পদ্মা-মেঘনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে চলা ২২ দিন মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মা ইলিশ রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছেড়েছে বলে জানিয়েছেন ইলিশ গবেষক আনিসুর রহমান ।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইলিশ গবেষক আনিসুর রহমান জানান, তাদের অনুসন্ধান বলছে, ৫১.২ শতাংশ ইলিশ ডিম ছেড়েছে এবার। এর আগে কখনও এত বেশি ইলিশ ডিম ছাড়েনি। মৎস্য গবেষকদের তিনটি দল যৌথভাবে কাজ করে এই ফলাফল নিশ্চিত করেছে।
নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের বিভিন্ন নদনদীতে প্রায় ৫১.২ শতাংশ ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ। ফলে এ মৌসুমে প্রায় ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি ইলিশের পোনা (জাটকা) পাওয়া যাবে। আগামী মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা সংরক্ষণ করা সম্ভব হলে ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।
ইলিশ গবেষক ড. আনিস বলেন, ইলিশ মাছ পরিভ্রমন স্বভাবের। প্রজননের সময়টাতে ইলিশ সাগছ ছেড়ে সাগর মোহনা ও নদ-নদীতে ছুটে আসে। প্রজননের মৌসুমে ইলিশের অভয়াশ্রম কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে প্রতিবছর দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছর সঠিক সময় ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করায় এবং নদীতে ভালো অভিযান হওয়ায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার সর্বোচ্চ পরিমানে ইলিশ ডিম ছেড়েছে।
তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোর দিকে নজর দিলে দেখা যায় প্রতি বছরই মা ইলিশের ডিম ছাড়ার পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৬ সালে ৪৩.৪৫ পারসেন্ট, ২০১৭ সালে ৪৬.৪৭ পারসেন্ট, ২০১৮ সালে ৪৭.৭৫ পারসেন্ট এবং ২০১৯ সালে ৪৮.৯২ পারসেন্ট ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। এবছর ৫১.২ পারসেন্ট মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২ পারসেন্টেরও বেশি ইলিশ ডিম ছেড়েছে। মৎস্য গবেষকদের ৩টি গ্রুপ যৌথভাবে কাজ করে এই ফলাফল নিশ্চিত করেছেন বলে জানান তিনি।
ড. আনিস বলেন, এবছর যে পরিমানে ডিম ছেড়েছে তার ১০ পারসেন্টও টিকানো গেলে আগামী মৌসুমে প্রায় ৩৭ হাজার ৮শ’ কোটি জাটকা পেতে চলছি আমরা। আগামী মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা সংরক্ষণ মৌসুমে অভিযান সফল করা গেলে দেশ ইলিশের প্রাচুর্যে ভড়ে উঠবে। এবছর দেশে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫লক্ষ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। আসন্ন জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রম ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারলে দেশে ইলিশের উৎপাদন সাড়ে ৫লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করছেন এই ইলিশ গবেষক।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী জানান, ২২ দিনব্যাপী মা ইলিশ অভয়াশ্রম কার্যক্রম সফল করতে জেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায় আমরা দিন-রাত নদীতে টহল দিয়েছি। তাছাড়া এবারই প্রথম মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে বিমান বাহিনী ও র্যাব নদীতে অভিযানে যোগ দিয়েছে। সমন্বিত কার্যক্রমের ফলে এবছর অভিযান সফল হয়েছে। তার পরেও কিছু অসাধু জেলে নদীতে ইলিশ ধরেছে।
আসাদুল বাকী জানান, এবছর মোট ২শ’ ৮৫টি অভিযানের মাধ্যমে ৭ কোটি ৪লক্ষ ৪৬ হাজার মিটার কারেন্ট জাল, ৫হাজার ১শ’ ৯২ কেজি ইলিশসহ ৩শ’ ১১ জন জেলেকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত জেলেদের মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ২শ’ ৪৮জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান এবং ৬৩ জনকে মোট ২লক্ষ ৪হাজার ১শ’ টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। দেশে ইলিশের উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় অতীতের ন্যায় কাজ করবে যাবে মৎস্য বিভাগ। বিশেষ করে আগামী জাটকা মৌসুমে আরো কঠোরভাবে নদীতে অভিযান চালানো হবে জানান তিনি।
স্টাফ করেসপন্ডেট,২৭ নভেম্বর ২০২০