শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে শক্তিশালী চাইনিজ তাইপেকে ৪-২ গোলে হারিয়ে মূল পর্ব নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।
৫ সেপ্টেম্বরের নিজেদের শেষ ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে খেলতে হলেও গোলে ব্যবধানে এগিয়ে থেকে চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
ফলে অনূর্ধ্ব-১৬তে কৃষ্ণা, মার্জিয়ারাই প্রথম যারা লাল-সবুজের হয়ে ২০১৭ সালে চিনে খেলবে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বের খেলা।
শক্তিশালী চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে মূল পর্বে উঠার লড়াইয়ে ম্যাচের একেবারে শুর থেকেই আক্রমনাত্মক খেলা খেলতে থাকে বাংলাদেশের কিশোরিরা।
প্রথমার্ধের ২ মিনিটে অধিনায়ক কৃষ্ণা একাই চাইনিজ তাইপের গোলবারের বাঁদিক দিয়ে গিয়েছিলেন জালে বল জড়াতে। কিন্তু তার কিছুটা এলোমেলো শটটি লক্ষ্যে না পৌঁছালে গোল বঞ্চিত হয় স্বাগতিকরা।
কম যায় না তাইপেও। পরের মিনিটেই বেশ সংঘবদ্ধভাবে গিয়েছিল স্বাগতিকদের রক্ষণ ভাঙতে কিন্তু শিউলি, নারগিসদের দৃঢ়তায় গোলবঞ্চিত হয় তাইপে।
তবে প্রথমবার গোলবঞ্চিত হলেও ১১ মিনিটে ঠিকিই সফলতা পায় চ্যাং লি চুয়ানের শিষ্যরা। বক্সের ৩৫ গজ দূর থেকে অধিনায়ক সু ইউ সুয়ানের দুর পাল্লার শটে গোলরক্ষক মাহমুদা পরাস্ত হলে ১-০তে এগিয়ে যায় চাইনিজ তাইপে।
শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে সমতায় ফিরতে আক্রমণের পসরা সাজিয়ে প্রতিপক্ষের সীমানায় ঝাঁপিয়ে পড়ে লাল-সবুজের কিশোরিরা। সানজিদা কৃষ্ণাদের কাঁপন ধরানো এক একটি আক্রমণে কেঁপে উঠেছে সু ইউ সুয়ানদের রক্ষণদূর্গ।
২৫ মিনিটে চিনচিও বক্সের ভেতরে কৃষ্ণাকে ফাউল করে বসেন, দেখেন টানা দ্বিতীয় হলুদ কার্ড। ফলে লাল কার্ডের কালিমা নিয়ে বেরিয়ে যান মাঠ থেকে আর ১০ জনের দলে পরিণত হয় চাইনিজ তাইপে, পেনাল্টি পায় বাংলাদেশ।
আর সেই পেনাল্টি থেকে পায়ের কৌশলী ছোঁয়ায় জালে বল জড়িয়ে দলকে ১-১ এ সমতায় ফেরান রক্ষণভাগের শামসুন্নাহার।
এরপর ৩৭ মিনিটে আবার পেনাল্টি পায় গোলাম রব্বানি ছোটনের শিষ্যরা। পাল্টা আক্রমণ থেকে জালে বল জড়াতে গেলে লাল সবুজের অধিনায়ক কৃষ্ণাকে বক্সের ভেতরে ফাউল করেন চাইনিজ তাইপে অধিনায়ক সু ইউ সুয়ান। ব্যাস!
৩৯ মিনিটে এবারও পেনাল্টি শট নেন শামসুন্নাহার। তার জোড়ালো ও মাপা শটটি গিয়ে চুমু খায় চাইনিজ তাইপে জালে আর বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ২-১এ। প্রথমার্ধের শেষ সময় পর্যন্ত এই ব্যবধান ধরে রেখে বিরতিতে যায় কৃষ্ণা, সানজিদারা।
বিরতির পর যেন আরও ক্ষুরধার ও গোছালো বাংলাদেশ। মুহুর্মুহু এক একটি আক্রমণে একদিকে যেমন ভীতি ছড়িয়েছে প্রতিপক্ষ শিবিরে তেমনি উল্লাসের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছে লাল-সবুজের গ্যালারিতে।
তেমনই ধারালো ও গতিময় এক আক্রমণ রচনা করে ৫৬ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে অনুচিং মোগিনির বাড়ানো বল থেকে অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকার বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে গোলরক্ষক ওয়াং তু তিংকে পরাস্ত করে দলকে এনে দেন ৩-১ এর ব্যবধান।
এখানেই দমে যায়নি লাল-সবুজের ফুটবলের দিন বদলের সারথীরা। আরও নতুন উদ্যমে চেয়েছে ব্যবধান বাড়াতে। সেই যাত্রায় সফলও হয়েছে ছোটনের শিষ্যরা।
৭৮ মিনিটে সানজিদার কর্ণার থেকে চাইনিজ তাইপে গোলবারের একেবারে সামনে জটলার ভেতর থেকে জালে বল জড়াতে চেয়েছিলেন স্বাগতিক আক্রমণ ভাগ শিবির। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই জটলা থেকে ভুল করে নিজেদের জালে বল জড়িয়ে বসেন ডিফেন্ডার টেং পেই লিন। আর তাতেই ৪-১ এর বড় ব্যবধানে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
এরপর খেলায় ফিরতে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সীমানায় আক্রমণ রচনা করেছে চাইনিজ তাইপে। ৮৭ মিনিটে উ ইউ জু’র প্লেসিং শটে বাংলাদেশ জালে বল ঠেলে ব্যবধান কমায় ৪-২ এ।
৪-২ এ ব্যবধান কমানোর ব্যবধান আরও কমাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে চিং লি চুয়ানের শিষ্যরা। কিন্তু তাদের প্রতিটি প্রচেষ্টা শিউলি, শামসুন্নাহার ও নারগিসদের গড়া রক্ষণে প্রতিহত হলে হারের গ্লানি নিয়ে মাঠ ছাড়ে তাইপে আর জয়ের আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিক বাংলাদেশের কিশোরিরা।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৮:৪০ পি,এম ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬,শনিবার
ইব্রাহীম জুয়েল