নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একটি হোটেলে অবরুদ্ধ হয়েছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। তাঁর সংগে একজন নারী রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে ওই নারীকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেছেন মামুনুল। শনিবার ৩ এপ্রিল বিকেলে এই ঘটনা ঘটে। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেখানেই আছেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রয়েল হোটেল নামে একটি হোটেলের ৫০১ নম্বর কক্ষে ওই নারীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় প্রশাসন। এসময় নারীর পরিচয় জানতে চান তাঁরা। মুমুনুল হক তাঁদের জানান, তিনি তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। এসময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিয়ের প্রমাণ চাওয়া হয়।
পুলিশ বলছে, মামুনুলের একজন নারীসহ এখানে অবস্থানের খবর পেয়ে স্থানীয় কিছু লোকজন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর কক্ষটি ঘেরাও করেন। আর মামুনুল হক বলছেন, দ্বিতীয় স্ত্রীসহ অবকাশযাপনে গেলে কিছু লোক তাঁকে নাজেহাল করে।
সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তবিদুর রহমান সন্ধ্যায় বলেন, এখানে মামুনুল হক একজন নারীকে নিয়ে উঠেছেন, এই খবর পেয়ে এলাকার লোকজন ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের কিছু নেতা-কর্মী তাঁর কক্ষটি ঘিরে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশও আসে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এখানে রয়েছেন। পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এসেছেন।
এদিকে মামুনুলকে ঘেরাওয়ের খবরে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ‘রয়েল রিসোর্ট’ নামে ওই অবকাশ যাপনকেন্দ্রটিতে যান। সেখানে মামুনুল সংবাদকর্মীদের বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে অবকাশ যাপনে তিনি ওই রিসোর্টে যান। সেখানে তাঁকে হেনস্তা করা হয়েছে।
মামুনুল বলেন, ‘মাস্তান প্রকৃতির লোকেরা এসে আমাকে আমার ওয়াইফসহ নাজেহাল করেছে। আমাকে আক্রমণ করেছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শনিবার দুপুরে স্ত্রীকে নিয়ে সোনারগাঁয়ে যাই। জাদুঘর ঘুরে দেখে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এখানে (রিসোর্টে) আসি।’
মামুনুল বলেন, ‘আমার বক্তব্য পরিষ্কার, আমরা এখানে একটু রিফ্রেশমেন্টের জন্য এসেছিলাম।…এখানে অনেক উচ্ছৃঙ্খল লোক এসেছে। আপনারা দেখেছেন। আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
স্থানীয় আলেমদের কাউকে জানিয়ে তিনি এখানে এসেছেন কি না, জানতে চাইলে মামুনুল বলেন, ‘না, আমি জানাইনি। যেখানে যাই মানুষজন ভিড় করে। এ জন্য আমি একটু আলাদা করে এসেছিলাম।’
ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন লোক মামুনুল হককে জেরা করছেন। তাঁরা ওই নারীর পরিচয় জানতে চাইলে মামুনুল হকের দাবি করেন, সঙ্গে থাকা নারী নাম আমিনা তৈয়বা। তিনি তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। আমিনাকে সঙ্গে নিয়ে রিসোর্টে ঘুরতে গিয়েছিলেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানাধীন রয়েল রিসোর্টের একটি কক্ষে এক নারীসহ অবস্থান করছেন- এমন খবরে স্থানীয় লোকজন রিসোর্ট ঘেরাও করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। মামুনুল হক পুলিশকে জানিয়েছেন সঙ্গে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। পরে পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিয়ে সেখান থেকে উদ্ধার করেছে।
ঘটনাস্থলে স্থানীয় সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন এমপি উপস্থিত হন।
এদিকে সর্বশেষ খবরে জানা যায় শনিবার সন্ধ্যার পর মামুনুল হক অবরুদ্ধ থাকার সংবাদ শুনে কয়েকশ মানুষ রিসোর্টটির সামনে এসে জড়ো হয়। এ সময় তারা স্লোগান দিয়ে ভাঙচুর শুরু করে। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
ঢাকা ব্যুরো চীফ, ৩ এপ্রিল ২০২১