প্রবাস

পাখি ঢুকে বিমান বিকল : মালয়েশিয়ায় বিপাকে ৫৯ বাংলাদেশি

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলরত ১২টি উড়োজাহাজের মধ্যে তিনটি বিকল হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে একটিতে পাখি ডুকে ইঞ্জিনের ব্লেড নষ্ট হয়ে গেছে। হঠাৎ তিনটি উড়োজাহাজ বহরে না থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দেশে ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা হাজার হাজার যাত্রী। এর মধ্যে রয়েছেন ৫৯ বাংলাদেশি

তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার ও মুখপাত্র শাকিল মেরাজ গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে যাত্রীদের যাতে বিমানবন্দরে গিয়ে হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার না হতে হয় সেজন্য আগেভাগেই মোবাইল ম্যাসেজে ‘প্লানড ডিলে’ উল্লেখ করে প্রত্যেক যাত্রীকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।

এ দিকে বিমানের শিডিউলিং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিমানের একাধিক বিমান গ্রাউন্ডেড ও মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি রুটে হঠাৎ যাত্রী কমে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ শিডিউলিংয়েও কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটে প্রতিদিন দিনে ও রাতে দু’টি ফ্লাইট চলাচল করলেও ১ মার্চ থেকে শুধু রাতে একটি ফ্লাইট চলছে। যে কারণে মালয়েশিয়া রুটে পুরো মার্চজুড়েই দিনের চলাচল করা ফ্লাইট বন্ধ থাকছে।
বিমানের বলাকা ভবন সূত্রে জানা গেছে, মিসর থেকে লিজে আনা ৩১৯ আসনের বোয়িং (৭৭৭-২০০- আলফা হোটেল লিমা) কয়েক মাস ধরেই বিকল হয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হ্যাংগারে পড়ে আছে।

এই উড়োজাহাজের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেছে। ইঞ্জিন পরিবর্তন না করা পর্যন্ত এটি আকাশে উড়ার সম্ভাবনা নেই। এতে পাঁচ বছরের লিজে আনা বিমানটির দায়-দেনা শুধু দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিমান বহরে থাকা অপর উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৩৭-৮০০ (এএফএল) সি চেকের জন্য সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় গেছে।

এক মাস পর ওই বিমানটি বহরে যোগ হবে। এই এয়ারক্রাফট দিয়ে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর রুটে নিয়মিত চলাচল করছিল। এ ছাড়া গত সপ্তাহে সৌদি আরবের দাম্মামে অবতরণের সময় বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজটি বার্ড হিটের শিকার হয়। যে কারণে শিডিউলে থাকা এ বিমানটি দাম্মাম এয়ারপোর্টেই গতকাল শনিবার পর্যন্ত পড়ে ছিল।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এনামুল বারি আবুধাবি যাওয়ার সময় নিজেই বিমানবন্দরে শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। পরে ৪ ঘণ্টা বিলম্বে ওই ফ্লাইটটি বিমানবন্দর ত্যাগ করে।

এর আগে সকাল সোয়া ৬টার দিকে দোহা-ঢাকা ফ্লাইটটিও কর্তৃপক্ষ বাতিল করে দেয়। আগের দিন অর্থাৎ বুধবার দাম্মাম ফ্লাইট কয়েক দফা পেছানোর পর শেষ পর্যন্ত বাতিলের সিদ্ধান্ত যাত্রীদের জানায়। একইভাবে ঢাকা-কুয়েত, কুয়েত-ঢাকা, ঢাকা-রিয়াদ, রিয়াদ-ঢাকা ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারেনি।

সূত্র মোতাবেক বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে একটি ফ্লাইটের যাত্রীদের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বেলা পৌনে ২টার দিকে জানানো হয়, বেলা ৩টায় গন্তব্যের উদ্দেশ্য ছেড়ে যাবে।

এরপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের বসিয়ে ওই ফ্লাইটটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ছেড়ে যাবে বলে জানানো হয়। এ কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে পড়েন যাত্রীরা। তারা বিমানবন্দরে হইচই শুরু করেন। পরে তাদের শান্ত করা হয়। এর আগের দিন বুধবারের কুয়েত ফ্লাইটটি নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় বলে ভুক্তভোগী যাত্রীরা বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করেন।

শনিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) ও বিমানের মুখপাত্র শাকিল মেরাজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গত পরশু দিন বিমানের শিডিউলে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। এটা সত্য কথা। কারণ হচ্ছে দাম্মামে একটি ফ্লাইট গিয়েছিল। সেই ফ্লাইটের ইঞ্জিনে পাখি ঢুকে পড়েছিল। ফ্লাইটটা ডাউন থেকে এখনো আসতে পারেনি। বার্ড হিটের কারণে ইঞ্জিনের ব্লেড ভেঙে যায়। অপর এয়ারক্রাফট মিসর থেকে ভাড়া করে আনা হয়। সেটির ইঞ্জিনের অবস্থা খুবই খারাপ। সেটি হ্যাংগারে বসে আছে। আরেকটি এয়ারক্রাফট মেইনটেন্সের (ডি চেক) জন্য ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় গেছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের বহরে মোট দু’টি ড্যাশ-৮-কিউ ৪০০সহ ১২টি এয়ারক্রাফট রয়েছে। এর মধ্যে যদি তিনটি বহরে না থাকে তাহলে অবস্থাটা কী দাঁড়ায়?

তিনি বলেন, আমি আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের এসব সমস্যা আর থাকবে না।

মালয়েশিয়া রুটে বিমানের ফ্লাইট কমানো প্রসঙ্গে বিমানের মুখপাত্র শাকিল মেরাজ বলেন, আসলে মালয়েশিয়ার বাজার এখন প্রতিযোগিতামূলক। কিন্তু এই মুহূর্তে যাত্রী কমে যাওয়ার কারণে প্রতিদিন একটি করে ফ্লাইট চালানো হচ্ছে। ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় যাত্রী হাউজফুল থাকছে। কিন্তু আসার সময় যাত্রী কম আসছে।

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০২: ০০ এএম, ০৫ মার্চ ২০১৭, রোববার
ডিএইচ

Share