাধীন একটি এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে ওই পথ।
সুড়ঙ্গের মধ্যে একটি মোটরসাইকেলও পেয়েছে পুলিশ। তাদের ধারণা, সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সরঞ্জাম এবং মাটি সরানোর কাজে ব্যবহার করা হয়েছে দুই চাকার বাহনটি।
মেক্সিকোর শীর্ষ মাদক চোরাচালানী চক্র ‘সিনালোয়া’র প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অল্প সময়েই কুখ্যাতি অর্জন করেন গুজমান, তার নাম চলে আসে যুক্তরাষ্ট্রের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায়। ওই চক্র মূলত যুক্তরাষ্ট্রে কোকেন, মারিজুয়ানা এবং মেথামফেটামিন ধরনের মাদক পাচার করে।
২০১৪ সালে দ্বিতীয় দফা গ্রেপ্তারের আগে গুজমানের তথ্য পেতে পাঁচ মিলিয়ন ডলার পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্বের অন্যতম সুসংগঠিত ও শক্তিশালী অপরাধীচক্রের এই নেতার সম্পদের পরিমাণ অন্তত এক বিলিয়ন ডলার বলে ধারণা করা হয়। একবার ফোর্বস ম্যাগাজিনে শীর্ষ কোটিপতিদের তালিকাতেও তার নাম আসে।
গুজমান দ্বিতীয়বারের মতো জেল পালানোয় উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এবারও তাকে ধরতে মেক্সিকোকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল লোরেটা ই লিঞ্চ।