আলহাজ্ব আহমাদ আলী পাটওয়ারী রহ.৫৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ ,আহমদিয়া দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা, ওয়াকফ এ্যাস্টেট এর প্রতিষ্ঠাতা ও মোতওয়াল্লী আলহাজ্ব আহমদ আলী পাটোয়ারী রহ.’র ৫৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। বঙ্গাব্দ ১১৭৫-১২০০ সালের দিকে তাঁর পুর্ব পুরুষ হাজী মকিম উদ্দিন নামের এক বুজুর্গ অলিয়ে কামেল ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে পবিত্র আরব ভূমি হতে সপরিবারে এ অঞ্চলে আসেন।

সেই মজা-মজা ডোবা পুকুরের উত্তর-পশ্চিম সে সময়ে বর্তমান বড় মন্ত্রীদের মাঝখানের উত্তর-পশ্চিম কোণে একটু উঁচু দিপাকৃতি স্থানে তিনি বসবাস শুরু করেন। তাঁর ধর্মীয় সাধনা ও মধুর ব্যবহারে অসাধারণ শ্রদ্ধা ও ভক্তি করতেন তৎকালীন এলাকাবাসী। পর্যায়ক্রমে তিনি ইসলাম ধর্মের মহাত্মা প্রচার করতে থাকেন।

হযরত মুকিম উদ্দিন রহ. কর্তৃক অত্র এলাকায় ইসলামের আবাদ তথা প্রচার ঘটে। তাঁর প্রভাবে ও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার মনোভাবের কারণে এমনই গভীর লেখাপাত করেছিল যে, হযরত মুকিম উদ্দিন রহ.র নামনুসারেই এ জনপথের নাম হয় ‘মকিমাবাবাদ’। এ ভাবেই গড়ে উঠে ‘মকিবাবাদ গ্রাম ’।

দানবীর ক্ষণজন্মা,মানব হিতৈষী ও মোতাওয়াল্লী আলহাজ্ব আহমাদ আলী পাটোয়ারী রহ.আনুমানিক সম্ভবত: বারো শ’বঙ্গাব্দের শেষের দিকে ১৮৬১ সালে হাজীগঞ্জের মকিমাবাদ গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলীম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলভী আহসান উল্লাহ পাটওয়ারী রহ.। মাতা নাম–জয়নব বানু। মনাই হাজীর দৌহিত্র। তাঁর একমাত্র বোনের নাম খাদিজা বানু। সহধর্মিণীর নাম-ফজিলাতুন নেছা। স্বল্পবয়সেই তিনি পিতৃহীন হন।

হযরত মুকিম উদ্দিন রহ. বংশের শেষ পুরুষ হাজী মনিরউদ্দিন ওরফে মনাই হাজী (রা.) সুন্নাতে রাসুল (সা.) হিসেবে ব্যবসায়ী গড়ে তোলার লক্ষ্যে দোকান ঘর নির্মাণ রার পরিকল্পনা করেন। তিনি বর্তমান মসজিদের পূর্ব- দক্ষিণ গেটের দক্ষিণাংশে আহমদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) মাজারের একটু পূর্ব সীমানায় সে সময়কার নালা-খালের উভয়পারে ঘর এবং গোলপাতা দিয়ে একটি একচলা দোকান ঘর তৈরি করেন। হাজী সাহেবের দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি-যেমন চাল, ডাল, তৈল ও লবণ ইত্যাদি সুলভ মূল্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেন। ‘হাজী’র দোকান হতে লোকজন কেনাকাটা করত। লোকে-মুখে হাজীর দোকানের সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

পর্যায়ক্রমে সকলের পরম শ্রদ্ধেয় মনাই হাজী রহ. দোকান ঘরের উছিলায় ও সু-খ্যাতিতে ‘হাজী সাহেবের দোকান’ থেকে ‘ হাজীর দোকান’ অত:পর ‘ হাজীর হাট’ ও ‘ হাজীর বাজার’। যা কালক্রমে ‘ হাজীগঞ্জ বাজার’ হিসেবে নামকরণ পূর্বক প্রসিদ্ধি লাভ করে। ’এরই ধারাবাহিকতায় ১৮১৮ সালে বৃটিশ সরকারের সময় ‘হাজীগঞ্জ ’নামেই থানা স্থাপিত হয়।

১৮৯৫ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম-কুমিল্লা ১শ ৫০ কি.মি মিটার গেজ লাইন এবং লাকসাম-চাঁদপুর পর্যন্ত ৬৯ কি.মি রেল লাইন স্থাপিত হয়। লাকসাম-চাঁদপুর লাইনে স্টেশন হিসেবে ‘ হাজীগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন ’ তৈরি করা হয় এবং মাইল স্টোনে নামকরণ করা হয় ‘হাজীগঞ্জ ’।

আনুমানিক তেরশ’ অব্দে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের ভিত্তি সূচনা করেন তিনি । কলকাতা আলিয়া মাদরাসার তৎকালীন হেড মাও.শামসুল উলামা ছফি উল্লাহ’র নিকট হতে মসজিদ নির্মাণে দোয়া লাভ করেন। অত:পর মাও.আবুল ফারাহ জৈনপুরী রহ. ১৭ আশ্বিন ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে পাকা মসজিদ যা আজকের হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ এর ভিত্তিস্থাপন করেন। সে মতে ১৯১৬ সালে। তিনি মর্মর পাথর বসান ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ মতে ১৯২৩ সালে। মসজিদ নির্মাণে তাঁর সময় লেগেছে ১৯১৬-১৯২৩ মোট ৭ বছর। পাকাকরনের পর মসজিদ ঊদ্বোধন হয় ১০ অগ্রহায়ণ ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ।

১৯৩৫ সালের শেষ দিকে তিনি নিজে ত্রিপুরার কলকাতায় গিয়ে তৎকালীন ওয়াকফ এস্টেটে মসজিদের জায়গা ওয়াকফের জন্যে আবেদন করেন। ২১ জানুয়ারি ১৯৩৬ সালে তা অনুমোদন লাভ করে। সেই থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠাতা ওয়াকীফ হিসেবে মোতওয়াল্লীর মর্যাদা লাভ করেন। তিনি একনাগারে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ৩২ বছর মোতওয়াল্লীর দায়িত্ব পালন করেন। এ জন্যে তাঁর বাড়িটিকে সবাই মকিমাবাদ গ্রামের ‘ মসজিদ বাড়ি ’ হিসেবে জানতেন। এরপর মিনারের কাজ তিনি নিজে শুরু করেন ১৯৫৩ সালে এবং এর কাজ শেষ হয় ১৯৫৭ সালে।

১৯৩১ সালে মসজিদের পাশে আহমদিয়া দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। পুরাতন ঢাকার আলিয়া নেসাবের মুহাসনিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ শামসুল ওলামা মাও.আবু নছর ওয়াহিদ উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মসজিদের জন্য যোগ্য খাদেম ও মুসল্লী তৈরি করার লক্ষ্যে তিনি হাজীগঞ্জ দারুল উলুম সিনিয়র মাদরাসা নামে ১৯৩১ সালে আলিয়া নেছাবের একটি মাদরাসা মসজিদের দক্ষিণ পার্শে নির্মাণ করেন।

যা পরবর্তীতে ১৯৪১ সালে ফাজিল,১৯৯৫ সনে প্রতিষ্ঠাতার পৌঢ়পুত্র অধ্যক্ষ ড.আলমগীর কবির পাটোয়ারীর প্রচেষ্টায় কামিল পর্যায়ে উন্নীত হয় এবং তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টায় মাদরাসাটি বর্তমান স্থানে ভৌতিক অবয়বে পুন:স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা মোতওয়াল্লী আলহাজ্ব আহমাদ আলী পাটোয়ারী রহ.এর স্বপ্ন বাস্তবায়নে অধ্যক্ষ ড.আলমগীর কবির পাটোয়ারীসহ গভর্নিং বডি নিরলস পরিশ্রম চালিয়ে আসছেন। সম্পূর্ণ দ্বীনি পরিবেশে বালক-বালিকাদের পৃথক শাখায় পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আলিম শ্রেণি পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগ চালু আছে।

৩০ এপ্রিল ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দ, ১৩৭৫ বঙ্গাব্দের ১৭ বৈশাখ সোমবার সকাল পৌনে ৯ টায় মানবতার এ মহান সেবক, হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদসহ ওয়াকফ এস্টেটের প্রতিষ্ঠাতা ও হাজীগঞ্জবাসীর গর্বিত সন্তান, মোতওয়াল্লী, সততার অনন্য প্রতীক,বিরল ব্যাক্তিত্ব ,নিবেদিত প্রাণ, আদর্শবান,ওয়াকীফ, অমর,কালজয়ী কিংবদন্তী,দুর-দৃষ্টিসম্পন্ন ও দানবীর আলহাজ্ব আহমাদ আলী পাটওয়ারী রহ.ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল কারো কারো মতে ১০৫ কিংবা ১০৭ বছর।

আবদুল গনি
৩০ এপ্রিল ২০২৫
এজি