কায়রো (মিশর) থেকে: বয়স সবে ২৮। নীল নদের দেশ মিশরেই আছেন আট বছর। এসেছিলেন উচ্চ শিক্ষা নিতে। নবম শতাব্দিতে প্রতিষ্ঠিত কায়রোর বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছেন আরবি সাহিত্য অনার্স ডিগ্রি।
এখন কায়রোতে বসেই তিনি ক্লাস নেন ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডার নানা অঞ্চলে। এক রাতেই বার্সেলোনা থেকে ফ্লোরিডা হয়ে টরোন্টো ঘুরে ক্লাস নেন তিনি!
পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি পিরামিড। সেই দেশে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মুখে এ কথা শুনে আশ্চর্যই হতে হয়।
আশ্চর্যে আড়মোড়া ভেঙ্গে দিলেন নিজেই। বললেন, অবাক হবার কিছুই নেই। আমি নিয়ম করে প্রতি রাতেই ক্লাস নিই। তবে সেটা তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে, স্কাইপে এর মাধ্যমে। আর এভাবে বাড়তি আয় রোজগারও হয় বেশ।
কায়রোতে থাকা এই মেধাবী শিক্ষার্থীর নাম আবদুল্লাহ আব্দুর রশিদ। ঢাকার দক্ষিণ খান আশকোনা হাজি ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ মুন্সীর ছেলে আবদুল্লাহ আব্দুর রশিদ। উচ্চ শিক্ষার জন্যে শিক্ষা বৃত্তি নিয়ে নীল নদের দেশে পাড়ি দেন ২০০৯ সালে। ভর্তি হন আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে নেতৃত্ব দেন এ দেশে পড়তে আসা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংগঠন বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন ইন ইজিপ্ট এর। সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে সে সময়ে তার অবদানের কথা এখনো স্মরণ করেন অনেকে।
এরই মধ্যে কায়রো ইউনিভার্সিটি থেকে প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ টিচিং এ ডিপ্লোমা, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন ফর আল আজহার গ্রাজুয়েটস থেকে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট লিডারশিপে ডিপ্লোমা এবং দ্য ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর আরব ইসলামিক স্কুল থেকে অ্যারাবিক টিজিং এ ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
আবদুল্লাহ আব্দুর রশিদ জানান, প্রথম দিকে লেখাপড়ার খরচ হিসেবে প্রতি মাসে দেশ থেকে একশ’ ডলার করে পাঠানো হতো। পরে নিজেই নানা কাজ করে সেই ব্যয় নির্বাহ করে দেশেও টাকা পাঠাতেন।
আরবি ভাষায় দক্ষতা, ইতিহাস ঐতিহ্যের ওপর ভালো দখল থাকায় পিরামিডের দেশে ট্যুর গাইড হিসেবেও ভালো কাজ করেছেন তিনি।
মিশরে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার (আইওএম) দোভাষি হিসেবে কাজ করেও সুনাম কুড়িয়েছেন এই যুবক।
দিনভর পড়াশোনাসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকলেও সন্ধ্যার পর নিজের বাসায় ছোটেন তিনি। স্কাইপ এর মাধ্যমে রাত ৯টা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত আমেরিকার ফ্লোরিডা, কানাডার টরেন্টো, স্পেনের বার্সেলোনা ছাড়াও কায়রোর অনলাইন ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলে ক্লাস নেন তিনি।
শিক্ষার্থীরাও নানা বয়সী। এদের মধ্য যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে ষাটোর্ধ্ব সাইয়েদ হক রয়েছেন। তিনি শেখেন অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ।
এসব করে মাসে পাঁচশ’ ডলার আয় করেন তিনি। যা বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে সরাসরি জমা হয় বাংলাদেশের ব্যাংকে।
আবদুল্লাহ আব্দুর রশিদের জানান, আসছে আগস্টে তিনি ব্রুনাইয়ের বন্দরসেরিতে সুলতান শারিফ আলী ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড ইসলামিক সিভিলাইজেশন বিষয়ে মাস্টার্স এবং পিএইচডি সম্পন্ন করবেন।
নিজের জ্ঞান আর মেধাকে বিকশিত করে কানাডার মতো উন্নত দেশের নামিদামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চান তিনি।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০: ২০ এএম, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ