চাঁদপুর

মা ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুরে অভিযানে নামছে র‌্যাব

মা ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। চাঁদপুর প্রশাসনও প্রতিদিন নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী জেলেদের জেল-জরিমানা করছে। তাতেও থামছে না অসাধু জেলেরা।

জেলার বিভিন্ন অলিতে গলিতে মিলছে ডিমওয়ালা মা’ ইলিশ। তাই নতুন করে ইলিশ রক্ষায় টাস্কফোর্সে যুক্ত হচ্ছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। পাশাপাশি পুলিশ ও কোস্টগার্ডও থাকবে।

সোমবার (১৫ অক্টোবর) বিষয়টি চাঁদপুর টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি।

তিনি জানান, ‘পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন জেলেরা মা-ইলিশ না ধরে। আমাদের দু’টি টিম কাজ করছে। এদের একটি রাতে অপরটি দিনে। এতেও থামছে মা ইলিশ পূর্ণভাবে রক্ষা করা যাচ্ছে। মা-ইলিশ নিধনের দৃশ্য দেখলে চোখে পানি চলে আসে।’

র‌্যাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ রোববার (১৪ অক্টোবর) জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের মা ইলিশ রক্ষা টাস্কফোর্সের এক সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়। এরইমধ্যে র‌্যাবকে ইলিশ রক্ষায় সম্পৃক্ত করা এবং মেঘনা নদীর সাথে সংযাগকারী সকল খালগুলোর মুখ বিশেষ ব্যবস্থায় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী চাঁদপুরের উপজেলা প্রশাসন নদীর সাথে সম্পৃক্ত চাঁদপুর সদরের যত খাল রয়েছে জাল ভর্তি নৌকাগুলো ভেতরে প্রবেশ করিয়ে তার মুখ বন্ধ করার কাজ শুরু করেছে ।’

জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা প্রসঙ্গে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইলিশের অভয়াশ্রম তথা নদী তীরবর্তী এলাকার জনপ্রতিনিধিরা ইলিশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাদেরকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া আছে। তারপরেও মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি রুদ্ধদার বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

এদিকে মৎস্য বিভাগের এক সূত্রে জানা যায়, ৭ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৮ টি অভিযান ও ৪৬ টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় ২৭ টি মামলায় ২৮ জেলেকে এক বছর করে কারাদ- দিয়ে জেলেও পাঠানো হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে অবৈধ কারেন্ট জাল।

চাঁদপুর মৎস্য বিভাগরে অন্যান্য কর্মকর্তারা বলছেন, ‘প্রতিদিন অন্তত ২শ নৌকা নিয়ে জেলেরা মাছ ধরতে নামছে। সেখানে চারজন পুলিশ নিয়ে মাত্র ১০ জন একটি নৌকায় অভিযান চালাতে পারে। হরিণা এলাকার অলিতে-গলিতে এখন শুধুই মা-ইলিশ। জেলেরা মা-ইলিশ ধরে নিজের পেটে নিজেই লাথি মারছে।’

একমাত্র সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়া মা-ইলিশ রক্ষা করা সম্ভব নয় বলেও জানান তারা।

এদিকে সরকার প্রজনন মৌসুমে মা-ইলিশ রক্ষায় ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের পদ্মা-মেঘনার ৬টি অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। এ নিষেধাজ্ঞাকে সফল করতে জেলেদের মাঝে ভিজিএফের চালও বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, চাল নিয়ে জেলেরা আবার ইলিশ ধরতে নদীতে নামছে।

চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতিরহাট পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকা অভয়াশ্রমের আওতাভুক্ত। অথচ প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে রাত ৮টা থেকে ভোর পর্যন্ত শত শত জেলে নদীতে মা-ইলিশ ধরছে।

বিশেষ করে চাঁদপুর সদরের পুরানবাজার, ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের রামদাসদী খাল, দোকানঘর গুচ্ছগ্রাম, মাদরাসা টাওয়ার, রণাগোয়াল, বহরিয়া, হরিণা, নন্দস খার খাল, গোবন্দিয়া রাঢ়ী বাড়ি এলাকা উল্লেখযোগ্য। এসব এলাকার অলি-গলিতেও বসছে ইলিশের হাট।

এছাড়া মতলব উত্তরের ষাটনল, এখলাশপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ও নদীর ওপারে নিধন করা হচ্ছে মা-ইলিশ। একই অবস্থা হাইমচরেও। যদিও প্রশাসন মা-ইলিশ রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করছে।

তবে চাঁদপুর নৌ-পুলিশ সুপার জামশের আলী জানান, ‘মা-ইলিশ রক্ষায় জেলা প্রশাসন, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, জেলা পুলিশ, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ডের যৌথ সমন্বয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত নদীতে অভিযান ও মোবাইল কোর্ট চলছে। জেলে আটক করে জরিমানা ও কারাদ- দেয়া হচ্ছে।’

তবে তিনি স্বীকার করেন বিশাল এ নদী এলাকার সব জায়গায় প্রোটেক্ট (নিরাপত্তা) দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

প্রতিবেদক- দেলোয়ার হোসাইন
১৫ অক্টোবর, ২০১৮

Share