জাতীয়

মাসের শেষ দিনে ২৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

পুরো নভেম্বর মাসেই বিভিন্ন মামলায় সরগরম ছিল আদালতপাড়া। রাজন হত্যা মামলায় ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড, একই দিনে রাকিব হত্যা মামলায় দু’জনের মৃত্যুদণ্ড দেশে-বিদেশে আলোচিত হয়। এর কিছুদিন পর বাবা-মাকে হত্যার দায়ে ঐশীর ‘ডাবল’ মৃত্যুদণ্ডও বেশ আলোড়ন ছড়ায়। এছাড়া একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরও হয় এ মাসে। এ মাসের শেষদিনে এ সব ঘটনাকে ছাপিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।

এদিন ভিন্ন ৬টি মামলায় মোট ২৪ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছে। এরমধ্যে শিশুহত্যা তিন মামলায় ৯ জনের, যুবলীগ নেতা হত্যায় ১১ জনের ও একজন অটোরিকশা চালককে হত্যার দায়ে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।

বিডিআর বিদ্রোহের মামলার রায়ের পর এটাই বাংলাদেশে একদিনে এতো বেশি সংখ্যক মানুষের মানুষের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো। ২০১৩ সালের নভেম্বরে ঘোষিত ওই রায়ে ১৫২ জনের ফাঁসি, এবং ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

এসবের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত মামলাটি ছিল সিলেটের শিশু সাঈদ হত্যাকাণ্ড। নির্মমভাবে খুন হওয়া সিলেটের শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার রায়ের ২২ দিন পর স্কুল ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।

দেশের আইন-আদালত ও বিচারের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে এ হত্যা মামলাটির রায়। মাত্র আট কার্যদিবসেই শেষ হয়েছে মামলার বিচারকার্য। আজ নবম কার্যদিবসে এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে আদালতের বিচারক আব্দুর রশিদ সাঈদ হত্যায় সিলেটের বিমানবন্দর থানার সাবেক কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুল, সিলেট জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাকিব, পুলিশের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদার ফাঁসির আদেশ দেন।

এছাড়াও ওই মামলার আরেক আসামি ওলামা লীগ নেতা মাহিব হোসেন মাসুমকে খালাস প্রদান করেন। গত ১১ মার্চ নগরীর শাহ মীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আবু সাঈদ (৯) অপহৃত হয়। অপহরণের তিনদিন পর ১৪ মার্চ নগরীর ঝর্ণারপাড় সোনাতলা এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুলের বাসার ছাদের চিলেকোটা থেকে আবু সাঈদের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

২০০৩ সালের ১৭ আগস্ট বিকেলে কাপাসিয়া উপজেলার পাবুর গ্রামের বলখেলা বাজারের পাশে কতিপয় দুর্বৃত্ত যুবলীগ নেতা জালাল উদ্দিনের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে জখম করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ মামলার রায়েও মোট ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় স্কুলছাত্র রাকিবুল হাসান ইমন (১৩) হত্যা মামলায় ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বন্দরের কামতাল মালিভিটা গ্রামের সাইফুর রহমান ওরফে সাইফুল (২৩), তোফাজ্জল হোসেন (২২), জামাল হোসেন (২২) ও শাহজাহান ওরফে জীবন (২১)। এ মামলায় সাইদুর ও তোফাজ্জল পলাতক রয়েছেন। নিহত ইমন বন্দরের কামতাল মালিভিটা এলাকার প্রবাসী নূরু মিয়ার ছেলে। সে সোনারগাঁওয়ের এইচজিজি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়তো। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ পেতে ইমনকে অপহরণ করা হয়। টাকা না পেয়ে ওই দিন রাতেই ইমনকে হত্যার পর বন্দর মদনপুর মালিবাগে একটি মুরগির খামারের গর্তে পুঁতে রাখা হয়।

একইদিনে নারায়ণগঞ্জে আরো একটি মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ডেমরা সুকুসী এলাকা থেকে প্রেমিক দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী সোনিয়া আক্তার সাজেদা ২০০৮ সালের ২৯ আগস্ট সকালে বেড়াতে বের হয়। পরে তারা নারায়ণগঞ্জ শহরের ১ নং রেলগেটস্থ দাদা আবাসিক হোটেলে উঠেন। সেখানে ধর্ষণ শেষে সোনিয়া আক্তার সাজেদাকে হত্যা করে দেলোয়ার পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা সাবিনা ইয়াসমিন ময়না বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে চট্টগ্রামের আদালতেও। ২০০৮ সালের ৩ মে নগরীর বহদ্দারহাট থেকে আনোয়ারার মোহছেন আউলিয়ার মাজারে যাওয়ার জন্য ইউসুফের অটোরিকশা ভাড়া করেন আসামিরা। তবে তারা সেখানে না গিয়ে বোয়ালখালীর পশ্চিম গোমদণ্ডী এলাকায় তার সিএনজি অটোরিকশাটি ছিনতাই করে তাকে গলা কেটে হত্যা করে লাশ ফেলে চলে যায়। এরপর সিএনজি অটোরিকশাটি সাতকানিয়া থেকে উদ্ধার করে মালিক। লাশ উদ্ধারের পর নিহতের খালাতো ভাই হাশেম বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করলে মামলার বিচারকার্যে ২৭ জন সাক্ষির মধে ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্য চার জনকে ফাঁসি ও দু’জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।

কুষ্টিয়ায় দৌলতপুরে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী লাইলী খাতুনকে হত্যার দায়ে স্বামী রোকন মণ্ডলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত রোকন দৌলতপুর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের হুলি মণ্ডলের ছেলে পেশায় একজন ভ্যান চালক ছিলেন। মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৬ আগস্ট রাতে রোকন জুয়া খেলে হেরে যান। পরে বাড়িতে ফিরে স্ত্রী লাইলী খাতুনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এরই জেরে লাইলীকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ড্রেনে ফেলে দেয় রোকন। দু’দিন পরে ওই ড্রেন থেকে তার গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিউজ ডেস্ক ।। ০৬:১০ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০১৫, সোমবার

ডিএইচ

Share