পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া-ধনাগোদার আর্শির্বাদপুষ্ট দেশের অনন্য এক জেলার নাম চাঁদপুর। নদী বিধৌত এই জনপদ তার গর্ভে ধরেছেন দেশবরেণ্য বহু সূর্যসন্তানকে। যারা দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, চিকিৎসা, শিল্প-সাহিত্য, সাংস্কৃতি কিংবা ক্রীড়া জগতকে সমৃদ্ধ করণে রেখেছেন বিশেষ ভূমিকা। চাঁদপুরর নতুন প্রজন্মের কাছে এই গুণি মানুষদের পরিচয় করিয়ে দিতে ‘চাঁদপুর টাইমস’ এর আয়োজন ‘দ্যুতিময় চাঁদপুর’। ধারাবাহিক এই আয়োজনে আজ থাকছে লেখক ও সমাজহিতৈষী মাহমুদা খাতুন এর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা।
উপমহাদেশে নারী জাগরণের শুরু থেকেই চাঁদপুরের নারীরা সমাজে তাদের স্বপ্রতিভ ছিলেন। এই অঞ্চল তথা এদেশের নারী জাগরণ, সমাজ সংস্কার ও একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। বেগম নূরজাহান, চিত্রানিভাদের উত্তরসূরি প্রফেসর মাহমুদা খাতুন চাঁদপুরের একজন আলোকিত জয়িতা। তিনি বহু প্রতিভার অধিকারী অন্যতম একজন লেখক এবং সমাজহিতৈষী। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘সাহিত্যের প্রিয় প্রসঙ্গ’। অন্য বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য : সুবর্ণ সময়, এসো ছবি অাঁকি (১ম খণ্ড, ২য় খণ্ড) ও কিশোরদের সায়েন্স ফিকশন।
মাহমুদা খাতুন ১৯৩৮ সালে চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার আশ্বিনপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম শাহেদ আলী পাটোয়ারী ছিলেন প্রখ্যাত আইনজীবী, রাজনীতিক ও পূর্ব-পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ডেপুটি স্পিকার। যিনি অধিবেশন চলাকালীন সরকারি ও বিরোধীদলীয় সদস্যদের সংঘর্ষে মৃত্যুবরণ করেন।
মাহমুদা খাতুনের স্বামী চাঁদপুরের প্রথিতযশা চিকিৎসক, কিংবদন্তিতুল্য সমাজসেবক, চাঁদপুর ডায়াবেটিক সমিতির
প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ডা. এম. এ গফুর। দাম্পত্য জীবনে তাঁদের রয়েছে সন্তান। পিতা-মাতার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তিন সন্তানকেই গড়ে তুলেছেন। তাঁদের একমাত্র কন্যা মাহফুজা হক অর্থনীতিতে এমএ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), জ্যেষ্ঠ পুত্র ডা. শাকিল গফুর, এমবিবিএস,
ডিটিসিডি, এমডি (কার্ডিওলজি) রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অধ্যাপক পদে কর্মরত এবং কনিষ্ঠ পুত্র ড. শায়ের গফুর, বিএসসি. (আর্ক) ও পিএইচডি (অক্সফোর্ড) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এ স্থাপত্য বিভাগে প্রফেসর পদে কর্মরত।
মাহমুদা খাতুন ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত চাঁদপুর সরকারি কলেজে এবং ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একটানা ৩২ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের উল্লেখিত দায়িত্বে অধ্যাপনা শেষে ১৯৯৯ সালে স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণ করেন।
প্রফেসর মাহমুদা খাতুন চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালের জমিদাতা, দাতা সদস্য ও আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৯ সনের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৮১ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকাস্থ নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।
লেখক : আশিক বিন রহিম, সাহিত্য ও সংবাদর্মী, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০