প্রজনন মৌসুমে ইলিশ রক্ষায় পদ্মা-মেঘনা নদীতে ২২ দিনের অভয়াশ্রম কার্যক্রম শুরু হয়েছে বুধবার দিনগত রাত ১২টার পর থেকে। সরকার ঘোষিত এ কার্যক্রম সফল করনে চাঁদপুরে সচেতনতামূলক সভা এবং ব্যাতিক্রমি নৌ- র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মোলহেড প্রঙ্গনে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয়। এরপর সেখান থেকে পদ্মা-মেঘনা নদীতে ব্যতিক্রমধর্মী একটি বর্ণাঢ্য নৌ- র্যালি বের করা হয়।
ইলিশ সম্পদ উন্নয়র সংরক্ষণ সংক্রান্ত জেলা টাস্কফোর্স কমিটির আয়োজনে সচেতনতামূলক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। বিশেষ অতিথিে বক্তব্য রাখোর, পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ সাইফৃল ইসলাম, চাঁদপুর নৌ- অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে এবং হাইমচর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রশীদের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, এনএসআই চাঁদপুর এর উপ-পরিচালক মোঃ আরমান আহমেদ, জেলা মৎসজীবী লীগের সভাপতি মালেক দেওয়ান, সিনিয়র মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রুমানা ইসলাম, চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ফরিদা ইলিয়াছ, স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর সফিকুল ইসলাম, মৎস্যজীবী নেতা শাহ আলম মল্লিক ও তছলিম বেপারীসহ অনেকে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান বলেন, ‘১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন স রকার ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এসময়ে যেসব জেলে অবসরে থাকবেন, তাদের জন্য সরকার খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি করে চালের ব্যবস্থা করেছে। আইন অমান্য করে কোনো জেলে নদীতে নেমে মা ইলিশ ধরতে গিয়ে আটক হলে তাকে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি জেলে কার্ড বাতিল করা হবে। এটি আমরা স্থানীয়ভাবে চিন্তা করছি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা (জেলেরা) যদি সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে চলেন, তাহলে আমাদের কঠোর হতে হবে না এবং আইন প্রয়োগ করতে হবে না। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে- এ বছর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশসহ সবাই সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেব। কারণ গত বছর জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে বহু জেলে আটক হয়েছেন এবং জেল-জরিমানা হয়েছে। আপনারা যদি আইন না মানেন, তাহলে আমরা সর্বোচ্চ সাজা দিতে বাধ্য হবো।’
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, এ বছর কোস্টগার্ডকে আমরা বলেছি, মতলব উত্তর উপজেলায় একটি অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করতে। শিগগিরই সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। হাইমচর মৎস্য বিভাগ নতুন স্পিডবোট পেয়েছে। এখন থেকে অভিযানে জনপ্রতিনিধিরা সম্পৃক্ত হবেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় অভয়াশ্রম কার্যক্রম চলছে। এ ২২ দিন আপনারা সজাগ থাকবেন। কেউ যাতে মা ইলিশ নিধন করতে না পারে। আপনারা আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করেন।
তিনি আরো বলেন, এবারের অভিযানে কেবল জেলে নয়, ইলিশ বিক্রির সাথে জড়িত বাজার কমিটি, আড়তদার, দাদনদারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ, আইনে বলা আছে বাজারে নিষিদ্ধ জিনিস বিক্রি করা যাবে না। এই সময়ে ইলিশ পরিবহণও নিষিদ্ধ। তাই লঞ্চ, বাসসহ যে সকল পরিবণে ইলিশ বহন করা হবে, সে পরিবহণের মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চাঁদপুর অঞ্চলের নৌ পুলিশের সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বিগত তিন বছর কাজ করে আমার কিছুটা হলেও অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রত্যেক অভিযানে জেলেরা নদীতে নামবেন না বললেও পরে দেখা যায়, দলে দলে নেমে মাছ ধরেন। আইন অমান্য করে জেলার বাইরে থেকেও জেলেরা আসেন। তারা আমাদের তাদের শত্রু মনে করেন। মারমুখী হয়ে আমাদের পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করেন। বিগত অভিযানে আমাদের তিনজন সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। ইলিশ সম্পদ সবার। ইলিশ বড় হলে এ জেলেরাই ধরবেন। তাদের জন্য আমাদের এতো কষ্ট করে অভিযান করতে হয়। আমি আশা করব, আপনারা সবাই মিলে এ অভিযান করতে সহযোগিতা করবেন।
আলোচনা সভা শেষে একটি বর্নাঢ্য নৌ-র্যালী বের করা হয়। জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের নেতৃত্বে নৌ-র্যালীতে জেলে, মৎস্যজীবী নেতা, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, কোস্টগার্ড, ফায়ারসার্ভিস ডিফেন্স ও নৌ-পুলিশ সদস্যরা অংশ নেন।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ১২ অক্টোবর ২০২৩