চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের মুন্সিকান্দি গ্রামে করোনার উপসর্গ (জ্বর, বমি, পাতলা পায়খানা) নিয়ে জুলেখা (৫৫) মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধা মারা গেছেন।
৪ এপ্রিল শনিবার দুপুরে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা এসে মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। জুলেখা মুন্সিকান্দি গ্রামের মৃত হোসেন পাঠানের মেয়ে। তার কোনো স্বামী সংসার ছিলো না।
শুক্রবার মধ্য রাতে তিনি মারা যান। এ ঘটনার পর শনিবার সকাল থেকে মহিলার বাড়িসহ আশপাশের ৫টি বসতঘরসহ বাড়িটি লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
বিকেল ১টার সময় তাকে প্রশাসনের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন করা হয়েছে। তবে দাফনের তায়িত্বে ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন জুলেখার ভাতিজা রাজিব, মামাতো ভাই আল-আমিন, ফয়সাল ও সাইফুল নামে এই ৪ আত্মীয় দাফনের কাজে ছিলেন বলে জুলেখার পরিবার সূত্রে জানা যায়।
এদিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে বৃদ্ধা মারা যাওয়ার খবর শুনে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ডা.নুশরাত জাহান মিথেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (এমওডিসি) ডা.মোঃ আল-আমিন, নমুনা সংগ্রকারী মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (এমটিইপিআই) ভাষান চন্দ্র কীর্তনীয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে মারা যাওয়া নারীর নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর-এ পাঠানো হয়েছে করোনা টেস্টের জন্য।
এসময় দূর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান আবুল খায়ের,দূর্গাপুর ইউনিয়নের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নার্গিস আক্তার স্থানীয় প্রশাসন উপস্থিত ছিলেন।
মানসিক ভারসাম্যহীন জুলেখার ভাতিজা রাজিব জানান, জুলেখা আমার ফুফু। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। গত ৩ দিন আগে নারায়নগঞ্জ থেকে আমাদের বাড়িতে আসেন। সে আমাদের লাড়কি হাঁস-মুরগির রাখার ঘরে এসে থাকেন। শনিবার রাত সাড়ে ১২টার সময় সে কিছুটা জ্বর, বমি, অস্বাভাবিক শব্দ করে। রাতে আমরা দেখে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে উঠে দেখি ফুফু মারা গেছেন। তারপর ইউপি চেয়ারম্যানকে খবর দিলে তিনি বিষয়টি প্রশাসনকে জানায়। পরে দুপুরের দিকে হাসপাতাল থেকে ডাক্তারা এসে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর-এ পাঠানো হয়েছে করোনা টেস্টের জন্য। এসময় আমাদের বাড়িসহ আশপাশের ৫-৭টি বাড়ি লাল নিশানা দিয়ে লকডাউন ঘোষণা করে। তারা এসময় আমাদেরকে ৪টি পিপিই ড্রেস দেয় ফুফুকে দাফনের জন্য। আমার ফুফুকে বিকেল ১ নটার সময় নিরাপদভাবেই দাফন করা হয়।
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুসরাত জাহান মিথেন বলেন, সিভিল সার্জনের নির্দেশে ওই নারীর মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তিন বাড়ির ২০-২৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএম জহিরুল হায়াত বলেন, করোনা শনাক্তে মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর-এ পাঠানো হয়েছে করোনা টেস্টের জন্য। এ পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পরে জানা যাবে। তাতে মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধা করোনা শনাক্ত হলে ওই এলাকা লকডাউন করা হবে। আপাতত ৫-৭টি ঘর লকডাউন করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পরিবারকে খাদ্য সরবরাহ করা হবে।
প্রতিবেদক : খান মোহাম্মদ কামাল, ৪ এপ্রিল ২০২০