প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা-নির্যাতন ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ‘মুসলমানদের হত্যা করার প্রবণতা বিশ্বব্যাপি দেখছি। আইনালদের আমরা লাশ হতে দেখি। মুলসমানদের শরণার্থী হতে দেখি। সব মুসলিম দেশ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারত তাহলে এই অত্যাচার হতে পারত না। আমরা অন্যের হাতের খেলার পুতুল কেন হব। কিন্তু আমরা সেটাই দেখতে পাচ্ছি।’
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অব্যাহত হত্যা ও নির্যাতন বন্ধে আনীত কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ (১) বিধি অনুসারে নোটিশের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন তিনি।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এই প্রস্তাব আনেন। আলোচনা শেষে সংসদে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে যারা আশ্রয় নিয়েছে তাদের সকলকে ফিরিয়ে নিতে হবে। নিরাপদ জোন তৈরি করে নিরাপত্তা দিতে হবে। কফি আনানের সুপারিশ গ্রহণ করতে হবে। সুপারিশ নিয়ে যদি কোনো আপত্তি থাকে আলোচনা করতে হবে।
এই সমস্যা মিয়ানমার সৃষ্টি করেছে, এটির সমাধান তাদেরকেই করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা সহযোগিতা করব। ১৬ কোটি মানুষকে আমরা খাবার দেই দুই-চার পাঁচলাখ লোককে আমরা খাবার দিতে পারব। তবে এটা সাময়িক ব্যবস্থা- বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারের নাগরিক সেটা তো সবারই জানা। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গাদের সমান অধিকার নিয়ে রেডিওতে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৪ সালে মিয়ানমারের মিলিটারি জান্তা এই রোহিঙ্গাদের সব অধিকার কেড়ে নেয়। ২০১৫ সালে এসে তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়। একটি জাতির প্রতি তারা কেন এ ধরনের আচরণ করছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বারবার ফিরিয়ে নেয়ার অনুরোধ জানানোর পরও তারা ফিরিয়ে না নিয়ে বরং নতুন করে নির্যাতন শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, তাদের একটি গোষ্ঠী আছে যারা মিয়ানমারের মিলিটারি ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী বর্ডার গার্ডের ওপর হামলা চালায়। এরপর সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমার। এই নির্যাতন এখন এমন পর্যায়ে গেছে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। নাফ নদীতে শিশুর লাশ ভাসছে। গুলি খাওয়া মানুষের লাশ ভেসে আসছে। নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জন্য কঠিন এতগুলো মানুষকে আশ্রয় দেয়া। কিন্তু আমরা তো ফেলে দিতে পারি না। তাই আমরা এদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি। আমরা চাই তারা নিজ দেশে চলে যাক।
তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারকে আমরা এটাই বলব, শতশত বছর ধরে সেখানে অবস্থান করা তাদের নাগরিকদের হঠাৎ করে সব অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। এর ফলাফল কী হতে পারে সেটা কি তারা ভেবে দেখেছে?
এটা সত্য কথা এক সময় আমাদের সীমান্ত সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করা হত। কিন্তু এখন তা হচ্ছে না। আমরা কখনও এ ধরনের কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করব না।
আমি এ কথাটা বারবার মিয়ানমার সরকারকে বলেছি, রোহিঙ্গাদের পুর্নবাসনের কাজে সহযোগিতা করব। অত্যন্ত দুঃখের কথা ফেরত নেয়া তো দূরের বিষয় তাদের হত্যা করা হচ্ছে।
অং সান সুচি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভেবে দেখতে হবে তার (সুচির) কোনো কিছু করার ক্ষমতা আছে কি না।
মিয়ানমারকে এটা স্পষ্টভাবে মানতে হবে এরা মিয়ানমারের নাগরিক। বাঙালি বলেই তাদের তাড়িয়ে দেবেন এটা কেমন কথা। তারা তো বার্মিজ। ভাষা আলাদা। সংস্কৃতি আলাদা।
পুলিশ বা আর্মি মেরে তারা (বিদ্রাহীরা) কী অর্জন করছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তারা বোঝে না তাদের জন্য লাখ লাখ মানুষের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। শিশু মরছে। তারা কেন এই সুযোগ করে দিচ্ছে। এর জন্য যারা অস্ত্র যোগান দিচ্ছে তারাই লাভবান হচ্ছে। এই সন্ত্রাসীদের কারণে লাখ লাখ মানুষ গৃহহারা হচ্ছেন।
মিয়ানমারের সরকারের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা অপরাধী তাদের খুঁজে বের করুন। এদের কথা বলে সাধারণ মানুষকে হত্যা করবেন, শিশু হত্যা, নারীদের নির্যাতন করবেন এটা আমরা মেনে নিতে পারি না।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১ : ৫০ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সোমবার
এইউ