মঙ্গলবারহজে লোক পাঠানো এজেন্সিগুলোর সংগঠনগুলোর সমিতির এই নেতার দাবি, আরও অন্তত ৯০ জনের সন্ধান মিলছে না।
এদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিনায় গত বৃহস্পতিবার ১০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার কথা তাদের পরিবারগুলো জানিয়েছে। আর নিখোঁজের সংখ্যা ৯৮ জন।
সোমবার হাব ও ধর্ম মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানানোর আগের দিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, নিহতদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি বলে শনাক্ত করেছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ।
ওই তিনজনের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি খুলনার সোনাডাঙ্গার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম। বাকি দুজনের পরিচয় জানা যায়নি।
এ বছর হজের আনুষ্ঠানিকতার শুরুতে মসজিদুল হারামে ক্রেইন উল্টে পড়ে ১১৭ জনের মৃত্যুর পর মিনায় জামারাতে প্রতীকী শয়তানের প্রতি পাথর ছোড়ার সময় পদদলিত হয়ে ৭৬৯ জন মারা যান।
সৌদি আরব সরকার এখনও নিহত সবার পরিচয় প্রকাশ করেনি। রোববার পর্যন্ত ৬৫০ জনের নামের একটি তালিকা দেওয়া হয়, যার মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি বলে শনাক্ত করা হয়।
হাব সভাপতি ইব্রাহিম বাহার সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৮ জন মারা গেছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।
“এর মধ্যে ১১ জনের তথ্য জেনেছি সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে। বাকিদের বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য জানাচ্ছে না।”
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না পেয়ে নিশ্চিত না হওয়ায় কারণে অন্তত ৭ জনের বিষয়ে দূতাবাসের নিশ্চিত করেনি বলে জানান তিনি।
পদদলনের ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে নয়জনের মৃত্যুর খবর তাদের পরিবারের কাছ থেকেও এসেছিল।
মিনায় পদদলনের ঘটনার পর হতাহতদের সরিয়ে নিচ্ছে উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: রয়টার্স
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. বোরহান উদ্দিন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নিহতদের চিহ্নিত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সৌদি আরব থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয় আলাদা কোনো তথ্য পায়নি জানিয়ে হজের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, “আপনারা যে সব উৎস থেকে পাচ্ছেন, আমরাও সেভাবে পেয়েছি।
“১০ জন নিহত বলে সংবাদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনজনের পরিচয় সৌদি আরব থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকি যেগুলো শোনা, সেটা আত্মীয়-স্বজনরা টেলিফোন করছেন।
মোয়াল্লেম, হজ এজেন্সি ও সঙ্গের হাজিদের সঙ্গে কথা বলে পরিবারের সদস্যরা এই নিহত ও নিখোঁজের খবরগুলো দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
৯৮ জন নিখোঁজের তথ্য জানলেও আহতদের কোনো তথ্য নেই মন্ত্রণালয়ের কাছে।
যুগ্ম সচিব বোরহান বলেন, “হাজিদের চিহ্নিত করার জন্য সঙ্গে কব্জি বেল্ট থাকে, পাসপোর্ট থাকে। তবে অনেকে কব্জি বেল্টও নিয়ে যায় না। তারা মনে করে, হারাব না। হারালে জায়গা মতো চলে আসতে পারব।
“ডকুমেন্টগুলো না থাকায় সেখানে কাজ করা ব্যক্তিরা আহত-নিহতদের চিহ্নিত করতে ঘর্মাক্ত হয়ে যাচ্ছেন।”
লাশ আনা বা সেখানে দাফনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে যুগ্ম সচিব বলেন, “আত্মীয়-স্বজনদের উপর নির্ভর করবে যে, ডেডবডি নিয়ে আসবে নাকি ওখানে সমাহিত করবে। সরকারিভাবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”
হাব সভাপতি বলেন, “৯০ জনের এখনও কোনো হদিস মেলেনি। ২৫ জন বিভিন এখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে আমরা জানি। এর আগেও ৩০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।”
দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ নিয়ে সৌদি আরব কিছু বলছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “সৌদি সরকার কিছু না বলায় আমাদের মিশনও কূটনৈতিক কারণে কিছু বলছে না।”
মিনায় পদদলনের ঘটনার জন্য অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে ইরানের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে তদন্তের দাবি তুলেছেন।
অন্যদিকে হুড়োহুড়ির ওই ঘটনার জন্য একদল ইরানি হজযাত্রীকে দায়ী করে প্রতিবেদন এসেছে সৌদি গণমাধ্যমে।
ইব্রাহিম বাহার বলেন, “আমরা হাজিদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, মিনার একমুখী রাস্তাটিকে দ্বিমুখী করার কারণে কিছুটা হুড়োহুড়ি সৃষ্টি হয়েছিল। একজন সৌদি প্রিন্স সেখানে আসায় ওই সময় একটি রাস্তা বন্ধ করায় এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।”
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ডা. বোরহান উদ্দিন জানিয়েছেন, বাংলাদেশের হাজিরা সৌদি আরবে পৌঁছার পর পরই হজ এজেন্সিগুলো তাঁদের পাসপোর্ট নিয়ে যায়। হাজিদের হাতে একটি বেল্ট পরিয়ে দেওয়া হয়, যেখানে নাম-পরিচয় থাকে। সাধারণত কিছুদিন পর যাওয়া-আসার পথ বুঝে গেলে অনেক হাজি হাতের বেল্টটিও খুলে ফেলেন। হাতবেল্ট ও পাসপোর্ট না থাকায় বাংলাদেশি হাজিদের পরিচয় জানতে কষ্ট হচ্ছে।
|| আপডেট: ০১:৩০ পূর্বাহ্ন, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫,চাঁদপুর টাইমস-ডিএইচ/২০১৫।