করোনা এসে দুনিয়াজুড়ে যত খেল দেখাচ্ছে, এর মধ্যে মাস্ক নিয়ে রশি টানাটানি জমেছে বেশ। জুত করে বসে মজায় মজায় এ খেলা দেখছে পাজির পা-ঝাড়া করোনা। এ যেন যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সেই ‘কাজের ছেলে’ কবিতার দুটি চরণ, ‘বাহবা বাহবা ভোলা ভুতো হাবা খেলিছে তো বেশ।দেখিব খেলাতে, কে হারে কে জেতে, কেনা হলে শেষ।’
মুখে মাস্কের ব্যবহারে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কতটা সফল, এ নিয়ে বিতর্কেরও শেষ নেই। ধন্দের ধাঁধা আছে ষোলো আনাই: মাস্ক পরব কি পরব না? আর ব্যবহার করলে কোন মাস্ক? সস্তার ওয়ানটাইম সার্জিক্যাল মাস্ক, না দামি এন ৯৫ মাস্ক, নাকি মধ্যম দামের গেঞ্জি বা সুতি কাপড়ের মাস্ক?
জলজ্যান্ত সত্য কথাটা হচ্ছে করোনা এখন গোটা বিশ্বেই গ্যাঁট হয়ে আছে। করোনা ঝুলছে, দুলছে, কানের কাছে সেকালের গ্র্যান্ডফাদার ক্লকের মতো ঢং ঢং করে ঘণ্টা বাজাচ্ছে, যমদূত হাজির! তবে বাস্তবে যে সমস্যা অষ্টপ্রহর ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো ঝুলে থাকে, তা নিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো নানা মুনির নানা মত জন্মে। রুচি আর অনুভূতিই-বা বিভেদ ভুলে থাকবে কেন? তাই একজন যেখানে মাস্ক পরে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অন্যজনকে মাস্ক পরিত্যাগে গোঁয়ারগোবিন্দ না হলেই নয়। মাস্ক তার কাছে ঘোড়ার লাগাম বা গরুর গুমাই ছাড়া আর কী? কারও-বা আছে ভয়ানক ফোবিয়া। মাস্ক পরলেই দম বন্ধ হয়ে আসে। চোখে ভাসে মাচা ভরা পটোল, কেবল তুলে নেওয়ার অপেক্ষা। মুখগহ্বরের হাওয়ায় যাদের সমস্যা, নাসারন্ধ্র রক্ষায় তারা মাস্কবিমুখ হলে সে দায় কে নেবে? আর মাস্ক পরে হ্যাঁচ্চো? সে যত শাবাশই দিই না কেন, কাজটা মোটেই প্রীতিকর কিছু নয়।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই তারা বলেছিল, সুস্থ মানুষের মাস্ক পরার দরকার নেই। এটি আবশ্যক বলে কোনো প্রমাণ মেলেনি। এরপরই আবার তারা ঘোষণা করে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গণজমায়েতের স্থানগুলোয় সবার মাস্ক পরা দরকার।
ভাবগতিকে করোনার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবস্থান লাঠি ভর করা বুড়োর মতো, যে লাঠি কুটকুট করে ঘুণপোকার মতো খেয়ে দিচ্ছে এ ভাইরাস।
কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখি, বেশির ভাগ বিক্রেতার মুখে মাস্ক নেই। শুধু বেশির ভাগ বললে ভুল হবে। বলা যায়, ৯০ ভাগেরই মাস্ক নেই। অল্প যে কজনের আছে, তাঁরা হয় থুতনিতে ঝুলিয়ে, নয়তো পকেটে পুরে রাখেন মাস্ক। কেউ কেউ পয়সা উশুলের ঢঙে মাস্কটাকে রুমালের কাজেও লাগান। আর সামাজিক দূরত্ব? তার তো কবেই চাট্টিবাট্টি গোল।
এক মাছ বিক্রেতাকে বললাম, ‘মাস্ক কই?’
তিনি এমনভাবে হাসলেন, যেন এর মতো রঙ্গের কথা আর শোনেননি। তাঁর হয়ে জবাব দিলেন মাস্ক না পরা পাশের বিক্রেতা, ‘এই হগল পইরা ব্যবসা চলে না। মুখে এই ত্যানাকাপড় থাকলে আপনেরা আমগোর কথা বুঝতে পারবেন না।’
বার্তাকক্ষ, ২৬ আগস্ট ২০২০
কে. এইচ