মাহফুজ আনাম, ডেইলি স্টার সম্পাদক। তার আরেকটি পরিচয় তিনি বেশ সজ্জন এবং আত্নসমালোচক ব্যক্তি। তার বাবা আবুল মনসুর আহমেদ ছিলেন পাকিস্তান আমলের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী এবং একই সাথে ভালো সাংবাদিকও ছিলেন। তিনি তার রাজনীতি বিষয়ক অনেক লেখায় নিজের, সেই সময়কার দলের এবং সহকর্মীদের রাজনৈতিক ভুলের সমালোচনা ও আত্নসমালোচনা অকপটে করেছেন। আর সে জন্য দেশের মানুষের কাছে তিনি সমাদৃত আর প্রশংসিতও হয়েছেন।
কিছুদিন আগে ডেইলি স্টারের ২৫ বছর পূর্তিতে একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলে অতীতের একটি বিষয় নিয়ে সরল মনে নিজের ভুল এবং দায় স্বীকার করেছেন পত্রিকাটির সম্পাদক মাহফুজ আনাম। সেখানে যারা ওই ভুলটি করেননি তাদেরকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আর নিজের আত্নসমালোচনা করেছেন।
মানুষ ভুল করে, মানুষ ভুল করবে- এটাই তো জগতের নিয়ম। কিন্তু সে-ই তো প্রকৃত মানুষ যে ভুল থেকে শিক্ষা নেয় আর নিজের ভুলকে স্বীকার করে নেয়। আমাদের দেশের চলমান সংস্কৃতি যদিও এর বিপরীত। এখানে ভুল হলে, দোষ হলে কেউ স্বীকার করেন না। বছরের পর বছর ধরে সামাজিকভাবে স্বীকৃত ভুলকেও এই দেশে অনেক ব্যক্তি ও গোষ্ঠী মনের ভুলেও ভুল বলে স্বীকার করে না। এরকম অসংখ্য উদাহরণ বর্তমান আর অতীত থেকে দেয়া যাবে।
সেখানে মাহফুজ আনাম একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলতে হবে। তিনি ভুল করেছেন (যদিও সেই ভুল ওই সময় আরো অনেকে করেছেন) আর সেই ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি কিন্তু চাইলে বলতে পারতেন, আমি সেটা করেনি। বলতে পারতেন- আমাকে চাপ দিয়ে এটা করানো হয়েছে। যদি কোনভাবেই যুক্তি-তর্কে না পারতেন, তবে এক কথায় বলে দিতে পারতেন অনেক দিন আগের বিষয় তো তাই আমার বিষয়টা পরিষ্কার মনে নেই।
কিন্তু তিনি তা করেননি। বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন এবং অকপটে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। মাহফুজ আনাম যেটি করেছেন, সেটি আমাদের সবার করা উচিত। কারণ সমাজের সকল স্তর থেকে এই উপলব্ধি আসলে, ভুল স্বীকারের সংস্কৃতি তৈরি হলে, আমরা ধীরে ধীরে একটি পরিশুদ্ধ সমাজ পাব, দেশ পাব। ফলে সময়ের সাথে ভুলের পরিমাণ যেমন কমবে, তেমনি নির্ভুল কাজের জন্য সবার চেষ্টা থাকবে।
পশ্চিমা সংস্কৃতিতে ভুল স্বীকারের বিষয়টি ডাল-ভাত। সেখানে ভুল করে স্বীকার করলে বাহবা পাওয়া যায়, না করলে তিরস্কার। অথচ মাহফুজ আনামের বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে তার সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, এর ফলে সবার কাছে একটি ভুল বার্তা যাচ্ছে।
বার্তাটি হচ্ছে, ‘ভুল করো কিন্তু স্বীকার করো না’। বার্তাটিকে আমলে নিয়ে যদি আমাদের সমাজ এই পথেই চলতে শুরু করে তাহলে আমাদের ভবিষ্যত কোথায় যাবে? তাহলে আমরা কি নিজেদের ভুলে আগামীর বাংলাদেশে একটি মিথ্যুক আর কপট জাতি তৈরি করতে চলেছি।
লেখক: মহিউদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক।
|| আপডেট: ০৮:১৩ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, বৃহস্পতিবার
এমআরআর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur