মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করেছেন তিনি। শনিবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ২৭০ ইলেক্টরালের লক্ষ্যমাত্রা পার হয়ে ২৮৪টি ইলেক্টরাল কলেজ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন। পেনসেলভেনিয়ার পপুলার ভোটে জয় পাওয়ায় সেখানকার ২০টি ইলেক্টরাল বাইডেনের পক্ষে যায়। ফলে জয়ের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি থাকা বাইডেন এক লাফেই পার হয়ে যান ২৭০ এর কোটা। সূত্র: বিবিসি, সিএনএন
জো বাইডেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের স্ক্রানটনে। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় বাইডেন বেড়ে ওঠেন স্ক্রানটন, নিউ ক্যাসল কাউন্টি ও ডেলাওয়ারের মধ্যেই। বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র আর আইরিশ বংশোদ্ভূত মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান। ডেলাওয়ার ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন বাইডেন। পরে তিনি আইনে ডিগ্রি নেন। ১৯৬৬ সালে সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বাইডেন নিলিয়া হান্টারকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান আছে ।
১৯৭২ সালে বড় দিনের আগে ক্রিসমাস ট্রি কিনতে গিয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিলিয়া মারা যায়। তার মেয়ে নাওমিও দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর ভেঙে পড়েছিলেন বাইডেন। কিভাবে কি করবেন জানতেন না তিনি। তবে ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। একজন যোদ্ধা তো এমনই হয়। জীবন যুদ্ধেও সে কখনও হারে না।
বাইডেনের স্বপ্ন ছিল সিনেটর হওয়ার। সিনেটর হওয়ার পরের লক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া। তিনি তার লক্ষে অবিচল ছিলেন। নিলিয়াকে হারানোর এক বছরের মাথায় ১৯৭৩ সালে বাইডেন জিল ট্রেসি জ্যাকবকে বিয়ে করেন। তাদের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। ১৯৭০ সালে ডেলাওয়ারের নিউ ক্যাসল কাউন্টির কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন জো বাইডেন।
৩০ বছর বয়সের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় তার। ১৯৭২ সালের নভেম্বরে তৎকালীন জনপ্রিয় রিপাবলিকান সিনেটর স্যালেব বগসের বিপক্ষে ডেমোক্রেটিক দল থেকে প্রার্থী হন তিনি। মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী পঞ্চম সিনেটর নির্বাচিত হন। একবার ইতিহাস তৈরি করেছিলেন সে সময় জো বাইডেন।
ডেলাওয়ার থেকে মোট ছয়বার সিনেটর নির্বাচিত হন জো বাইডেন। সিনেটের বিচার কমিটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা আইনসহ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি আইন প্রণয়ন করেন তিনি। ২০০৭ সালে আবার নির্বাচনে দাঁড়ান। ওই বছর বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হন এবং রানিংমেট হিসেবে বেছে নেন বাইডেনকে। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে আবারও প্রিয়জন হারান বাইডেন।
মস্তিষ্কের ক্যানসারে বড় ছেলে বো বাইডেনের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন জো। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার আগেই সরে যান। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে নানা উত্থান-পতনের পর ঘুরে দাঁড়ান জো বাইডেন। আর আজ তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। বাইডেনের জীবন বলে দেয় তিনি জিততে এসেছেন। জয় তার জন্যই অপেক্ষা করছিল। আমেরিকার মসনদের তাজ তাঁর মাথায়। এ যে তার কাছে শুধু নয় গোটা আমেরিকাবাসীর কাছে গর্বের। নতুন ইতিহাসের সাক্ষী থাকল পৃথিবী। বাইডেন হেরে না যাওয়া যোদ্ধা। এই কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার যোগ্য সৈনিক তিনি।
বার্তা কক্ষ,৯ নভেম্বর ২০২০