মামলা নিষ্পত্তিতে এনবিআরের ৫শ’ কোটি টাকা আয়

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে সদ্যবিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬৬টি মামলা নিষ্পত্তি করে ৫শ’ কোটি টাকার ও বেশি রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

গত অর্থবছরে এডিআর’র মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির জন্য ১৫০টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে এনবিআর ও করদাতা এই দু’পক্ষের সম্মতিতে ৬৬টি মামলা নিস্পত্তি হয়। নিষ্পত্তি হওয়া মামলা থেকে এই রাজস্ব আয় এসেছে।

এডিআর হচ্ছে আদালতের বাইরে গিয়ে এনবিআর ও করদাতাদের মধ্যে বিদ্যমান মামলা নিষ্পত্তির একটি পদ্ধতি। স্বল্প সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার কারণে এডিআর জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এতে সরকারও লাভবান হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে এডিআর’র ফ্যাসিলিটেটর সৈয়দ আমিনুল করিম বাসসকে বলেন, আদালতের বাইরে গিয়ে দীর্ঘদিনের মামলা নিষ্পত্তি করার সুযোগ পাচ্ছেন করদাতারা। অভিযোগ দাখিলের মাত্র ২ মাসে উভয়পক্ষের সম্মতিতে মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। এতে উভয়পক্ষের আদালতে মামলা পরিচালনার খরচ যেমন বেঁচে যায়, তেমনি সরকারেরও রাজস্ব আয় হচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০১২ সালে যখন এডিআর চালু হয়, সেবছর ৩৯১ কোটি টাকার রাজস্ব সংক্রান্ত মামলার অভিযোগ জমা পড়ে। অথচ গত অর্থবছরে সেখানে ৩ হাজার ৯৪ কোটি টাকার রাজস্ব মামলার আবেদন জমা হয়। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি টাকার মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। এতে এনবিআর’র ৫শ’ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আয় হয়েছে বলে তিনি জানান।

এডিআর পদ্ধতিতে একজন নিরপেক্ষ ফ্যাসিলেটেটর (মধ্যস্থতাকারী) দু’পক্ষের সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে রায় দেন। উভয় পক্ষ এ রায় মানলে বিরোধটি নিষ্পত্তি হয়।

আর কোনো এক পক্ষের আপত্তি থাকলে তিনি চাইলে বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। এ পদ্ধতির সুফল হচ্ছে স্বল্প সময়ে মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি। কিন্তু আদালতের মাধ্যমে কোনো মামলা নিষ্পত্তি করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়।

বর্তমান সরকার গঠিত এডিআরে মোট ৪ জন ফ্যাসিলেটেটর আছেন। তারা এনবিআর ও করদাতা এই দু’পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করে মামলা নিষ্পত্তি করেন।

এডিআর সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৭৯১ কোটি টাকার ১৪৯টি মামলা দাখিল হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৮৩ কোটি টাকার ১৬৭টি মামলা। এরপরের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ হাজার ৬২৮ কোটি টাকার ১৪৫টি মামলা দাখিল হয়।

সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ হাজার ৯৪ কোটি টাকার রাজস্ব সংক্রান্ত ১৫০টি মামলা এডিআরে দাখিল হয়। এর মধ্যে ৬৬টি মামলা পূর্ণাঙ্গভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে। আরো ১২টি মামলার আংশিক নিষ্পত্তি হয়।

এডিআর চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দাখিল হওয়া ৬১১টি মামলার মধ্যে ৩৩৭টি মামলার পূর্ণ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া আরো ১১৪টি মামলার আংশিক নিষ্পত্তি করা গেছে।

এনবিআরে দীর্ঘদিন আয়কর বিভাগের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন সৈয়দ আমিনুল করিম। দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাবেক এই রাজস্ব কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘসূত্রিতা থেকে বেরিয়ে আসতে করদাতাদের এডিআরের সুযোগ নেওয়া উচিত। এতে যেমন দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হবে, তেমনি করদাতা ন্যয্যা কর দেওয়ার সুযোগ পাবেন। করদাতারা হয়রানি ছাড়াই এখানে ন্যয্যা বিচার পাবেন।

তিনি বলেন, এডিআর’র মাধ্যমে একজন করদাতা যেমন ন্যয্যা কর দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, তেমনি এনবিআরেরও রাজস্ব আদায় হচ্ছে। পাশাপাশি এনবিআরের মামলাজট কমে যাচ্ছে।

বর্তমানে এনবিআরে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকার ৩০ হাজার মামলা চলমান রয়েছে।

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২:৩০ এএম, ১৯ জুলাই ২০১৬, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Share