Saturday, April 11, 2015 01:09:42 AM
চাঁদপুর টাইমস ডট কম :
নানা বর্ণ, ধর্ম আর সংস্কৃতির মানুষের দেশ মালয়েশিয়া। মিনি এশিয়াও বলেন অনেকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রে দেশটির অবস্থান। প্রধানত দু’টি খন্ডে বিভক্ত দেশটি; পশ্চিম মালয়েশিয়া এবং পূর্ব মালয়েশিয়া। প্রায় ৪০ মাইল বিস্তৃত সমুদ্র আলাদা করে রেখেছে দেশটির দুই অংশকে। মোট আয়তন ৩,২৯,৭৫৪ বর্গ কিলোমিটার। পূর্ব মালয়েশিয়ায় রয়েছে দু’টি বড় রাজ্য এবং একটি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত এলাকা। আর পশ্চিম মালয়েশিয়ায় রয়েছে ১১ টি রাজ্য এবং একটি কেন্দ্রশাসিত এলাকা।
স্থানীয় সময়: জিএমটি +৮
মুদ্রা: রিঙ্গিত
টেলিফোন ডায়ালিং কোড: +৬০
কান্ট্রি ডোমেইন: .my
বিদ্যুৎ সরবরাহ: ২২০-২৪০ ভোল্ট/৫০ হার্জ
পরিমাপ পদ্ধতি: মেট্টিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
টেলিফোন কল: কয়েন বা প্রিপেইড কার্ডের মাধ্যমে স্থানীয় ও অন্তর্জাতিক কল করা যায়।
আবহাওয়া
সারাবছর ধরেই উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজ করে। আবহাওয়ার বড় ধরনের পরিবর্তন বা প্রাকৃতিক দূর্যোগ খুব একটা হয় না। দিনে তাপমাত্রা থাকে ৩০০ সে. এর মত আর রাতে ২২০ সে. এর মত। হালকা এবং সূতি আটপৌরে পোশাকই সুবিধাজনক এখানে।
খাবার এবং সংস্কৃতি
এশিয়ার খাদ্য স্বর্গ হিসেবে পরিচিত দেশটি। নানা বর্ণ, ধর্ম আর সংস্কৃতির মানুষের অবস্থানের ফলে এখানকার খাবারও বেশ বৈচিত্রময়। মালয়, চাইনীজ এবং ভারতীয় নানা ধরনের খাবার বিভিন্ন রোস্তোরাঁ এবং পথের পাশের স্টলে খুব কম দামে পাওয়া যায়। এছাড়া রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য এবং থাইল্যান্ডের খাবার। নানা সংস্কৃতির মানুষের নানা উৎসবের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যটি ফুটে ওঠে।
আনুষ্ঠানিক ভাষা বাহাসা মালয়েশিয়া। তবে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ নিজ নিজ ভাষায় কথা বলে। দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে স্কুল পর্যায় থেকেই ইংরেজী শেখানো হয়। দৈনন্দিন যোগাযোগ এবং ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ইংরেজীর বহুল ব্যবহার আছে।
দেশটির আনুষ্ঠানিক ধর্ম ইসলাম। তবে সকল ধর্মের মানুষ ধর্মীয় আচার পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভোগ করে।
দেশটিতে সাংঘাতিক অপরাধ সংঘটনের হার বেশ কম।
অর্থনীতি
পাম ওয়েল, রাবার, প্রাকৃতিক গ্যাস, কাঠ, কোকো বীজ, ইত্যাদি দেশটির প্রধান রপ্তানী পণ্য। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক সামগ্রী উৎপাদন ও রপ্তানীর ক্ষেত্রেও শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর কাতারে রয়েছে মালয়েশিয়া।
শিক্ষা
শিক্ষা খাত মালয়েশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হয়ে উঠেছে এখন। মনসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিবেচনায় এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ এখন মালয়েশিয়া। উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন কোর্সের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাগত ও বিশেষায়িত কোর্সের সুযোগ আছে এখানে। কম খরচে মানসম্পন্ন কোর্সের সুযোগ তৈরি হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের পছন্দের গন্তব্য এখন মালয়েশিয়া।
যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মত দেশের বিভিন্ন নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয় এখানে তাদের শাখা খুলেছে। আর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানী, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে একযোগে কোর্স পরিচালনা করছে।
ইংরেজী বহুল প্রচলিত হওয়ায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের বিশেষ অসুবিধা হয় না এখানে। জীবনযাপনের ব্যয় কম, বছরে ৩,৭৫০ ডলারের মত।
১০০ টির বেশি দেশের ৫০ হাজারের মত বিদেশী শিক্ষার্থী এখন মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংখ্যা (সম্ভাব্য বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য):
২০ টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
২৪ টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউ
৩৭ টি পাবলিক কমিউনিটি কলেজ
৩৩ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
৪টি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা
৫০০ টি বেসরকারী কলেজ
৩৮ টি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলীয় ধাঁচের)
মালয়েশীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা: http://en.wikipedia.org/wiki/List_of_universities_in_Malaysia
যোগাযোগ
আকাশপথ, সমুদ্র বা স্থলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিবেচনায় বলা যায় উন্নত দেশগুলোর মতই সুবিধা রয়েছে মালয়েশিয়ায়। উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার বদৌলতে সহজেই যাওয়া যায় বিভিন্ন গন্তব্যে। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে উড়ে আসা বিমান অবতরণ করে মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
কেবলমাত্র বিমানবন্দরের মাধ্যমে বৈধভাবে মালয়েশিয়া প্রবেশ করা যায়। মালয়েশিয়া সরকার প্রধানত দু’ধরনের ভিসা দেয়:
রেফারেন্স ছাড়া ভিসা (Visa Without Reference, VWTR): বিভিন্ন দেশে মালয়েশীয় মিশন থেকে এ ধরনের ভিসা ইস্যু করা হয়।
রেফারেন্স সহকারে দেয়া ভিসা (Visa with reference, VWR): মালয়েশীয় ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের অনুমোদনের মাধ্যমে ভিসা ইস্যু করা হয়।
কিছু বিশেষ তথ্য
মালয়েশিয়া প্রবেশের আগেই মালয়েশিয়া কনস্যুলেট বা দূতাবাস থেকে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে।
কেবলমাত্র বিমানবন্দরের মাধ্যমে মালয়েশিয়া প্রবেশ করা যায়।
মালয়েশীয় ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের মহাপরিচালক বা উপ মহাপরিচালকের অনুমোদন ছাড়া সোস্যাল বা বিজনেস কার্ডের মেয়াদ বাড়ানো যায় না।
রেফারেন্স ছাড়া ভিসার শর্ত
রেফারেন্স ছাড়া ইস্যু করা ভিসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৪ দিন অবস্থানের অনুমতি দেয়া হয়, মেয়াদ বৃদ্ধির কোন সুযোগ নেই। আর ট্রানজিট ভিসার মেয়াদ অনেক কম থাকে।
যিনি মালয়েশিয়া ভ্রমণে যাচ্ছেন তিনি কোন দেশ থেকে যাচ্ছেন বা তিনি যে দেশে বসবাস করেন সে দশে ফেরার বিমান টিকেট থাকতে হবে। অবশ্য যদি মালয়েশিয়া ভ্রমণের পর অন্য দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে তবে সে দেশে যাওয়ার বিমান টিকেট দেখালেই হবে।
রেফারেন্সসহ ভিসার শর্ত
কেবলমাত্র ব্যবসা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে এই ভিসা ইস্যু করা হয়।
ভ্রমণটি মালয়োশীয় কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্পন্সর করতে হবে। যে প্রতিষ্ঠান স্পন্সর করবে সেটিকে অবশ্যই একটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান হতে হবে এবং ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টে ফর্ম ৯, ২৪ এবং ৪৯ জমা দিতে হবে।
স্পন্সরকে জনপ্রতি দুই হাজার মালয়েশীয় রিঙ্গিত জামানত হিসেবে জমা দিতে হবে।
ভ্রমণকারী সর্বোচ্চ ৩০ দিন অবস্থান করতে পারবেন এবং মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ নেই।
মালয়েশিয়ায় ভিসা আবেদনের জন্য যেসব কাগজপত্র লাগবে
ভিসা আবেদন ফরমটি www.imi.gov.my সাইট থেকে ডাউনলোড করে নিয়ে যথাযথভাবে পূরণ করে জমা দিতে হবে। সরাসরি ভিসা আবেদন গ্রহণ করা হয় না। ২৫টি অনুমোদিত এজেন্সীর মাধ্যমে ভিসা আবেদনপত্রটি জমা দিতে হবে। আর ভিসা ইস্যু করার বিষয়টি দূতাবাসের ওপর নির্ভরশীল।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি:
সাদা পটভূমিতে (ব্যাকগ্রাউন্ড) দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি; ছবিগুলোর স্টুডিও প্রিন্ট হতে হবে।
পাসপোর্টের মেয়াদ অন্তত ৬ মাস হতে হবে এবং পাসপোর্টে অন্তত তিনটি ধারাবাহিক খালি পৃষ্ঠা থাকতে হবে।
পাসপোর্টের ফটোকপি ও মূলকপি।
আগে মালয়েশিয়া ভ্রমণ করে থাকলে ভিসার কপি।
ফিরতি বিমান টিকেটের কপি।
আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ হিসেবে অন্তত তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সাথে ব্যাংক সলভেন্সি স্টেটমেন্ট। বাংলাদেশর বাইরে অবস্থানরতদের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড।
ভ্রমণের কারণ উল্লেখ করে করা আদেনপত্র।
কারো আমন্ত্রণে মালয়েশিয়া গেলে আমন্ত্রণপত্র বা রেফারেন্স লেটার।
বাংলাদেশে বসবাস করছেন অথচ বাংলাদেশী নন এমন আবেদনকারীর ক্ষেত্রে চাকরি এবং বাংলাদেশে থাকর অনুমতিপত্র দেখাতে হয়।
ভিসা ফি:
বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রে ৩,১০০ টাকা,
চীনা পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রে ৩,৩০০ টাকা,
ভারতীয় পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রে ৩,৮০০ টাকা,
অন্যান্য দেশের পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রে, ৩,১০০ টাকা।
অন্যান্য:
ভিসা আবেদন সকাল ৮:৪৫ থেকে ১০:৩০ এই সময়ের মধ্যে জমা দিতে হয়।
ভিসা ডেলিভারীর সময় দুপুর ৩ টা থেকে বিকাল ৫ টা।
ভিসা আবেদনের পর ভিসা পেতে ১০ দিনের মত সময় লাগে।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/2015
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur